ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

২০২০ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন যে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 21/10/2020


Thumbnail

২০২০ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আর বাকি মাত্র ১২ দিন। রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রচারণার তোড়ে সাধারণ মানুষের জানার সুযোগ খুবই কম আর কোনো প্রার্থী এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন কিনা। অনেকে হয়তো ধরেই নিয়েছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে শুধু রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট এ দুই দলের নির্বাচিত প্রার্থীরাই অংশ নেয়। কিন্তু না, তাদের বাইরেও অনেক স্বতন্ত্র প্রার্থীও ভোটের লড়াইয়ে নামেন। এবার ১,২১৬ জন প্রার্থী যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদের জন্য প্রার্থী হতে ফেডারেল নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হচ্ছে গত ২৩০ বছর ধরে। কিন্তু রিপাবলিকান বা ডেমোক্র্যাটিক - এই দুই পার্টির বাইরের কেউ প্রেসিডেন্ট হয়েছেন মাত্র একবার। তিনি হলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটন। তিনি ছিলেন একজন `স্বতন্ত্র` প্রার্থী।

মার্কিন রাজনীতির এই দুই প্রধান রাজনৈতিক দল রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটিক পার্টি এমনভাবে মিডিয়ায় নির্বাচনী প্রচারে আধিপত্য করে, এবং প্রচারণার জন্য চাঁদা তোলার ক্ষেত্রেও তারা এমনভাবে এগিয়ে আছে যে এই দুই পাটির বাইরের কারো জেতার সম্ভাবনা প্রায় শূন্য। কিন্তু এই প্রায়-অনতিক্রম্য বাধার কথা জেনেও কেউ কেউ কিন্তু ভাবেন - যাই ঘটুক, আমি নির্বাচন করবোই।

এরকম তিনজন প্রার্থীর একজন জেড সিমন্স (পিয়ানোবাদক ও বক্তা), আরেকজন মার্ক চার্লস (আমেরিকান আদিবাসী ও তথ্য প্রযুক্তিবিদ) এবং শেষ জন ব্রক পিয়ার্স (শত কোটি টাকার ক্রিপটোকারেন্সির মালিক)।

 

জেড সিমন্স

জেড সিমন্স একজন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী নারী। তিনি একজন সাবেক বিউটি কুইন। একজন পেশাদার পিয়ানোবাদক, একজন খ্রিস্টান যাজক, মানুষকে উদ্দীপ্ত করার মতো বক্তা, র‍্যাপার এবং একজন মা।

জেড সিমন্স বলছেন, তার লক্ষ্য হলো অর্থনীতি, শিক্ষা এবং ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থায় সংস্কার এনে সবার জন্য সমান সুযোগের দ্বার উন্মুক্ত করা। সেই চেতনা থেকেই তিনি আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে কম খরচে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন।

সিমন্স জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হবার যোগ্যতায় বলা আছে আপনাকে ৩৫ বছর বয়স্ক হতে হবে, তাকে যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেয়া একজন বাসিন্দা হতে হবে এবং এদেশে ১৪ বছর বাস করতে হবে। কিন্তু এখন প্রেসিডেন্ট পদে কেউ প্রার্থী হলে তাকে প্রায় ১০০ কোটি ডলার খরচ করতে হয়, এটা ভাবলেই তার খুব খারাপ লাগে। তাঁর মতে ওই অর্থ সাধারণ মানুষের সাহায্যার্থে খরচ করা উচিৎ।

জেডের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল - তিনি যে প্রতিযোগিতায় আছেন তা মানুষকে জানানো। রিপাবলিকান এবং ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থীদের নাম যুক্তরাষ্ট্রের সব অঙ্গরাজ্যের ব্যালট পেপারে থাকবে। কিন্তু যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী তাদের বিভিন্ন রাজ্যের নানা রকম সময়সীমা ও শর্ত পূরণ করতে হবে। সিমন্সের ক্ষেত্রে যেটা হবে তা হলো - তার নাম ওকলাহোমা এবং লুইজিয়ানা রাজ্যের ব্যালট পেপারে থাকবে। কিন্তু অন্য ৩২টি রাজ্যে তার নাম নিবন্ধিত হয়েছে একজন "রাইট-ইন" প্রার্থী হিসেবে। অর্থাৎ, ব্যালটে তার নাম থাকবে না কিন্তু কোন ভোটার যদি নিজে ব্যালটে তার নাম লিখে দেন - তাহলে সেই ভোটটি তিনি পেলেন বলে ধরা হবে।

জেড সিমন্স স্বীকার করেন যে তার জয়ের সম্ভাবনা খুবই কম কিন্তু তিনি মনে করেন এ বছর না হলেও পরবর্তীতে কোন এক সময় তিনি হোয়াইট হাউসে যেতে পারবেন।

 

মার্ক চার্লস

স্বতন্ত্র প্রার্থীদের একটা সুবিধা হলো তাদের ভোটে দাঁড়ানোর জন্য কোন দলকে সন্তুষ্ট করতে হয়নি।

তাই তারা স্বাধীনভাবে তাদের পছন্দমত ইস্যুতে কথা বলেন। মার্ক চার্লস হচ্ছেন এর একটা দৃষ্টান্ত। তিনি একজন কম্পিউটার প্রোগ্রামিং এবং প্রযুক্তি ক্ষেত্রে কাজ করেছেন। তিনি আদিবাসী এবং অশ্বেতাঙ্গ আমেরিকানদের জীবনে প্রভাব ফেলে এমন ইস্যুতে সামাজিক আন্দোলনের নিষ্ঠাবান কর্মী।

তিনি সেই সব ভোটারদের প্রার্থী হতে চান যারা ট্রাম্প বা বাইডেন কারোর সাথেই আত্মীয়তার বন্ধন অনুভব করেন না। চার্লস এসেছেন নাভাজো জাতিগোষ্ঠী থেকে। তার এই আত্মপরিচয় তার প্রার্থিতার ক্ষেত্রে গভীর প্রভাব ফেলেছে।

তিনি বলছেন, তিনি সবাইকে নিয়ে এক আধুনিক আমেরিকা গড়ে তুলতে চান - যা অসাম্যকে প্রত্যাখ্যান করবে। আমেরিকার সংবিধান শুরু হয়েছে `উই দ্য পিপল` কথাটি দিয়ে, কিন্তু কখনো নারীদের কথা উল্লেখ করা হয় নি, আদিবাসীদেরকে রাখা হয়েছে এর বাইরে, আর আফ্রিকানদের তিন-পঞ্চমাংশ মানুষ বলে মনে করা হয়েছে- জানিয়েছেন চার্লস

এটাই তার প্রচারাভিযানের মর্মকথা। তিনি এমন একটি জাতি গড়ে তুলতে চান যেখানে ‘উই দ্য পিপল’ মানে সব আমেরিকানকে বোঝাবে। এজন্য তাঁর মতে কিছু মৌলিক ভিত্তি নিয়ে কাজ করতে হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত তাতে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে - যেমন বর্ণবাদ, পুরুষতান্ত্রিকতা এবং নগ্ন শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদ।

 

ব্রক পিয়ার্স

ব্রক পিয়ার্স শিশু বয়সে অভিনেতা হিসেবে নাম করেছিলেন। ১৯৯৬ সালে ফার্স্ট কিড নামে একটি কমেডিতে তিনি প্রেসিডেন্টের পুত্র হিসেবে অভিনয় করেছিলেন। পরে তিনি টেক উদ্যোক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন এবং এখন তাকে হয়তো একজন ক্রিপটোকারেন্সি বিলিওনিয়ার বলা যায়।

দেশের অবস্থা নিয়ে তিনি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। তাই তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন। গত চার বছর ধরে মি. পিয়ার্স পুয়ের্তো রিকোতে জনকল্যাণমূলক কাজ করেছেন। তিনি বলছেন শুধু অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কথা ভাবলে হবে না। জীবন, স্বাধীনতা, সুখী জীবনের সন্ধান - এগুলোকে কতটা তুলে ধরা হচ্ছে তা দিয়েই তিনি সাফল্য মাপতে চান।

তিনি জানিয়েছেন, তার মধ্যে রক্ষণশীল এবং উদারনৈতিক দুই প্রবণতাই রয়েছে। তিনি গাঁজা বৈধ করে দেবার পক্ষপাতী, ব্যক্তিস্বাধীনতায় বিশ্বাসী।

নির্বাচন কমিশনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ব্রক পিয়ার্স প্রচারাভিযানের জন্য ৩৭ লক্ষ ডলার খরচ করেছেন। তার কথায়, তিনি সরাসরি নির্বাচনে জেতার কৌশল নেননি। তিনি চান একটি মাত্র রাজ্যে জিততে এবং লড়াইটাকে হাড্ডাহাড্ডি পর্যায়ে নিয়ে যেতে - যাতে প্রতিনিধি পরিষদ একজন বিজয়ী বেছে নিতে বাধ্য হয়।

তার কথা, এটা যখনই হয়েছে তখন তারা সমঝোতার ভিত্তিতে প্রেসিডেন্ট হিসেবে তৃতীয় বা শেষ স্থানে থাকা প্রার্থীকে বেছে নিয়েছে। সমস্যা হলো, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এটা ঘটেছে মাত্র একবার - ১৮২৪ সালে। তবে ব্রক পিয়ার্সের কথা হচ্ছে - এবার নভেম্বরে তার বয়স হবে ৪০। তাই তার হাতে সময় আছে, এবং এইভাবে তিনি ভবিষ্যতে শুধু তার জন্য নয় - যে কোন স্বতন্ত্র প্রার্থীর জন্যই মাঠ তৈরি করে রাখতে চান।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭