ইনসাইড আর্টিকেল

দৃষ্টি হোক সীমাহীন ভাবনার ঘটুক বিস্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 26/10/2020


Thumbnail

প্রথম দুর্গা পূজা শুরু হয়েছিল ১৬০৬ সালে। অবিভক্ত বাংলার নদীয়া জেলার মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র দুর্গা পূজার প্রচলন করেন। পরে নবদ্বীপ,শান্তিপুর, কৃষ্ণনগর থেকে কুমোররা ভালো আয়ের আসায় এই কলকাতায় বসবাস করতে শুরু করেন। এরপর ১৭৫৭ সালে শোভাবাজার রাজবাড়ির রাজা নবকৃষ্ণ দেব কলকাতায় দুর্গা পূজা শুরু করেন। তখনকার দিনে কুমোররা জানত না যে সিংহ কি রকম দেখতে হয় তাই রাজা নবকৃষ্ণ দেবের বাড়ির দুর্গা প্রতিমায় সিংহের জায়গায় ঘোড়ার রূপ দেওয়া হয়। সেটির প্রচলন আজ অব্দি অব্যাহত। দুর্গা উৎসবের শুরুর আনন্দটা এখান থেকেই। তবে উৎসব বলতে সাধারণত সামাজিক, ধর্মীয় এবং ঐতিহ্যগত প্রেক্ষাপটে পালিত আনন্দ অনুষ্ঠানকে বোঝায়।

বাংলায় প্রচলিত উৎসব মূলত তিন ভাবে পালিত হয়  যেমন লোকায়িত উৎসব, সামাজিক উৎসব এবং ধর্মীয় উৎসব । উৎসব আনন্দ প্রকাশ ও লাভের মাধ্যম, এক কথায় যাকে বলা যায় আনন্দানুষ্ঠান; ইংরেজিতে একে ‘এ জয়ফুল অব অনারিফিক সেলিব্রেশন’ বলে সংজ্ঞায়িত করা হয় । উৎসব পরিবারকেন্দ্রিক হতে পারে, আবার ব্যাপকভাবে সমাজকেন্দ্রিকও হতে পারে। কালের বিবর্তনে এসব উৎসবের কোনোটির রূপ বদলায়, কোনোটি বিলুপ্ত হয়, আবার কোনোটি নতুন সৃষ্টি হয়। উৎসবসমূহের কোনোটিতে থাকে সমাজ ও জাতীয়তার ছাপ, কোনোটিতে ধর্মের ছাপ, আবার কোনোটিতে থাকে রাজনীতির ছাপ। আদিম সমাজে মানুষের খাদ্যকামনাকে কেন্দ্র করে যে উৎসবের শুরু হয়েছিল, আজ তা নানা বর্ণ ও বৈচিত্র্যে পূর্ণ। তবে সব অনুষ্ঠানের মূলেই রয়েছে আনন্দ লাভ। 

আপনাদের স্মৃতির থলে হয়ত এরকম অনেক আনন্দে  পরিপূর্ণ। আমার মনে আছে ছোটবেলায় স্কুল থেকে ফিরে খাওয়া দাওয়া শেষে প্রায়ই মা একটা বাটি এগিয়ে দিয়ে বলতেন শুভর মা পাঠিয়েছে।  শুভ আমার প্রাথমিক স্কুলের বন্ধু। আমরা একই স্কুলের একই ক্লাসে পড়তাম। বাটিতে হরেক রকমের নাড়ু, মিষ্টান্ন, আর ফলমূলে ভরা থাকত । এগুলো পূজা উপলক্ষে পাঠানো হত । এগুলো শুধু যে আমাদের বাড়িতে পাঠানো হত তা কিন্তু নয় । সাধ্যমত সকল ধর্মের প্রতিবেশীদেরই পাঠানো হত । আবার শবে বরাত উপলক্ষে আমাদের অঞ্চলে হরেক রকমের হালুয়া এবং চালের গুঁড়া দিয়ে রুটি বানিয়ে সকল ধর্মের প্রতিবেশীদের মাঝে বিলি করার রেওয়াজ ছিল। আমার স্পষ্ট মনে আছে এই আদান প্রদান গুলো আমরা কে কোন ধর্মের তা কখনোই প্রশ্ন হয়ে দাড়ায়নি  ।

একই ভাবে স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখি তখন বন্ধু বান্ধবের পরিধিটাও বড় হয়ে যায়। তখন পরিচয় হয় আরও সব ধর্মিয় ও সামাজিক উৎসবের সাথে। বড়দিনের কেক খাওয়ার জন্য আমরা গীর্জায় এবং খৃষ্টান বন্ধুদের বাসায়ও হাজির হয়ে যেতাম। এছাড়া আদিবাসী বন্ধুদের নানান উৎসবের জন্য আমারা মুখিয়ে থাকতাম। আবার দুর্গা পূজা শুরু হওয়ার আগে আমরা বন্ধুরা মিলে রাত জেগে মন্দির সাজগোজ করতাম। তেমনি ঈদুল ফিতর বা  ঈদুল আযহায় আসতো আমাদের সকল ধর্মের বন্ধু বান্ধব ও তাদের পরিবারের সদস্যরা । সেই আনন্দের প্রকাশ হয়ত ভাষা দিয়ে করা সম্ভব নয় । "ধর্ম যার যার, উৎসব সবার" হয়ত নিজেদের অজান্তেই এই কথাটি আমাদের মনের ভিতরে গাঁথা ছিল। 

আজ বিজয়াদশমী ,নবরাত্রির শেষে প্রতি বছর এই দিনে উদযাপিত হয় একটি প্রধান হিন্দু উৎসব। বিজয়াদশমী  ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পৃথক পৃথক ভাবে উদযাপিত হয়। তারা দক্ষিণ, পূর্ব, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং ভারতের কয়েকটি উত্তর ভারতীয় রাজ্যে বিজয়াদশমী ধর্ম পুনরুদ্ধার ও সুরক্ষার জন্য মহিষাসুরের বিরুদ্ধে দেবী দুর্গার জয়কে স্মরণ করে দুর্গাপূজার সমাপ্তি চিহ্নিত করে । 

"পৃথিবীর সকল প্রান্তের সনাতন ধর্মালম্বীসহ সকল ধর্মের সকলের জন্য রইলো স্বারদীয় শুভেচ্ছা"  



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭