ইনসাইড আর্টিকেল

লুডু শুধু খেলা নয়, একটি গুরুত্বপূর্ণ দর্শনও বটে!

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 22/10/2020


Thumbnail

আমাদের দেশের গ্রামীণ এবং শহরের সমাজ ব্যবস্থায় মেনে চলা হয় অনেক রীতিনীতি, আচার অনুষ্ঠান। যে রীতিনীতির সাথে ছোট বেলা থেকে আমরা সবাই পরিচিত। আমরা ছোটবেলায় বিশেষ করে প্রাথমিক স্কুলে যাওয়ার আগে নিজের বাড়িতে বা পাশের বাড়িতে গিয়ে সমবয়সীদের সাথে কম বেশি সবাই বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা করেছি। তখন দেখেছি, বাড়ির মা, চাচী, খালা,খালু, ফুপা, ফুপি, এমন কি পাশের বাড়ির লোকজন এসে বা পাশের বাড়িতে গিয়ে,  দুপুরের পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সবাই মিলে লুডু খেলতেন। সাথে থাকতো চায়ের আসর। ঘরের বিছানায় অথবা মাটিতে মাদুর পেতে এ খেলাটি খেলে অবসর সময় পার করা হয়ে থাকে। গ্রামের বিবাহিত এবং অবিবাহিত  মহিলারাও অবসর সময়ে এই খেলাটি খেলতে পছন্দ করেন। আবার গ্রামে গঞ্জের, হাটে বাজারে যুবা থেকে বৃদ্ধরা বাজি ধরেও লুডু খেলা খেলা থাকেন। কখনো সেটা খেলা হয় একক নিয়মে কখনো বা যৌথ নিয়মে। লুডু বিভিন্ন প্রকার হয়ে থাকে। যে সকল লুডু খেলার প্রচলন বাংলাদেশে দেখা যায় তা হলো- ঘর লুডু, সাপ লুডু, পৃথিবী ভ্রমণ লুডু

লুডু বা লুডো খেলা বাংলাদেশে ও ভারতে উভয় দেশেরই একটি অন্যতম বিনোদন হিসেবে বিবেচিত।মোক্ষপট` নামে সাপ লুডুর উৎস কিন্ত প্রাচীন ভারতে। এই খেলার মাধ‍্যমে সুশিক্ষা গ্রহন একটি ভারতীয় দর্শণ। এই খেলা মূলত এক আধ্যাত্মিক খেলা? জানা যায়, সাপলুডুর উৎস ভারতে এবং এর উদ্দেশ্য ছিল খেলোয়াড়দের মোক্ষ সম্পর্কে সচেতন করা। এবার জানা যাক এই খেলার রহস্য

 সাপ লুডুর আদি ভারতীয় নাম ‘মোক্ষপট’। প্রাচীন ভারতে এর জন্ম। কিন্তু ১৯ শতকের শেষদিকে ইংরেজরা এই খেলাকে নিজেদের ছাঁচে ঢালাই করে। সাপ লুডুর আসলে মোক্ষের রাস্তা বাতলায়। এখানে ছক্কার দানকে ‘কর্ম’ হিসেবে ধরতে হয়। সাপ আসলে পাপের প্রতীক। কারণ সাপের মুখে পড়লে পতন অনিবার্য। অবশ্যম্ভাবী ভাবে মইগুলি পুণ্যকর্মকে বোঝায়। তাতে চড়লে মোক্ষের পথ সহজ হয়। বার বার সাপ ও মইতে ওঠা-নামা জন্মান্তরচক্রের কথা বলে। কর্মফল অনুযায়ী উত্থান অথবা পতন নির্ধারিত হয়। ছকের চূড়ান্ত স্তরে রয়েছে মোক্ষ। সেই ঘরের নম্বর ১০০। এটা পূর্ণতা, বিস্তার বা সমগ্রের প্রতীক। এখানে পৌঁছাতে পারলে পুনর্জন্মচক্র থেকে মুক্তি মেলে। জাগতিক পাপ-পুণ্যের হিসেব থেকেও মুক্তি মেলে। আদিতে এই খেলায় সাপের মুখগুলিতে কোন কোন পাপের ফলে পতন ঘটছে, তাদের নামগুলি লেখা থাকত। লেখা থাকত মইয়ের গায়ে পুণ্যকর্মের নামগুলিও। ১৯০০ বছর আগেও ছিল লুডু খেলা। লুডু খেলায় ব্যবহৃত ছক্কা বা ডাইস প্রায় দুই হাজার বছরেও তেমন পরিবর্তিত হয়নি। তবে আমাদের দেশে অঞ্চলভেদে এই ডাইয়ের সংখ্যা বা দানের রয়েছে অনেক নাম। যেমন- এক ( ১ ) এক্কা বা পুট। দুই ( ২ ) দোক্কা, তিন ( ৩ ) তেক্কা, চার ( ৪ ) চৌকা, পাঁচ ( ৫ ) পাঞ্জা, ছয় ( ৬ ) ছক্কা। আবার কোথাও কোথাও এই ডাই, ছক্কা নামেও পরিচিত। সম্প্রতি গবেষকরা রোমান সভ্যতার প্রাচীন নিদর্শনের সঙ্গে লুডু খেলায় ব্যবহৃত ডাইস আবিষ্কার করেছেন। ফক্স নিউজ এক প্রতিবেদনে বিষয়টি জানিয়েছে ।

মূলত লুডুর ছকে বা কোটের উভয় পাশে দুটি খেলা থাকে। একটি ঘর লুডু অপরটি সাপ লুডু। সাপ লুডু খেলায় যে প্রতিযোগী ডাই চেলে প্রথমে ১ (এক বা পুট) ফেলতে পারে সে ঘর থেকে বের হবার সুযোগ পায়। এক থেকে একশ পর্যন্ত যে প্রতিযোগী যেতে পারে সে`ই জয়ী হয়। যে গুটি সাপের মুখে এসে পড়ে সাপ তাকে কেটে দেয় অর্থাৎ সাপের মুখ থেকে লেজ অঙ্কিত ঘরে পিছিয়ে আসে এবং যে গুটি মই এর গোড়া অঙ্কিত ঘরে আসে সেটি মই বেয়ে মই এর উপরের ঘরটিতে পৌঁছে যায়।

ঘর লুডু,এই খেলায় প্রতিটি প্রতিযোগীর চারটা করে গুটি থাকে, প্রত্যেকের গুটির রং ভিন্ন। প্রতিটি খেলোয়াড় একটি নির্দিষ্ট রঙের ঘর দখল করে, যে ঘরগুল বিভিন্ন পশু পাখি এমনকি চিত্র তারকাদের ছবি দিয়ে মুদ্রিত থাকে, একে স্টপেজ বলে, মোট স্টপেজ চারটি, স্টপেজ এ কারো গুটি খাওয়া যায় না। প্রত্যেক প্রতিযোগী ক্লক ওয়াইস একবার করে ডাই গড়িয়ে মারতে পারেন। দান ছক্কা পড়লেই  প্রতিযোগীর খেলা শুরু হয়, তার আগে নয়। যে প্রতিযোগী ডাই চেলে প্রথম ছক্কা ফেলতে পারে সে তার ঘর থেকে প্রথম গুটি বের করে যাত্রা শুরু করতে পারে।

পরপর তিন ছক্কা পড়লে দান বাতিল হয়, পুনরায় তাকে ডাই চালতে হয়। প্রতিটি প্রতিযোগীর এভাবে ঘর থেকে গুটি বের হয়ে পুরো ছক অতিক্রম করে নিজের ঘরের বা স্টপেজ এর দুইঘর আগে পাকানোর পথে, হোমে নিয়ে গুটি পাকাতে হয়। যার সবগুলো গুটি অন্যদের আগে পাকার ঘরে পৌছায় সে প্রথম হয় এবং পর্যায়ক্রমে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ স্থান নির্ধারিত হয়।

পৃথিবী ভ্রমণ লুডুর মাধ্যমে বিশ্বকে জানা যায়। এ লুডুও একইভাবে খেলা হয়। বোর্ডে উড়োজাহাজ, ট্রেন, বাস ইত্যাদির উল্লেখ থাকে। ছক্কায় এক ফোঁটা উঠলে গুটি ঘর থেকে বের হবে। এরপরে ছক্কায় যে নম্বরের ফোঁটা উঠবে সে নম্বরের সাহায্যে খেলোয়াড় সেই দেশে যাবে। এভাবে একটি নির্দিষ্ট জায়গা থেকে শুরু করে সারা পৃথিবী ঘুরে যে সকলের আগে পাক্কা ঘরে পৌঁছাবে সেই জয়ী হবে।এই খেলাটির সরঞ্জামাদি বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উৎপাদন করা হয়ে থাকে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭