নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: 21/10/2020
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ‘কিচেন ক্যাবিনেট’ একটু বহুল প্রচলিত এবং জনপ্রিয় ধারনা। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এবং জরুরী বিষয় গুলো দ্রুত নিস্পত্তি এবং বিভিন্ন জটিল বিষয়ে সিদ্ধান্তের জন্য ‘কিচেন ক্যাবিনেট’ এর চল আছে দীর্ঘ দিন ধরে, প্রায় সব গনতান্ত্রিক রাষ্ট্রেই। এটি একটি অনানুষ্ঠানিক ব্যবস্থা। সাধারণত মন্ত্রী সভার গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রধানমন্ত্রীর বিশ্বস্ত কয়েকজন মন্ত্রীকে নিয়ে অঘোষিত ভাবে কিচেন ক্যাবিনেট তৈরী হয়। প্রধানমন্ত্রী স্পর্শকাতর, গোপন এবং জরুরী গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে কয়েকজন মন্ত্রীকে ডাকেন। তাদের পরামর্শ ও মতামত নেন। এই পরামর্শ তার সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াকে সহজ করে। আনুষ্ঠানিক কোন ঘোষণা না থাকলেও কিচেন ক্যাবিনেটে কারা আছেন সবাই জানেন। সরকারে তারা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বা মন্ত্রী হিসেবে পরিচিতি পান। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রীসভায় কিচেন ক্যাবিনেট ছিলো। বঙ্গবন্ধু জাতীয় চার নেতা এবং ড: কামাল হোসেনের সঙ্গে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনা করতেন। জিয়ার আমলেও কিচেন ক্যাবিনেট ছিলো, অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী, মেজর জেনারেল (অব:) মাজেদুল হক, কর্নেল (অব:) মোস্তাফিজুর রহমান সহ কয়েকজনকে নিয়ে জিয়া গোপন শলাপরামর্শ করতেন। এরশাদের কিচেন ক্যাবিনেট ছিলো মিউজিক্যাল চেয়ারের মতো। এরশাদ একজনকে বেশীদিন গুরুত্বপূর্ণ রাখতেন না। একেক ঋতুতে একেক জন এরশাদের কাছে গুরুত্ব পেতেন। ৯১ বেগম জিয়া ক্ষমতায় এসেও সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য কয়েকজনের উপর নির্ভর করতেন। এদের মধ্যে ছিলেন সাইফুর রহমান, কর্নেল (অব:) অলি আহমেদ, ব্যারিস্টার আবদুস সালাম তালুকদার, ব্যারিষ্টার নাজমূল হুদা।
৯৬এ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেও কিচেন ক্যাবিনেটের কথা শোনা যায়। জিল্লুর রহমান, আবদুস সামাদ আজাদ, আমীর হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, আবদুর রাজ্জাক, মোহাম্মদ নাসিমরা ছিলেন কিচেন ক্যাবিনেটের সদস্য। কিন্তু ২০০৮ সালে দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় এসে আর কিচেন ক্যাবিনেটের পথে যাননি শেখ হাসিনা। এখন কিচেন ক্যাবিনেট তো দুরের কথা, অনেক নীতি নির্ধারনী গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত মন্ত্রীরা জানেন টিভি পর্দায়। কেন নাই কিচেন ক্যাবিনেট? এর উত্তর খুঁজতে গিয়ে কয়েকটি কারন পাওয়া যায়।
১. ওয়ান ইলেভেন : কিচেন ক্যাবিনেট না থাকার প্রধান কারণ হিসেবে মনে করা হয় ওয়ান ইলেভেন। ঐ সময়ে হেভীওয়েট নেতাদের ষড়যন্ত্র ও বিশ্বাসঘাতকতার জন্যই সম্ভবত শেখ হাসিনা সরকারে কাউকে আলাদা গুরুত্বপূর্ণ করতে চাননা। ক্ষুদ্র একটি অংশকে প্রাধান্য দিতে চান না।
২. আস্থা ও বিশ্বাসের সংকট : আস্থা ও বিশ্বাসের সংকট থাকার কারনেই তিনি ছোট মন্ত্রীসভায় যান নি।
৩. গোপনীয়তা ফাঁস : ছোট পরিসরে সিদ্ধান্ত নিলেও সেই তথ্য ফাঁস হয়ে যায়। এমন উদাহরন ভুড়ি ভুড়ি। এজন্যই শেখ হাসিনা কিচেন ক্যাবিনেটে আস্থা রাখেন নি। যেমন: বেগম খালেদা জিয়ার জামিন প্রসঙ্গ। যদি এটা কিচেন ক্যাবিনেটে আলোচনা হতো, তাহলে হয়তো তা ফাঁস হয়ে যেতো। কিচেন ক্যাবিনেট না থাকায় এরকম বহু তথ্যই গোপন রাখা সম্ভব হয়।
৪. যাকে যখন প্রয়োজন : কিচেন ক্যাবিনেটের চেয়ে যখন যাকে প্রয়োজন তাকে ডেকে আলোচনা করার কৌশলেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন প্রধানমন্ত্রী। আইন সংক্রান্ত বিষয়ের জন্য আইন মন্ত্রীকে, দুর্যোগ বিষয়ে দূর্যোগ মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন। এটা অনেক ক্ষেত্রে কিচেন ক্যাবিনেটের চেয়ে কার্যকর।
৫. আমলা নির্ভরতা : কিচেন ক্যাবিনেট থাকার একটি কারণ মনে করা হয় আমলা নির্ভরতা। আমলারা ঝটপট কাজ করেন, প্রস্তাবনা দ্রুত বানান, সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে জটিলতা করেন না। একারণে প্রধানমন্ত্রী অনেক সিদ্ধান্তই আমলাদের সঙ্গে আলাপ করে নেন। ফলে কিচেন ক্যাবিনেটের দরকার হয় না।
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭