ইনসাইড বাংলাদেশ

আটানব্বইয়ের মতো বন্যার আশঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 13/08/2017


Thumbnail

স্মরণকালের ইতিহাসে দেশে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা হয়েছিল ১৯৯৮ সালে। ওই বন্যায় ডুবেছিল রাজধানীসহ দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। কিছু কিছু এলাকা পানির নিচে তলিয়ে ছিল দীর্ঘ তিন মাসেরও বেশি সময়। এই বন্যাকে ১০০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বলা হয়। ওই বন্যায় দেশের ৫২টি জেলাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তৎকালীন দেশের ১২ কোটি মানুষের তিন কোটিই ছিল বন্যা কবলিত। অন্যান্য ক্ষতির হিসেব বাদ দিলেও কেবল খাদ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ২১৮ লাখ মেট্রিক টন। বন্যায় মারা গিয়েছিল দেড় হাজারের বেশি মানুষ। এবছরও এমন বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

হঠাৎ করেই বৃষ্টির ঘনঘটা। তিনদিন ধরেই টানা বৃষ্টি পড়েছে। দেশের প্রধান নদীগুলোর পানি একসঙ্গে বাড়ছে। পদ্মা-মেঘনা-যমুনা নদীর পানি বেড়ে যাওয়া বন্যার ভয়াবহতার ইঙ্গিত দিচ্ছে। কয়েক দিনের প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে কুশিয়ারা, সুরমা, মনু, খোয়াই ও ধলাই নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃষ্টির কারণে নদীবন্দরগুলোকে এক নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায়, সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ৩৩২ মিলিমিটরি। এর পাশাপাশি, সিলেট ও চট্টগ্রামে জারি করা হয়েছে পাহাড়ধসের সতর্কতা। উপকূলের তুলনায় উত্তরের বিভাগগুলোতে বৃষ্টি হচ্ছে বেশি। এতে বেড়ে যাচ্ছে নদ-নদীর পানি। মধ্য ও উত্তরাঞ্চলের প্রধান নদী ব্রহ্মপুত্র, পদ্মা, যমুনার পানি এখনও বিপদসীমার ওপরে না উঠলেও প্রতি ঘণ্টায়ই বাড়ছে। ইতিমধ্যে সিলেট বিভাগে প্রধান নদীগুলোর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। ধারণা করা হচ্ছে এই বন্যা ৯৮ এর বন্যার মত ভয়াবহ আকার ধারন করতে পারে।

টানা বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে বৃদ্ধি পেয়েছে যমুনা নদীর পানি। ফলে জামালপুরে আবারও বন্যা দেখা দিয়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি বেড়ে বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে বিপদসীমার ৫৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ইসলামপুর উপজেলার উলিয়া, পার্থশী, চিনাডুলী, কুলকান্দি, সাপধরী, চুকাইবাড়ি, নোয়ারপাড়া, দেওয়ানগঞ্জের বাহাদুরাবাদ, চিকাজানী এবং মেলান্দহের মাহমুদপুর ইউনিয়নের অন্তত ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

সিলেটের চার উপজেলায় আবারও পানিতে তলিয়ে গেছে প্রায়, তলিয়ে গেছে নিম্নাঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন জেলার লক্ষাধিক মানুষ। বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সিলেটের গোয়াইনঘাটে উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়ে উপজেলা সদরের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এছাড়া দিনাজপুরে পুনর্ভবা ও আত্রাই নদীর পানিও বিপদসীমা অতিক্রম করে শহরতলীতে প্রবেশ করতে শুরু করেছে। লালমনির হাটে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধের ৬টি পয়েন্ট ভেঙ্গে তলিয়ে গেছে ৮০টি গ্রাম। ১৪৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

তিনদিনের লাগাতার বৃষ্টিতে প্লাবিত হয়েছে ভারতের উত্তরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা। ভারতে তিস্তার পানি বিপদসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ভারতের দৌমহনী থেকে পানি ধেয়ে আসছে বাংলাদেশের দিকে। তিস্তার উজানে ভারতের গজলডোবা বাঁধের সব গেট খুলে দেওয়ায় গত শনিবার বিকেল থেকে দ্রুত বাড়তে শুরু করে তিস্তার পানি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তিস্তা ব্যারাজের সব (৪৪টি) গেট খুলে দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। ৩ দিনের এই অবিরাম বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ওই এলাকার ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তিনদিনের আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে। আবহাওয়ার এমন অবস্থা থাকলে, দেশের বন্যার পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারন করতে পারে।

এই বিষয়ে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. জাফর আহমেদ খান বাংলা ইনসাইডারকে বলেন, যদি তিনটি নদীর পানি একই সঙ্গে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বৃষ্টিপাতও অব্যাহত থাকছে, এমন অবস্থা হলে তো স্বভাবতই বন্যা ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে এটা আগেই ধারণা করা হয়েছিল।

তিনি আরও বলেন, প্রতি ১০ বছর পর পর এমন একটা বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, ৮৮ তে হয়েছিল, এর ৯৮ এ হয়েছিল। এবার এমন বন্যা হতে পারে, তবে হবেই যে তা বলা যাচ্ছে না। আর বন্যার তাৎক্ষনিক মোকাবেলার জন্য সরকার প্রস্তুত আছে এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাও যাথাসম্ভব প্রস্তুত।“

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী টানা প্রবল বর্ষণে গঙ্গা অববাহিকায় নদ-নদীর পানি অনেক বেড়েছে। এই পানি এবং উজানের পাহাড়ি ঢলে বাংলাদেশের এক তৃতীয়াংশ জুলাইয়ের বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। তাদের আশঙ্কা উজানে মেঘনা অববাহিকায় নতুন করে বৃষ্টি হলে পরিস্থিতি খারাপ হবে। দুই অববাহিকার পানি একসাথে বাড়লে ভাটিতে বাংলাদেশে বড় ধরনের বন্যা হবে।

গত জুলাই মাসে দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলা বন্যার ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার আগেই আবারও নতুন করে বন্যা দেখা দেয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে বন্যা দুর্গত এলাকার মানুষেরা। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবেই যে এমনটি ঘটেছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। পাশাপাশি নদীভাঙন তীব্র হচ্ছে। বন্যা কবলিত এলাকায় ফসলের ক্ষতি, কাজের অভাব, রোগ বালাই তীব্র হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে শুধু সরকার নয়, নানা সামাজিক ও ব্যক্তি উদ্যোগ বন্যার্তদের পাশে না দাঁড়ালে বন্যার ভয়াবহতা আরও বাড়বে।

বাংলা ইনসাইডার/আরএ




প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭