নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: 13/10/2020
কয়েক বছর আগে স্নাতকোত্তর শেষ করেন আহসান করিম (ছদ্মনাম)। ছাত্র হিসেবে তেমন খারাপ ছিলেন না। কিন্তু ক্যারিয়ারে হোঁচট খেলেন। দীর্ঘদিন সরকারি চাকরির চেষ্টা করেও কুলিয়ে উঠতে পারেননি। তবুও হাল ছাড়েননি আহসান। কিন্তু শেষ-মেশ বয়সের কাছে হেরে গেলেন। এখন তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে মার্কেটিং এ এন্ট্রি লেভেলে চাকরি করছেন। বেতন কুড়ি হাজারের একটু কম। খরচ বাঁচাতে থাকেন মেসের এক অন্ধকার খুপরিতে। প্রাকৃতিক আলো, বাতাস যা নেওয়ার তা বাইরে থেকেই নেন। কিন্তু তারপরেও মাস শেষে গ্রামে বৃদ্ধ মা-বাবাকে ৭/৮ হাজার টাকা পাঠাতে হিমশিম খেতে হয় আহসানের।
অথচ এই আহসানই এক সময় স্বপ্ন দেখতেন। দেখতেন এই রাজধানীতে জ্যামে আটকে থাকা হাজারো গাড়ির মধ্যে তারও একটা কালো গাড়ি থাকবে। ড্রাইভিং সিটে স্টিয়ারিং থাকবেন তিনি। আর পাশের সিটে থাকবে তার প্রেয়সী। তার প্রেয়সী এমন স্বপ্ন পূরণ হওয়ার প্রত্যাশায়ও ছিলেন দীর্ঘদিন। কিন্তু আহসানই আর পেরে উঠেননি। বিয়ে করে প্রেমিকার দায়িত্ব নেওয়ার মতো যোগ্য মনে করেননি নিজেকে। রাজধানী ঢাকায় এই রকম আহসানের যেন অভাব নেই।
এই বিষয়ে কথা হয়, যৌন অধিকার নিয়ে কাজ করেন এই রকম বেশ কয়েক জনের সাথে। তারা জানান, আর্থিক সক্ষমতার না থাকার কারণে বিয়ে করতে পারছেন না এই রকম তরুণের সংখ্যা দিনকে দিন বাড়ছে। বিশেষ করে রাজধানী কেন্দ্রিক এই সমস্যা যেন আরও প্রকট। অধিকার কর্মীদের একজন জানান, ‘ঢাকার ফুটপাতে আপনি ৫ জনের সাথে ধাক্কা খেলে, কম করে ২ জন এই রকম লোক পাবেন; যারা জীবিকার কারণে জৈবিক চাহিদা মেটাতে পারছে না’। তিনি আরও বলেন, ‘এতে করে সামাজিক অস্থিরতা যেমন বাড়ছে, তেমনি নিষিদ্ধ গল্পও তৈরি হচ্ছে। সমাজ যাই বলুক না কেন? বিজ্ঞান যৌনতাকে মৌলিক চাহিদা হিসেবেই দেখে। আর এই চাহিদার নিবৃত্তি না ঘটাতে পারলে মানুষ একটা শারীরিক ও আচরণগত পরিবর্তনের দিকে যায়’।
আহসান করিমের মতো এই রকম অন্য আরেকজন যুবকের সাথে কথা হয়। শুরুতে এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি তিনি। কিন্তু পরে রাজি হলেন। বয়স ৪০ চল্লিশ পেরিয়ে গেলেও বিয়ে করেননি তিনি। যৌন জীবন কাটছে কি করে? এমন প্রশ্ন করাতে একটু সংকোচ নিয়েই বলেছেন, ‘কোন রকমে কেটে যাচ্ছে ত। পরে অবশ্য মাসে দু’তিনবার পট্টীতে যাওয়ার কথা স্বীকার করলেন’। এর বাইরে অন্য রকম কিছু সম্পর্কও আছে বলে জানান তিনি। পরকীয়া কিনা জানতে চাইলে সম্মতিসূচক জবাব দিয়েছেন।
তবে কম করে আরও ১০ জন যুবকের সাথে কথা হয় এই নিয়ে। এদের অনেকেই উচ্চ শিক্ষিত। তারাও স্বীকার করেন মাঝে মধ্যে পতিতালয়ে যাওয়ার কথা। এদের মধ্যে একজনকেও পাওয়া যায়নি, যারা বারবনিতাদের কাছে যান না। বিয়ে করছেন না কেন? জানতে চাইলে একজন বলেছেন, ‘টাকা কই। যা ইনকাম করি, গ্রামে পাঠিয়ে হাতে কিছুই থাকে না’। অন্যদের মতামতও অনেকটা এই রকম। তখন মধ্যযুগের কবি চণ্ডীদাসের কবিতার একটি লাইনই মাথায় আসল, সই, কেমনে ধরিব হিয়া? আমার বঁধুয়া আন বাড়ি যায়, আমার আঙ্গিনা দিয়া!
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭