ইনসাইড আর্টিকেল

অষ্টম আশ্চার্য KKH

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 26/10/2020


Thumbnail

কারাকোরাম মহাসড়ক সংক্ষেপে KKH নামে পরিচিত। এছাড়া জাতীয় মহাসড়ক ৩৫, অথবা চীন-পাকিস্তান বন্ধুত্ব মহাসড়ক নামেও পরিচিত এই  KKH, এটি পাকিস্তানের একটি জাতীয় মহাসড়ক, যা পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের হাসান আবদাল থেকে গিলগিত-বালতিস্তানের খুঞ্জেরব পাস পর্যন্ত বিস্তৃত। যেখানে এটি চীন-পাকিস্তান সীমান্ত পেরিয়ে চীনের জাতীয় মহাসড়ক N-৩১৪ এর সাথে সংযুক্ত হয়েছে। মহাসড়কটি পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশ এবং খাইবার পাখতুনখোয়া গিলগিট-বালতিস্তানকে চীনের জিনজিয়াং উইঘুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের সাথে সংযুক্ত করেছে। মহাসড়কটি একটি জনপ্রিয় পর্যটন আকর্ষণ, এবং এটি বিশ্বের সর্বোচ্চ পাকা রাস্তাগুলির মধ্যে একটি। কারাকোরাম পর্বতমালার মধ্য দিয়ে, খুঞ্জেরব পাসের নিকটবর্তী স্থানে KKH সর্বাধিক উঁচু। যার উচ্চতা প্রায় ৪,৭১৪ মিটার বা ১৫,৪৬৬ ফুট। কারাকোরামার উচ্চতর উচ্চতা এবং ভয়াবহ প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে দিয়ে নির্মাণ করার কারণে, এটা প্রায়ই পৃথিবীর অষ্টম আশ্চার্য হিসাবে উল্লেখ করা হয়। এটি এশিয়ান হাইওয়ে এএইচ-৪ এর অংশ।

পাকিস্তান প্রথম দিকে মিনতাকা পাস দিয়ে রুটে যাওয়ার পক্ষে ছিল। ১৯৬৬ সালে চীন পাকিস্তানকে বোঝায় যে মিনতাকা বিমান হামলার ক্ষেত্রে আরও বেশি সংবেদনশীল হবে তার পরিবর্তে দুরারোহ খুঞ্জেরব পাসের প্রস্তাব দেয়। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন ক এতে প্রায় ৮১০জন পাকিস্তানি এবং প্রায় ২০০ চীনা শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছিলেন, যাদের বেশিরভাগের মৃত্যু হয়েছে সড়ক নির্মাণের সময় ভূমিধসে এবং নিচে পড়ে গিয়ে। নির্মাণ চলাকালীন সময়ে মারা যাওয়া ১৪০ জনেরও বেশি চীনা শ্রমিককে গিলগিতের চীনা কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। কারাকোরাম মহাসড়কের এ পথটি প্রাচীন সিল্ক রোডের অনেকগুলি পথের একটি চিহ্ন বহন করে।

পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর মেজর পারভেজ আকমল বলছেন এই রাস্তা তৈরির দক্ষতা তখন আমাদের ছিল না। পাথরস্খলন- ভূমিধস, পাহাড়ি উচ্চতায় কাজ করা এসব দিক দিয়ে পাকিস্তানি সেনা সদস্যদের অভিজ্ঞতা ও সম্পদের দারুণ অভাব ছিল। তিনি বলেন, সেখানে আবহাওয়া ও পরিবেশ এমন ছিল যে কোথাও প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় –তুষারে বরফে তাদের শরীরে ক্ষত তৈরি হত। আবার একইসঙ্গে প্রচণ্ড কড়া সূর্যের তাপে তাদের চামড়া ঝলসে যেত। কাজেই প্রতিকূল আবহাওয়া সইয়ে না নেওয়া পর্যন্ত খঞ্জোরাব পৌঁছে কাজ শুরু করা তাদের জন্য অসম্ভব ছিল। আবহাওয়া, উচ্চতা, সইয়ে নেবার সুযোগ আমাদের দেওয়া হয়নি। কোনও সাহায্য ছিল না, ফলে বিষয়টা খুবই কঠিন হয়েছিল আমাদের জন্য।

কারাকোরাম মহাসড়ক জনগণের ব্যবহারের জন্য খুলে দেবার মাত্র এক বছর আগে একশ কিলোমিটার পথ তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয় মেজর আকমলকে। তিনি সড়ক ব্যবস্থাপনা ব্যাটালিয়নের কোম্পানি কমান্ডার হিসাবে যোগ দিয়েছিলেন। আকমল বলেন, "দেশ-ভাগের অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ভারত কাশ্মীরের একটা বড় অংশ নিজের অর্ন্তভুক্ত করে নেয়। ফলে সেসময় পাহাড় দিয়ে চলাচলের যে রাস্তাটা ছিল তা বন্ধ হয়ে যায়। একমাত্র যাতায়াতের পথ হয়ে ওঠে কাঘান উপত্যকা দিয়ে। কিন্তু ওই পথে একটা সমস্যা ছিল। ওই রাস্তাটা বছরে মাত্র তিন মাস খোলা থাকত। ১৯৫৮ সালে যখন জেনারেল আইয়ুব খান ক্ষমতায় আসেন – প্রেসিডেন্ট হয়ে- তিনি তখন গিলগিট – কারুড়া পথটি তৈরির নির্দেশ দেন।"

গিলগিট-বালতিস্তান অঞ্চলকে প্রাচীন সিল্ক রোডের সাথে সংযুক্তকারী এ মহাসড়কটি চীনের জিনজিয়াং অঞ্চলের কাশগার থেকে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদ পর্যন্ত।  এই KKH বা কারাকোরামের দৈর্ঘ্য ১,৩০০ কিলোমিটার। আর মাইলের হিসাবে  ৮১০ মাইল দীর্ঘ।। অ্যাবোটাবাদ থেকে মহাসড়কটি দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে এন-৩৫ হিসেবে প্রসারিত, যা পাকিস্তানের হাসান আবদালে গ্রান্ড ট্রাঙ্ক রোড এন-৫ এর সাথে সংযুক্ত। 

পাকিস্তান ও চীন সরকার দ্বারা নির্মিত কারাকোরাম মহাসড়ক চীনের ফ্রেন্ডশিপ হাইওয়ে নামে পরিচিত। যা নির্মাণ করতে সময় লেগেছিল প্রায় দশ বছর। ১৯৫৯ সালে এই মহা সড়কের কাজ শুরু হয়েছিল এবং ১৯৭৯ সালে তা সম্পূর্ণ হয় এবং এই একই বছরে KKH জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছিল। পাকিস্তান অংশটি পাকিস্তান সেনা বাহিনীর প্রকৌশল বিভাগের ফ্রন্টিয়ার ওয়াকর্স অর্গানাইজেশন (এফডব্লিউও) দ্বারা নির্মাণ করা হয়েছে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭