ইনসাইড হেলথ

বদলি হচ্ছেন সিএমএসডির পরিচালক?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 22/10/2020


Thumbnail

 

চিকিৎসকদের সঙ্গে আমলাদের দ্বন্দ্ব নিরসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই দ্বন্দ্ব যেন বাড়তে না পারে, সেজন্য সরকার সতর্ক অবস্থান গ্রহণ করেছে। ইতোমধ্যে সরকার কিছু কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বলে জানা গেছে। সরকারের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, বিশেষ করে করোনা মোকাবেলা এবং করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসার শঙ্কা করা হচ্ছে আগামী শীত মৌসুমে। সেই সময় চিকিৎসকরা কোন আন্দোলনে যাক এটা সরকার চায় না। চিকিৎসকদের সাথে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যে দ্বন্ধ তা নিরসনের জন্য সরকার কিছু কিছু পদক্ষেপের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে সিএমএসডি’র বর্তমান পরিচালক আবু হেনা মোরশেদ জামানকে অন্যত্র বদলি করা হচ্ছে। চিকিৎসকরা যে দাবিগুলো করেছিল, তারমধ্যে অন্যতম দাবি ছিল- সিএমএসডির পরিচালক পদে একজন চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া। তবে সরকার এখানে একজন সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাকে নিয়োগ দিতে চাইছেন বলে জানা গেছে।

এর আগেও সিএমএসডির পরিচালক ছিলেন একজন সামরিক কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ। আবু হেনা মোরশেদ জামানের আগে তিনি সিএমএসডি’র পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। সেই সময় তিনি নানা বিতর্কে জড়িয়ে পরেছিলেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানাচ্ছে যে, এছাড়াও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, চিকিৎসকদের কোন পদ আমলাদের দেওয়া হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখার জন্য। আর এই রকম কোন পদ যদি দেওয়া হয়ে থাকে, সেটা পর্যায়ক্রমে সরিয়ে ফেলা হবে।

সরকারের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেছেন যে, চিকিৎসকরা করোনা মোকাবেলার সময় অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে কাজ করেছেন এবং ভালো ভূমিকা পালন করেছেন। সরকার কখনোই চায় না যে, চিকিৎসক এবং প্রশাসন মুখোমুখি অবস্থানে যাক। এটি কারও জন্যই মঙ্গলজনক হবে না। উল্লেখ্য যে, সাম্প্রতিক সময়ে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ এবং বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন প্রশাসনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেন। তারা অভিযোগ করেন যে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বেশ কিছু পদ যেগুলো স্বাস্থ্য ক্যাডারের জন্য সংরক্ষিত সেই পদে প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাদের দেওয়া হয়েছে। তবে একাধিক সূত্র বলছে যে, এই বিতর্কের মূল সুত্রপাত হয়েছিল কিছু পদন্নোতি নিয়ে। সহকারি অধ্যাপক পদ থেকে ১২৯ জনকে সহযোগী অধ্যাপক পদে সম্প্রতি পদন্নোতি দেওয়া হয়েছে। এই পদন্নোতি দেওয়ার ক্ষেত্রে বিএমএ এবং স্বাচিবের কোন মতামত নেওয়া হয়নি, এজন্যই আসলে তারা নাখোশ হয়েছেন।

তবে বিএমএ এবং স্বাচিবের নেতারা বলেছেন, পদন্নোতি নিয়ে তাদের কোন মাথা ব্যাথা নেই। তাদের মাথা ব্যাথা হল যে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চিকিৎসকদের পদগুলো কুক্ষিগত করা হচ্ছে। একটা সময়ে এসে এই রকম অবস্থা তৈরি হবে যে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক পদেও একজন প্রশাসন ক্যাডারের লোক বসানো হবে। এটিই কখনোই কাম্য হতে পারে না। স্বাচিবের একজন নেতা বলছেন, আমরা লক্ষ্য করছি যে, বিভিন্নভাবে প্রশাসন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দখল করতে চাইছে।

উল্লেখ্য যে, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ শহীদুল্লাহর পর আবু হেনা মোরশেদ জামানকে সিএমএসডির পরিচালক পদে দেওয়া হয়; তখন চিকিৎসকদের দুটি সংগঠনই এটির বিরোধিতা করেছিল। এর বিরোধিতা করে তারা জনপ্রশাসন সচিবের কাছেও চিঠি দিয়েছিল। তবে সরকারের একজন গুরুত্বপূর্ণ সচিব বলেছেন, সেটি ছিল একটি আপদকালীন ব্যবস্থা। সেই সময় সিএমএসডি’র বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি, অনিয়ম বিশেষ করে এন৯৫ মাস্ক, পিপিই সহ অন্যান্য কেনাকাটার ক্ষেত্রে অনেক দুর্নীতির অভিযোগ উঠছিল।

এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্যই একজন দক্ষ, সৎ, মেধাবি ও কর্মঠ কর্মকর্তাকে সিএমএসডির পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তিনি গত কয়েক মাসে সিএমএসডিকে একটি শৃঙ্খলার মধ্যে এনেছেন। উল্লেখ্য, একাদশ ব্যাচের কর্মকর্তা আবু হেনা মোরশেদ জামান ওই ব্যাচের মেধা তালিকায় প্রথম ছিলেন। একজন সৎ মেধাবি কর্মকর্তা হিসেবে তার সুনাম রয়েছে। তিনি সিএমএসডির দায়িত্ব গ্রহণের পর ক্রয় নীতিমালা সহ কেনাকাটার বিষয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করেছেন। একটি কমিটির মাধ্যমে সবকিছুর প্রাক্কলিত মূল্য যাচাই-বাছাই করে তিনি কেনাকাটার ক্ষেত্রে একটি নিয়ম শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনেছেন।

এখন সরকার মনে করছে যে, আবু হেনা মোরশেদ জামান তার কাজ করেছেন। তিনি যে নীতিমালা এবং কেনাকাটার নিয়ম নীতিগুলো তৈরি করেছেন এর উপর ভিত্তি করে অন্যরা কাজ করতে পারবে। আবু হেনা মোরশেদ জামান একজন অতিরিক্ত সচিব। যদিও সিএমএসডির পরিচালকের পদটি তার নিচে। তারপরেও সরকারের স্বার্থে এবং দেশের স্বার্থে তাকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। সরকারের নীতি নির্ধারকরা মনে করেন তিনি দক্ষতার সাথেই তার দায়িত্ব পালন করেছেন। চিকিৎসকরা এটি নিয়ে আন্দোলনে যাবার হুমকি দিয়েছে এবং একটি অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে- সরকার সেখানে একজন নতুন পরিচালক নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে বলেই জানা গেছে।                



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭