নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: 18/10/2020
ফাহিম হাসান (ছদ্মনাম)। চাকরি করেন ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। গত বছর বেশ ধুমধাম করে বিয়ে করেছিলেন। বিয়েও হয়েছিল পারিবারিক ভাবে নিজ গ্রামে। তবে এখানে একটু সমস্যা ছিল ফাহিমের। স্ত্রীর সাথে বয়সের তফাৎটা একটু বেশীই ছিল তার। আর এই নিয়ে বিপত্তিও কম হয়নি। বিয়ের ১৫/২০ দিন পরও শারীরিক সম্পর্ক করতে পারেননি তিনি। শারীরিক সম্পর্ক নিয়ে তার স্ত্রী অনেক ভীত ছিল। শুরুতে ফাহিম এটাকে খুব একটা পাত্তা দেননি। স্ত্রীকে ভুল বুঝছিল। ভেবেছিল হয়তো অন্য কারও সাথে সম্পর্ক আছে। তাই এমন করছে। তবে তিনি কোন রকম জোর করেননি। ঢাকায় এসে বিষয়টি নিয়ে কলিগদের সাথে পরামর্শ করে ডাক্তার দেখান। বেশ কিছু দিন কাউন্সেলিং করানোর পর এই সমস্যার সমাধান হয়।
ফাহিমের মতো এই রকম সমস্যা যে অনেকেই পরেন, তা নয়। কিন্তু সমস্যাটা ভিন্ন রূপে অনেকের মধ্যেই আছে। আর তা হল যৌন শিক্ষা নিয়ে লজ্জা, সংকোচ কিংবা আড়ষ্টতা। এই বিষয়ে বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সাথে কথা হয়। তারা যেন আরও ভয়ঙ্কর চিত্র তুলে ধরলেন। একজন যৌন বিষয়ক চিকিৎসক বলেন, ‘অনেকেই গুরুতর যৌন সমস্যা নিয়ে আমাদের কাছে আসেন। কিন্তু সংকোচে শুরুর দিকে বলতে পারেন না। অবশ্য আমরা ধীরে ধীরে তাকে অবয় দিয়ে সবকিছু শোনার চেষ্টা করি’।
তিনি আরও বলেন, ‘এই রকম সমস্যা গ্রাম এবং শহর দুই ধরণের রোগীর ক্ষেত্রেই হয়। কারণ যৌন শিক্ষা গ্রাম শহরের উপর নির্ভর করে না। নির্ভর করে সচেতনতার উপর’। আর আমাদের এখানে এই সচেতনতা গড়ে উঠেনি, বলে উল্লেখ করেন তিনি। অন্য আরেকজন চিকিৎসক বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন এভাবে যে, আমরা আমাদের প্রতিটি বিষয়েই সচেতন থাকি। উদাসীনতা শুধু যৌন শিক্ষার ক্ষেত্রে। যে কোন সমস্যা খোলামেলাভাবে আলোচনা করি। কিন্তু সংকোচ আর আড়ষ্টতা শুধু এখানে। দিনে দিনে এই ধরণের সচেতনতা কিছুটা বাড়ছে। তবে তা উল্লেখ করার মতো নয় বলে জানান এই বিশেষজ্ঞ।
বিশ্বের প্রতিটি প্রাচীন সভ্যতাই শারীরিক ও যৌন শিক্ষার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হতো। এমনটা দেখা যায় আমাদের এই উপমহাদেশেও। প্রাচীন ভারতীয় পণ্ডিত মল্লনাগ বাৎস্যায়ন সংস্কৃত সাহিত্যে এমন একটি গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। মানব যৌনাচার সংক্রান্ত এই গ্রন্থটি হল ‘কামসূত্র’। গ্রন্থের একটি অংশের উপজীব্য বিষয় হল যৌনতা সংক্রান্ত ব্যবহারিক উপদেশ। গ্রন্থটি মূলত গদ্যে লিখিত; তবে অনুষ্টুপ ছন্দে রচিত অনেক পদ্যাংশ এতে সন্নিবেশিত হয়েছে।
কাম অর্থ ইন্দ্রিয়সুখ বা যৌন আনন্দ। আর সূত্র অর্থ সুতো বা যা একাধিক বস্তুকে সূত্রবদ্ধ রাখে। কামসূত্র শব্দটির অর্থ তাই পুস্তকের আকারে এই জাতীয় উপদেশ মালার গ্রন্থনা। এতে রমণীদের জন্য প্রযোজ্য চৌষট্টি কলা বিবৃত হয়েছে। কামশাস্ত্র সাহিত্যধারার প্রাচীনতম ও সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ হল কামসূত্র। এটি একটি সারগ্রন্থ যা খ্রিষ্টীয় দ্বিতীয় শতাব্দীতে বিভিন্ন রচনা থেকে সংকলিত হয়েছিল।
কিন্তু বিস্ময়ের কথা হল, প্রাচীন সমাজে যৌনতা নিয়ে সচেতনতা পরিলক্ষিত হলেও, বর্তমান সমাজে এটা যেন একেবারেই অনুপস্থিত। আর এভাবেই লজ্জা, সংকোচ আর আড়ষ্টতায় আটকে আছে যৌন শিক্ষা!
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭