ইনসাইড টক

অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেলদের পদত্যাগে স্বাধীনতা বিরোধীরা পুলকিত

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 12/10/2020


Thumbnail

নতুন অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগের তিনদিনের মাথায় ও তার প্রথম কার্য দিবসে দুই অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেলের পদত্যাগের ঘটনায় আইনাঙ্গনে আলোচনার সৃষ্টি করেছে। আইনাঙ্গনের সাম্প্রতিক ঘটনাবলী নিয়ে বাংলা ইনসাইডারের সঙ্গে কথা বলেছেন সাবেক ডেপুটি অ্যার্টনী জেনারেল অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ মোতাহার হোসেন সাজু। পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বাংলা ইনসাইডারের নিজস্ব প্রতিবেদক মির্জা মাহমুদ আহমেদ।

বাংলা ইনসাইডার: দুইজন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল গতকাল পদত্যাগ করেছেন। অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসে এই অস্থিরতার কারণ কী?

মোহাম্মদ মোতাহার হোসেন: যে দুইজন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল গতকাল পদত্যাগ করেছেন; সরকার যে সময়ই তাদের নিয়োগ দিয়ে থাকুক না কেন পদোন্নতি দেয়া না দেয়া সরকারের ব্যাপার।
আমি ২০০৯ সালের দিকে অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসে যুক্ত হয়ে ছিলাম। তখন মুরাদ রেজা সাহেব নিয়োগ পান। পরবর্তীতে একবছর পরে ২০১০ সালে মোমতাজ উদ্দিন ফকির সাহেব নিয়োগ পান।
সরকার যখন কাউকে নিয়োগ দেন তখন তার ওপর আস্থা এবং বিশ্বাসের ওপর ভরসা করেই তাকে নিয়োগ দেন। নিয়োগ দেয়ার কারণে তিনি দীর্ঘ ১১ বছর ধরে সেবা দিতে পেরেছেন। সরকার যেমন আস্থা এবং বিশ্বাসের ওপর ভরসা করে তাকে নিয়োগ দিয়েছেন তেমনি উনারও সরকারের প্রতি সমান আস্থা এবং বিশ্বাস থাকতে হবে। এটা পারস্পারিক আস্থা ও বিশ্বাসের ব্যাপার।

দীর্ঘদিন সেবা দেয়ার পর; অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগ হওয়ার পর হঠাৎ করে পদত্যাগ করা; এটা আমার কাছে অশোভন মনে হয়েছে। সরকারের সাথে পরামর্শ করে তাদের পদত্যাগ করা উচিত ছিলো।
যদিও ব্যাক্তিগত কারণ দেখিয়ে তারা পদত্যাগ করেছেন; দীর্ঘদিন ধরে সরকারের প্রতি যে তাদের আনুগত্য, সরকারের প্রতি যে তাদের অসাধারণ সেবা সেটা অবশ্যই মনে রাখার মতো।
তিনজনের মধ্যে হঠাৎ করে দুইজন একসঙ্গে পদত্যাগ করে সরকারকে বিব্রত করা তাদের ঠিক হয়নি।
সাম্প্রতিক সময়ে তৃতীয় একজনকে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তার আগে তারা দুইজন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দীর্ঘ সময় দায়িত্ব পালন করেছেন।

হুট করে সরকারকে না জানিয়ে ব্যাক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করা এটা আমার কাছে অশোভন মনে হয়েছে। তাদের উচিত ছিলো সরকারের সাথে যোগাযোগ করে; সরকারকে সময় দিয়ে তারপর পদত্যাগ করা।
ব্যাক্তিগত কারণে পদত্যাগ করলেও এর নেপথ্যে অন্য কোন কারণ আছে। অ্যাটর্নি জেনারেল হওয়ার জন্য মুরাদ রেজা সাহেব বহু রকমের চেষ্টা করেছেন। ব্যাক্তিগত উদ্যোগে যত রকমের মেকানিজম কাজে লাগানোর দরকার তার সবই তিনি কাজে লাগিয়েছেন।

দীর্ঘদিন ধরে তিনি অ্যাটর্নি জেনারেল হওয়ার জন্য চেষ্টা করে আসছিলেন। সেটা যখন হতে পারেন নাই তখনই ব্যাক্তিগত ক্ষোভের বশভূত হয়ে তিনি পদত্যাগ করে থাকতে পারেন বলে আমার মনে হয়।
অ্যাটর্নি জেনারেলের অনুপস্থিতিতে তিনি মাঝে মাঝে ভারপ্রাপ্ত অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
যেহেতু মোমতাজ উদ্দিন ফকির সাহেব বর্তমান অ্যাটর্নি জেনারেলের থেকে বয়সের দিক থেকে সিনিয়র সেজন্য ইগো প্রবলেমের কারণে মনে হয় তিনিও পদত্যাগ করেছেন।

দুইজন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল একসাথে পদত্যাগ করায় জনমনে প্রশ্ন সৃষ্টি করেছে। তাদের এই সিদ্ধান্তের কারণে স্বাধীনতা বিরোধীরা খুবই পুলকিত হয়েছে। কারণ মোমতাজ উদ্দিন ফকির সাহেব ক্রিমিনাল মামলা গুলো লড়তেন। জঙ্গী মামলাগুলোতে তিনি অত্যন্ত কঠোরহস্তে সরকারের পক্ষে লড়েছেন। তার এই পদত্যাগের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা বিরোধীদের মনে পুলকিতভাব সৃষ্টি হওয়ার যে সুযোগ তিনি করে দিলেন আমার মতে কাজটি ঠিক হয়নি।  

বাংলা ইনসাইডার: এরকম পরিস্থিতিতে বিচার প্রার্থীরা কোন সমস্যায় পড়বেন কি না?

মোহাম্মদ মোতাহার হোসেন: দুইজন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল একঙ্গে পদত্যাগ করায় সাময়িক একটু সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। আমার বিশ্বাস সরকার দ্রুত এই শূন্যস্থান পূরণ করবে। সবদিক বিবেচনা করেই সরকার নতুন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগ দেবেন। এবং দ্রুতই নিয়োগ দেয়া উচিত। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দেরী হলে স্বাধীনতা বিরোধীরা এর সুবিধা নিতে পারে।

বাংলা ইনসাইডার:  কবে নাগাদ সংকটের সমাধান হবে বলে মনে করেন?

মোহাম্মদ মোতাহার হোসেন: দুইজন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল গতকাল পদত্যাগ করেছেন। তাদের পদত্যাগ পত্রের ফাইল রাষ্ট্রপতি অনুমোদন দিবেন। তারপরে নতুন অতিরিক্তি অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হবে। পদত্যাগ পত্র গৃহীত হয়ে যাওয়ার পর যত দ্রুত নিয়োগ দেয়া হবে ততই ভালো। না হলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ মামলা অউপস্থাপন যোগ্য হিসেবে থেকে যেতে পারে ।    

 

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭