নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: 17/10/2020
আজ ঢাকা-৫ ও নওগা-৬ আসনের উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হল। অন্যান্য নির্বাচনের মতো এই দুটি উপনির্বাচনেও আগ্রহ নেই ভোটারদের। আগ্রহ না থাকায় ভোটকেন্দ্রে যায় না ভোটাররা। শুধু এই নির্বাচনই নয়, সাম্প্রতিক সময়ে যে নির্বাচনগুলো হচ্ছে সেখানে দেখা যাচ্ছে ভোটারদের এক ধরনের অনীহা-অনাস্থা। যদিও বিএনপি এ নির্বাচনগুলোতে অংশগ্রহণ করছে। কিন্তু ভোট কারচুপি, এজেন্টদেরকে বের করে দেয়াসহ নানা রকম অভিযোগ করছে দলটি। কিন্তু বাস্তবতা হলো এসব নির্বাচনের ব্যাপারে ভোটারদের আগ্রহ নেই।
বিএনপি নেতাকর্মীরা ভোটকেন্দ্রে যাবে এবং ভোটারদেরকে ভোট দেয়ার ব্যাপারে আগ্রহী করবে সেরকম কোনো তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। বিএনপির একাধিক নেতা বলছেন যে, দলের নেতাকর্মীরা ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে যাচ্ছেন না। এই অনাগ্রহের কারণে তারা এক ধরনের হতাশা প্রকাশ করেছেন।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাও বলছেন যে, কিছুদিন ধরে নির্বাচন নিয়ে মানুষের মধ্যে এক ধরনের অনাগ্রহ তৈরি হচ্ছে । মানুষ ভোট দেয়ার ব্যাপারে খুব কম আগ্রহ দেখাচ্ছে।
বিশেষ করে গত দুই সিটি নির্বাচনেও দেখা গেছে মানুষ ভোট দেয়নি। পরবর্তী নির্বাচনগুলোতেও এ ধারা অব্যাহত রয়েছে। এর কারণ খুঁজতে গিয়ে অনেকগুলো বিষয় সামনে এসেছে।
১. এ নির্বাচনগুলোর রাজনীতিতে প্রভাব নেই: উপনির্বাচন বা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনগুলোতে ক্ষমতার পালাবদল কিংবা রাজনীতিতে কোন দৃশ্যমান পরিবর্তন হবে না। এজন্য জনগণ ভোটের ব্যাপারে আগ্রহহীন হয়ে পড়েছেন। এই ভোটাররা জানেন যে আওয়ামী লীগের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে সংসদে। কাজেই এ নির্বাচন সরকার পরিবর্তন বা কোনরকম নীতিনির্ধারণী পরিবর্তনে ভূমিকা রাখবে না।
২. ভোটের ব্যাপারে মানুষের আগ্রহ নষ্ট হয়ে গেছে: মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এগিয়ে গেছে। অর্থনৈতিক কমকার্ন্ড এবং জীবন সংগ্রামে মানুষ খুব ব্যস্ত। তাই জীবন-জীবিকার সংগ্রামে ব্যস্ত মানুষ এখন ভোট প্রদানের ক্ষেত্রে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। যেটা উন্নত বিশ্বে আমরা দেখেছি। যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোতে এবং অস্ট্রেলিয়াতে মানুষের ভোটের প্রতি আগ্রহ কমে গেছে। এটা উন্নত বিশ্বের একটা স্বাভাবিক প্রবণতা।
৩. পছন্দের প্রার্থীর অভাব: নির্বাচনে যারা প্রার্থী হচ্ছেন তারা ভোটারদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি করতে পারছেন না। অন্যদিকে প্রার্থীরাও ক্যারিশম্যাটিক নয় যে ভোটাররা তাদের জন্য ভোট কেন্দ্রে ছুটে যাবে। সে কারণেও ভোটাররা ভোটের ব্যাপারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।
৪. নির্বাচনী প্রচারণা: নির্বাচনী প্রচারণার ক্ষেত্রে ভোটারদেরকে প্রার্থীরা উদ্বুদ্ব করতে পারছেন না। ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে যাওয়া উচিত এবং ভোট দেয়া উচিত এমন পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারছেন না প্রার্থীরা। এতে করে জনগণের মধ্যে একটা অনাগ্রহ তৈরি হয়েছে ।
৫. মানুষের মধ্যে নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে অনাস্থা: ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচন কমিশন নিয়ে মানুষের মধ্যে অনাস্থা ও অনাগ্রহ তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে নির্বাচন কমিশন কতটা অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে সেটা নিয়েও অনেকের সংশয় রয়েছে। এ কারণেই মানুষের ভোটের উপর আগ্রহ নেই। তবে নির্বাচনে মানুষ ভোট দিচ্ছেন না এটা গণতন্ত্রের জন্য অশনিসংকেত।
ভোটার ছাড়া যেমন নির্বাচন অসম্পূর্ণ, তেমনি এই ধরনের নির্বাচন গণতন্ত্রকে অসম্পূর্ণ করে ফেলে। তাই একটি সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচনের জন্য সবার অংশগ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ এবং সেটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। নির্বাচনে যদি জনগণের অংশগ্রহণ না থাকে তাহলে সেই নির্বাচন অর্থপূর্ণ হয় না। তেমনি গণতন্ত্রের সংকট দেখা যায়। সেজন্য সব রাজনৈতিক দল যেন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে যে ব্যাপারে এখন থেকেই সব রাজনৈতিক দলের ভূমিকা রাখা দরকার।
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭