ইনসাইড আর্টিকেল

“লোকে ভুলে যায়, দাম্পত্য একটা আর্ট”

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 25/10/2020


Thumbnail

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর বলা শেষের কবিতার  কথাটুকু সব সমস্যার সমাধান মোটেই নয় আর সব সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখতে পারবে এই মন্ত্র পালন করলেই, এমনটি ও নয়। তবে, সামগ্রিক ভাবে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক সুন্দর, সৌহার্দ্যপূর্ণ ও গতিশীল রাখতে কিছু কারুকাজ করতেই হয়, রঙিণ আভায় রাঙাতেই হয়। এই নিয়ে আলোচনা করতে হলে অবশ্যই আমাদের দেশীয় সংস্কৃতি, পারিবারিক মূ্ল্যবোধ, বাঙালী জীবন আচারের কথা মাথায় রেখেই বলতে হবে। দেশের বাইরে অনেক ইংরেজী বা ইউরোপিয়ান রাষ্ট্রে দাম্পত্য জীবনের চিন্তা ধারা ও মন্ত্র অনেক ক্ষেত্রে আলাদা।

বাংলাদেশের শহুরে জীবনের ব্যয়বহুল সংসার জ্ঞাপন করতে গিয়ে প্রায়শই অনেক ক্লান্তি ভর করে আধুনিক কাপলদের মাঝে। সংসারে ঝুটঝামেলা থাকেই, বাজার-সদাই কেনা নিয়ে দৌ্রাত্ম, মাস শেষে টাকার হিসেব নিয়ে বসা জামাই বউ এর দর কষাকষি, বাচ্চা হবার পর বাচ্চার লালন পালন নিয়ে হাজারো তর্ক আর ব্যস্ততা ইত্যাদি চলতেই থাকে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস। তাহলে নিজেদেরকে নিয়ে চিন্তা করার প্রয়োজনীয়তা বিলীন হয়ে যায় যেটা একদমি অনুচিত। এই সব কিছুর মাঝেই করে নিতে হবে এমন ব্যবস্থা যেখানে এই দাম্পত্য জীবনের গাড়ি অথবা এক সময়কার ভালবাসা, একসাথে ঘর করবার উচ্ছাস হয়ে উঠবে না নিতান্তই পানশে অথবা উৎসাহ বিহীন।

স্বামী স্ত্রীর মধ্যে অনেক বড় ঝামেলার দরুণ পারিবারিক বৈঠকের মাধ্যমে সমাধান করা লাগতে পারে। কিন্তু তার চেয়েও বেশি ভয়ংকর হল নীরবে নিভৃতে একজন একজনকে অপছন্দ করতে শুরু করা অথবা অবহেলা করা। এই সব ক্ষেত্রে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গবেষণার ফলাফল থেকেই বোঝা যায় স্বামী স্ত্রীর সম্পকটাকে লালন করা, মনের রঙ মিশিয়ে চিত্রায়ন করা কদাচিৎ কতটা জরুরি। তারপরও এই জীবন সংসার যাপনের প্রক্রিয়া এবং সফলতা কখনোই কিছু পরিসংখ্যান অথবা গবেষণার উপর পুরোপুরি নির্ভর করতে পারে নাহ। তারপর ও সেই পরিসংখ্যান ও প্রাপ্ত ফলাফল থেকে নিয়ে, বাঙালী সমাজের বিবাহিত জীবনের টানাপড়েন গুলো পরিদর্শন  ও উপলব্ধি করে সব মিলিয়ে নিন্মোক্ত কথাগুলো আপনাদের সাথে আলোচনা করা যেতেই পারে।   

বিয়ের আগে সব জায়গায় ঘুড়ে বেড়ানো কাপলদের দেখা যায় হঠাৎ বিয়ের কয়েক বছর পর অথবা মা বাবা হবার পর কোথাও একসাথে ঘুরে বেড়ানো বন্ধ করে দিতে। অথবা সব সময় পরিবার সমেত ও বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে যাওয়ার প্ল্যান করতে যার ফলাফল সরূপ বিভিন্ন কারণেই আর যাওয়া হয় নাহ। পরিবারের সাথে যেমন বাবা মা, শশুড় শাশুড়ি, ভাই বোনের সাথে বনভোজন করতে যাওয়া, বিয়ের দাওয়াত, পারিবারিক মিলনমেলাতে একসাথে আনন্দ করা, খাওয়া দাওয়া করা অবশ্যই আশীর্বাদ সরূপ আর আনন্দের বন্যা নিয়ে আসে। কিন্তু মাসে অন্তত দুইবার শুধু নিজেদের একান্ত সময় বাইরে কাটানোর ব্যবস্থা করে নিতে হবে, একসাথে দুইজন সেজে গুজে বের হওয়া উচিত, একান্তে সময় কাটিয়ে দুটি মনের কথা আদান প্রদান করা প্রয়োজনের চেয়েও প্রয়োজন।

আর সবচেয়ে ভাল হয় একসাথে চ্যালেঞ্জিং অথবা উত্তেজনাপূর্ণ, নতুন কোন কাজ, অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাওয়া, ভ্রমণ করা, মজাদার বিভিন্ন মুভি দেখা, একসাথে হঠাৎ কোথাও হারিয়ে যাওয়া ইত্যাদির মাধ্যমে একসাথে ভিন্ন পরিবেশে ভিন্ন আবেশে জীবনকে চালিত করতে হবে। সেক্ষেত্রে বাচ্চা থাকলে অবশ্যই বাচ্চাকে নিরাপদ স্থানে একদিন বা দুইদিন রাখার ব্যবস্থা করতে হবে, পরিবারকে যুক্ত করে অনুরোধ করতে হবে। স্বামীর পরিবার একবার সাহায্য করল আবার অন্য বেলায় বউয়ের পরিবার, মা, বোন খেয়াল করল বাচ্চার। তার মানে হল এই ব্যবস্থাপনা এবং উদ্যোগের ক্ষেত্রে পুরুষ স্ত্রী দুজন কে সমানতালে এগিয়ে আসতে হবে নিজেদের ভালোর জন্য, আনন্দময় পরিস্ফুটিত সংসার জীবন প্রতিষ্ঠা করার জন্য।

এরপর আরো কিছু ব্যাপার আছে যেখানে একজন আরেকজনের জীবনকে অনেক প্রভাবিত করতে পারেন। একজন আরেকজনের পেশাকে সম্মান দিতে হবে এবং পেশা ও নিজ নিজ শখের বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে পারেন। যতই ক্লান্তি লাগুক বা সময় কুলাচ্ছে না মনে হোক, প্রতি সপ্তাহে একসাথে কোন কাজ করুন যা কোন এক পক্ষকে অনেক আনন্দ দিবে। এভাবে দুই জনই দুই জন কে পালাক্রমে গুরুত্ব দেয়া হবে। স্বামী যদি মুভি দেখতে পছন্দ করেন, স্ত্রী সঙ্গী হবেন সপ্তাহে একদিন, বউ যদি বই পড়া পছন্দ করে, বারান্দায় বসে একসাথে দুইজন বই পড়তে পারেন, স্ত্রী যদি উচ্চ শিক্ষিত হয়ে থাকেন, আপনার সঙ্গীর অফিসের কাজে বুদ্ধি দিয়ে সহায়তা করতে পারেন যখন স্বামী বাসা থেকে অফিসের কাজ করে তখন। এবার পুরুষদের জন্য যেটা বলা তা হল, কোন ভাবেই বাচ্চা হবার পর বাচ্চা পালনের সমস্ত দায়িত্ব স্ত্রীর উপর ফেলা যাবে নাহ কারণ বাচ্চা ঠিক ভাবে লালন পালন করার মত কঠিন কাজ খুব একটা নেই আর তাই এতে দুই জনেরই হাত লাগানো উচিত। এখানে বাচ্চার কাজ বলতে শুধু ভরণ - পোষণ বুঝানো হয় নি। এই একটা ভুলের কারণে বাকি সব কিছু পন্ড হতে পারে। আপনার স্ত্রী হয়ত কখনই আপনার জন্য, নিজের জন্য, নিজেদের জন্য সময় বের করতে সক্ষম হবে নাহ।

এবার আসি ঝগড়া, কথা কাটাকাটি, মনোমালিন্য নিয়ে। এটা সাংসারিক জীবনের একটি অসুন্দর কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ও স্বাভাবিক অংশ। যেখানে একই ঘরে জন্ম নেয়া ভাইবোনের সাথে অদ্ভূত কিছু বিষয় নিয়ে রাগারাগি অথবা মতভেদ হয়, হয়তবা জন্মদাতা মা বাবার কোন বিরুদ্ধাচরণের ফলে শত্রুর মত মনে হয়, সেখানে দুটি ভিন্ন পরিবারের, ভিন্ন পরিবেশের দুই জন মানুষ একসাথে থাকবে আর মতবিরোধ হবে না, এটা একটু বেশি চাওয়া হয়ে যায়। কিন্তু অনস্বীকার্য ব্যপার হল দুজনেরই বিষয়গুলো বুঝতে হবে আর একে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে। একপাক্ষিক হলে হবে না বিষয়টি। আবার শুধু লিঙ্গ ভেদে কোন অসম্মান বা হেয় করা যাবে না একে অপরকে যেটা বাংলাদেশে অনেক বেশি পরিলক্ষিত। এমনকি বিচ্ছেদ অথবা পৃ্থক বসবাসের ক্ষেত্রেও অসম্মানের কোন জায়গা থাকা উচিত নয় বিশেষ করে ছেলে মেয়ে থাকলে কারণ এতে সন্তানের উপর বিরুপ প্রতিক্রিয়া পড়ে।

সেক্ষেত্রে দাম্পত্য জীবনে অনেক বেশি প্রয়োজন একে অন্যের মতের প্রাধাণ্য দেয়া যতটুকু সম্ভব আবার তার মানে এই নয় অন্যায় আবদার মেনে নিতেই হবে, তাহলে তো এই সম্পর্ক পার্টনারশীপ হলই নাহ। আর দাম্পত্য জীবনের মাঝে তৃ্তীয় পক্ষের অনুপ্রবেশ কোন ভাবেই ঘটানো যাবে নাহ একমাত্র প্রকৃ্তি ছাড়া। প্রকৃ্তি অনেক উপশম করে, শান্তি প্রদান করে। দুজন কালে ভাদ্রে প্রকৃতির সান্নিধ্যে গিয়ে প্রশান্তি লাভ করা যেতে পারে যা সম্পর্কতে ও ভালবাসা আনবে। এই অদ্ভুতভাবে ঘনিষ্ঠ কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে খুবই ঠুনকো এই সম্পর্কটিকে ছবি আকার মত করে বিভিন্ন রঙের সংমিশ্রণে সাজিয়ে নিতে হবে চিন্তা চেতনা, মায়া মমতা, যুক্তি আর শ্রদ্ধা দিয়ে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭