ইনসাইড পলিটিক্স

বাংলাদেশের সঙ্গে কি করছে ভারত?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 16/10/2020


Thumbnail

প্রকাশ্যে বাংলাদেশ ভারতের সবচেয়ে নিকটতম বন্ধু। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে এবং বাংলাদেশ সবার আগে । এ ধরনের কথাবার্তা বলা হলেও বাস্তবে তার চিহ্ন দেখা যাচ্ছে না । বরং ভারত বিভিন্ন সময় একের পর এক যে সমস্ত পদক্ষেপগুলো নিচ্ছে সে সমস্ত পদক্ষেপগুলো বাংলাদেশের বিরুদ্ধেই যাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হর্ষবর্ধন শ্রিংলা ঢাকা ঘুরে গেছেন এই অস্বস্তি দূর করার জন্য। এসেছেন নতুন রাষ্ট্রদূত বিক্রম দোরাইস্বমী। তিনি এসেই সেই সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যাবার কথা বলেছেন। তিনি বিভিন্ন মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করছেন, দেখা সাক্ষাৎ করছেন এবং নতুন নতুন সুখবরের আশ্বাস দিচ্ছেন। কিন্তু বাস্তবেই কোন কিছুই দৃশ্যমান নয়।

সাম্প্রতিক সময়ে একটি খবর বাংলাদেশকে চমকে দিয়েছে। বাংলাদেশ মিয়ানমার থেকে আসা ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানোর জন্য কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করেছে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এটা নিয়ে দেনদরবার করছে, সে সময় ভারত বাংলাদেশের পাশে না থেকে বরং মিয়ানমারকে সহায়তা দিয়েছে। গতকাল একটি চমকে দেয়ার খবর প্রকাশিত হয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যমে। তাতে দেখা যাচ্ছে যে, মিয়ানমারকে ভারত নজিরবিহীন সহয়তা দিতে যাচ্ছে। মিয়ানমার নৌবাহিনীকে একটি কিলো ক্লাস সাবমেরিন দেবে ভারত। এটি হবে মিয়ানমারের নৌবাহিনীর প্রথম সাবমেরিন। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তব একথা নিশ্চিত করেছেন। এর মাধ্যমে সুস্পষ্ট হয়ে গেল, ভারত মিয়ানমারের সাথে সুসম্পর্ক রাখতে আগ্রহী এবং মিয়ানমারে যে বর্তমান নিপীড়ন নির্যাতন এ ব্যাপারে তারা আগ্রহী নয়। বাংলাদেশ আশ্রয় নেয়া ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার ব্যাপারে মিয়ানমার যে গড়িমসি করছে সে গড়িমসিতে ভারতও অংশীদার। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত এমনটি করছে কেন? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে অনেকগুলো কারণ খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রথমত, বাংলাদেশের উন্নয়ন: যেদিন মিয়ানমারকে সাবমেরিন দেয়ার ঘোষণা দিলো ভারত সেদিনই আইএমএফ এক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। আইএমএফ বলেছে যে, এবার গড় মাথাপিছু আয়ে ভারতকে ছাড়িয়ে যাবে বাংলাদেশ। এর ফলে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে সফল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের এ উন্নতিতে ভারতের মুখের কথা এবং মনের কথা যে এক নয় তা প্রতিনিয়ত প্রমাণিত হয়। শুধু এখানেই শেষ নয়, বাংলাদেশে করোনার সংকটের নাস্তানাবুদ হয়নি বরং বাংলাদেশ নিজের শক্তিতে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বের যে দেশগুলো অর্থনীতিকে রক্ষা করতে পেরেছে তাদের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এটার জন্য কি ভারতের মন খারাপ? আর এটা নিয়ে কি ভারতের মাথা ব্যাথা? ভারত-বাংলাদেশের পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু তারপরও বাংলাদেশ আগে থেকে প্রস্তুতি থাকার কারণে এই ধাক্কা সামলে নিয়েছে। বাংলাদেশে ভারতের পেঁয়াজ না আসার পরও পেঁয়াজের যে লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি গত বছর হয়েছিল সেটি হয়নি। এজন্য কি ভারতের মন খারাপ?। দেখা যাচ্ছে যে, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত গুলোতে এখনো সীমান্ত হত্যা বন্ধ হয়নি। যদিও ভারতের রাষ্ট্রদূত বিক্রম দোড়াইস্বামী বাংলাদেশে এসে বলেছেন যে, একটি হত্যাও তিনি চান না।

কিন্তু বাস্তবিক কি করা হয়েছে সে নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। এই বিষয়টি মীমাংসিত হচ্ছে না এজন্য যে, বাংলাদেশ ভারতের চেয়ে অনেক এগিয়ে আছে। ভারত কি বাংলাদেশকে ঈর্ষা করছে এবং বাংলাদেশ যেন এগিয়ে যেতে না পারে সে জন্য যত ধরণের সমস্যা তৈরি করা যায় সে ধরণের সমস্যা তৈরি করছে?। তারই প্রয়াস হলো মিয়ানমারকে সাবমেরিন সরবরাহ করা। এই প্রশ্নগুলোর উত্তর ভারতকেই দিতে হবে। ভারত বাংলাদেশের বৃহৎ প্রতিবেশী। কিন্তু বাংলাদেশ যখন দরিদ্র এবং অভাবগ্রস্ত রাষ্ট্র হিসেবে ছিল তখন ভারতের যে মনোভাব আর বাংলাদেশ যখন বিশ্বের একটা বিস্ময় রাষ্ট্র হিসেবে দাঁড়িয়েছে তখন ভারতের মনোভাবের পার্থক্য জানিয়ে দেয় যে, বাংলাদেশের উন্নতি অগ্রযাত্রায় ভারত হয়তো সন্তুষ্ট নন। কূটনৈতিক মহল মনে করেন, ভারত সবসময় চায় প্রতিবেশী দেশগুলো সবসময় দরিদ্র থাকুক, অভাব-অনটনে থাকুক। সেটি বাংলাদেশে হচ্ছে না দেখেই ভারতের মন খারাপ? আর সে জন্যই ভারত এসব করছে বাংলাদেশকে চাপে রাখার জন্য? এই প্রশ্নের উত্তরটা খোঁজাটা দু`দেশের সম্পর্কের জন্য অত্যন্ত জরুরী।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭