ইনসাইড আর্টিকেল

সংবাদ মাধ্যম হোক শুভ সুন্দর ও কল্যাণের

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 17/10/2020


Thumbnail

আজ সকালের খবর একটি সুখবর।  বিশ্বর সেরা শহর মেলবোর্ণে মাত্র একজন করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী গত ২৪ ঘন্টায় সনাক্ত হয়েছে । ৪ঠা আগস্ট এই সংখ্যা ছিল ৬৮৭।  মোট নাগরিক যেখানে ৫০ লক্ষ। সকলেই বুকে পাথর চাপা দিয়ে সেই মার্চ মাস থেকে লড়াই করছে।  একটি সুখবরের জন্য - আমরা আজ মুক্ত সেই কথাটা শুনতে চায় এই বিশ্ববাসী।  আগামী কাল ভিষ্টোরিয়া প্রদেশের সরকার সেই সুখবরটা দেবেন বলে দিন রাত কাজ করেছেন  প্রিমিয়ার ড্যানিয়েল অ্যান্ড্রু। বিচলিত হননি তিনি।  বিরোধী নেতা গতকাল ব্যর্থ হয়েছেন, অনাস্থা প্রস্তাব পাশ করতে পার্লামেন্টে। কিছু কিছু আন্দোলন হয়েছে লক ডাউনের বিপক্ষে।  কিন্তু অধিকাংশ মানুষ সরকারের পাশে ছিল। আমরা বাংলাদেশের মানুষ সেখানে কোথায় আছি- দয়া করে ভাববেন কি ??  

জনসংখ্যার ভিত্তিতে অস্ট্রেলিয়ার বৃহত্তম স্টেট হচ্ছে নিউ সাউথ ওয়েলস।  সেখানকার প্রিমিয়ার ব্যক্তিগত সম্পর্কের কারণে চাপে আছেন।  বিরোধী দলের নেতাও মহিলা।  কিন্তু অনেকেই ওই প্রিমিয়ার এর পক্ষে।  কারণ আজকের এই বিশ্ব মহামারীর মাঝে তিনি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বলে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন মত প্রকাশ করেছেন।  শুধু তাই নয় , এখানে বিরোধীদলীয় নেতা এন্থনি আলবানিজও বলেছেন এই বিপদের দিনে তিনি সরকার পরিবর্তনের সংগ্রামে অবতীর্ণ হবেন না। 

আমরা আরো লক্ষ্য করছি যুক্তরাষ্ট্রর নির্বাচন। সেখানেও অত্যন্ত সহনীয় ভাবে নির্বাচনী প্রচারণা করছেন জো বাইডেন। কিন্তু ভিক্টোরিয়ার প্রিমিয়ারের বিরুদ্ধে অনাস্থা এনেছিল বিরোধীরা। সেটা ব্যর্থ হয়েছে। সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটেছে নোবেল পার্কের রাজনৈতিক অফিসে।

আমরা সকলেই জানি, মেলবোর্ন ও সিডনি বিশ্বের সেরা শহর।  আর সেই সুনামকে ধরে রাখতে তারা এপর্যন্ত একশো বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে।  তারা হার্ড ইমিউনিটি নয় elimination এর পক্ষে।  সুতরাং কঠোর লক ডাউনের মধ্যে দিনাতিপাত করছে সকলে। মানুষ মুখোশের হাত থেকে মুক্তি চায়।  একে অপরের হাসিমাখা মুখ দেখতে চায়।  মানুষ ভাইরাস এর থেকে মুক্তি চায়।  তারা মুক্ত বাতাসে বুক ভরে নিঃস্বাস নিতে চায়।  সুতরাং ১০০ বিলিয়ন ডলার তাদের বাজেট।

বিকল্পগুলো না দেখে হার্ড ইমমুনিটির দিকে হাঁটলে নৈতিক নিয়ম লংঘিত হয় বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান।  অথচ আমরা খেটে খাওয়া মানুষের দোহাই দিয়ে ওই রকম একটি অজানা পথে হাটছি।  কথায় আছে - নিজের বা অন্যের ক্ষতি তোমরা করোনা।  কিন্তু আমরা এর কোনটি থেকে বাদ যাচ্ছি না।  ওপার বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতার কথা হলো জাউ খেয়ে থাকতে হবে।  কিন্তু কোভিড এর কাছে হার মানা যাবে না। কিন্তু আমরা কিনা আলুর দাম বাড়িয়ে দিয়ে সমাজে অনাসৃষ্টি করছি।  আর মেতে উঠেছি ধর্ষণ ও ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলনের নাম সরকার পতনের ষড়যন্ত্রে। 

এভাবে আমরা সরকারের মনযোগকে বিভক্ত করে দিচ্ছি যাতে সরকার ব্যর্থ হয়ে পদত্যাগ করে। এই নেতিবাচক রাজনীতির হাত থেকে মানুষ মুক্তি চায় বলে বার বার রায় দিচ্ছে। কিন্তু কারো যেন হুশ নেই। 

বিশ্ব দুই ভাগে বিভক্ত। নগ্নতাকে একদল স্বাধীনতা মনে করে।  তারা সর্বোচ স্বাধীনতার সংগ্রাম করে।  তারা সমকামিতাকে কোনো সমস্যা মনে করে না।  তারা  সনাতনী পরিবারের সংজ্ঞা বদলে যেমন খুশি তাই করতে চায়।  অপরদিকে আছে আরবের কঠিন শাসন।  এই দুই সংস্কৃতির সংঘর্ষে বাঙালি জীবনে নেমে এসেছে এক অনাকাংখিত অবস্থা। 

আমাদের আকাশ মুক্ত বিদেশী মত ও সংস্কৃতির জন্য। কিন্তু যদি আমরা বিদেশীদের মতো সরকারের সমালোচনা করি- তাহলে ডিজিটাল আইনের জালে ধরা খেতে হবে একেবারে কারেন্ট জালের চেয়েও ঘন জাল। মানুষ ভয়ে একজনের পোস্টিংয়ে আরেকজন লাইক পর্যন্ত দেয়া ভুলে গেছে। 

কিন্তু সেই আকাশ পথে আসা, যা আমাদের কুশিক্ষা দেয়, নগ্নতা বাংলাদেশের শিশুদেরকেও আক্রান্ত করছে। বাংলাদেশ কেবল করোনা ভাইরাস এ আক্রান্ত নয়- সংস্কৃতির ভাইরাস কুরে কুরে খাচ্ছে বাংলাদেশের মানুষদেরকে । সরকার যেন ওই অবাধ প্রবাহকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে আগামী প্রজন্মর কথা ভেবে ।   

আমরা কতটা নিষ্ঠুর যে বিচারক শিশুদেরকে ধর্ষণের মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দিতে কুন্ঠিত হননি! আমরা কতটা নিষ্ঠুর যে গভীর রাতে আদালত বসিয়ে শিশুকে তার ঘরে ফেরার অধিকার দিতে হয়। আমরা আসলে কোথায় যাচ্ছি? 

সাংবাদিক বন্ধুদেরকে ফোন করলে প্রথমেই বলে নেয় তার ফোন নিরাপদ নয়! একথা শুনতে হতো ১/১১ র সময়। কিন্তু কেন?

আকাশপথে যদি নগ্ন ছবি আসে তা দেখতে বাধা নেই, আকাশপথে বিদেশ থেকে কোনো কথা আসলে তা শুনতে বাধা নেই - কিন্তু কেন আমার মনের কথা অন্যকে বলতে পারবো না? যৌক্তিক প্রশ্ন। আশা করি এর উত্তর আমরা একদিন পাবো। 

সেটা যাই হোক - ফিরে আসি যেখান থেকে শুরু করেছি।  আমাদের মুসল্লিরা গতকাল বায়তুল মোকাররম মসজিদে সমবেত হয়ে নামাজ পড়া শেষ করে সরকারকে হুমকি দিয়েছে - বিষয় ধর্ষণ।  ওই হুজুররা কিন্তু গনিমতের মাল ধারণার সঙ্গে সহমত পোষণ করেন।  সত্য কিনা জানিনা - কিন্তু শুনেছি ইহুদিরা কখনো ধর্ষণ করে না অন্য ধর্মের মানুষদেরকে।  তারা তাদের রক্তের মর্যাদা বোঝে। আপাতত ভাবে মনে হচ্ছে আমাদের কিংবা ভারতের সমাজে এই রক্তের মর্যাদাবোধ নেই। 

আমাদের একটি সামাজিক রীতি হলো : কাজের সময় ভাববে- তুমি কোন পরিবার থেকে এসেছো কথাটা ভাববে।  আজ সেই সব নৈতিকতা নেই বললেই চলে।  আমার কষ্ট হয় শিশুরা বিদ্যালয়ে যেতে পারছে না বিগত ৭টি মাস।  আমরা কেবল অর্থনীতি দেখছি।  আমরা ক্ষমতা দেখছি।  আর তাই শাহবাগ - বায়তুল মুকাররম থেকে গর্জন করছি। 

আমরা কেন বলতে পারছিনা - উপোস করে থাকবো কিন্তু ভাইরাস মুক্ত জীবন চাই! আমরা কেন মাদককে না বলতে পারছি না? কেন আমাদের দেখতে হয় নিষ্ঠুর হত্যাকারীর আস্ফালন? কেন ভুলে যাই - কারা হত্যাকারীদেরকে সাংসদ বানায়?

আমাদের মাঝে ক্ষুদ্র স্বার্থ এতটা জেঁকে বসেছে যে আমরা ভুলে গেছি আমাদের প্রকৃত আদব -কায়দা। আমাদের দায় সকলে মিলে - করোনা ভাইরাস মুক্ত জীবন যাপনের জন্য চেষ্টা করা।  কিন্তু সেখান থেকে সরে গিয়ে ডাকসুর সাবেক ভিপি সরকার পতনের আন্দোলন নিয়ে ভাবে।  তার দাবি ছিল -কোটা সংস্কার। এখনকার দাবি হতে পারতো কিভাবে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যহত থাকতে পারে তার সুযোগ সৃষ্টির দাবি। 

ডাকসুর ভিপি থেকে রাষ্ট্রনায়ক হওয়ার স্বপ্ন! স্বপ্ন মানুষকে উপরে নিয়ে যায়। কিন্তু সেই স্বপ্ন হতে হবে জনকল্যাণের। বঙ্গবন্ধু যা বলতেন, যে স্বপ্ন দেখতেন, তা ছিল মানুষের স্বপ্ন-ব্যক্তিগত স্বপ্ন নয় । আপনার ক্ষমতার স্বপ্ন বিশ্ববিদ্যালয়, দেশকে কোথায় নিয়ে গেলো সেটা ভেবে দেখেছেন কি?

এখন মানুষ নিরাপদ জীবন যাপনে করোনা ভাইরাস এর থেকে মুক্তি চায়। অস্ট্রেলিয়ার রাজনীতি এই জনমুক্তির রাজনীতি। সেখানে স্কট মরিসন ও এন্থনি আল্বানিজ এক কাতারে আছেন। আর সেজন্য অনেক ক্ষুদ্র স্বার্থকে তারা ত্যাগ করেছেন। 

আমরা ভারত -চীন- বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে সময় কাটাচ্ছি। কিন্তু সমাজটা যে দিন দিন রুগ্ন হয়ে পড়ছে - তাকে দেখবার কেউ কি নেই? মাদক, কোরনা, ধর্ষণ সবই আমাদের শত্রূ। দেশ ও সমাজ রক্ষা করবার শপথ যারা নিয়েছেন তাদের দায় এখানেই। কিন্তু আপনাদের নিয়ে কিছু কিছু কথা শুনছি যা খুবই কষ্টদায়ক। 

আসুন - আরবদের মতো ধনী না হয়ে আমরা শিক্ষিত মধ্যবিত্ত জীবন যাপন করি। আমরা আমাদের শিশুদের মুখে কি খাবার তুলে দিচ্ছি সেটা দেখি।  আমাদের শিশুরা ঘরে বন্দি।  তাদেরকে আলোরপথে চলতে মনোযোগী হই।  আর যারা রাষ্ট্র পরিচালনায় আছেন - প্লিজ সমাজ উন্নয়ন , শিক্ষা , নৈতিক উন্নয়ন যেন অর্থনৈতিক উন্নয়নের আগে থাকে। আগামী প্রজন্মর জন্য ভাবি।  তাদের স্বপ্ন যেন নষ্ট না করে দেই। 

এখন পুরো বিশ্বর মানুষ ভীত, বিপদে। সেই বিপদাপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ানো আমাদের আদর্শ হয় উচিত নয় কি? অনুগ্রহ করে নিজের কাছে প্রশ্ন করুন: আমরা কোথায় যাচ্ছি? আমি যা করছি সেটা কতটুকু মানব কল্যান বয়ে আনবে? এখন সরকার পতনের আন্দোলনের সময় নয়। এখন সরকারকে সহযোগিতার মধ্যদিয়ে জনগণের আস্থা অর্জনের সময়। 

দিল্লির বাসে ধর্ষণের খবর শুনে সকলে স্তম্ভিত হয়েছিল। আজ বাংলাদেশে যা হচ্ছে- তাতে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার শক্তি আমাদের শিশুরা হারিয়ে ফেলছে কিন্তু!ওদের ভবিৎষ্যৎ নিয়ে ছিনিমিনি খেলবার পাপাচারে নিজেকে কেউ জড়াবেন না প্লিজ! প্রয়োজনে বুকে পাথরচাপা দিয়ে আগামী প্রজন্মর ভালো মন্দ ভাবতে হবে। মিডিয়া সেই ভূমিকা পালনে ব্যর্থ নয় কি? মন্দ খবর ছাপা ভালো কিছু দিচ্ছে কি?  এতে কিন্তু জাতির মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি হচ্ছে! হচ্ছে না- কি? আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলেও বাংলাদেশে বিপদের মুখে পড়ছে। অনেকেই বলেছেন প্রচার প্রবণতাকে প্রভাবিত করছে। তাই আমার আবারও প্রশ্ন: আমরা কোথায় যাচ্ছি? Malcolm X এর মতে “The media`s the most powerful entity on earth. They have the power to make the innocent guilty and to make the guilty innocent, and that`s power. Because they control the minds of the masses.”    সংবাদ মাধ্যম হোক শুভ সুন্দর ও কল্যানে।

 

অধ্যাপক ড. ফরিদ আহমেদ, দর্শন বিভাগ , জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭