ইনসাইড বাংলাদেশ

দেশব্যাপী বোমা হামলার ১২ বছর

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 17/08/2017


Thumbnail

আজ সেই কালো ১৭ আগস্ট। ২০০৫ সালের এই দিনে তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ৬৩ জেলায় একযোগে বোমা হামলা চালায় নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)। বাংলাদেশের মুন্সীগঞ্জ ছাড়া প্রতিটি জেলায় এই হামলা হয়। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত ভয়াবহ হামলা চলে। এই ঘটনায় দুইজন নিহত ও শতাধিক ব্যক্তি আহত হন।

দেশের চার শতাধিক স্থানে মাত্র আধঘণ্টার ব্যবধানে একযোগে ৫শ’ বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় জেএমবি। সুপ্রিমকোর্ট, হাইকোর্ট, জেলা আদালত, বিমানবন্দর, বাংলাদেশে থাকা মার্কিন দূতাবাস, জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়, প্রেসক্লাব ও সরকারি-আধাসরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়। বিকট শব্দে প্রকম্পিত হয়ে উঠে সারাদেশ। রাজধানীর ৩৪ টি পয়েন্ট ও জেলা শহরগুলোতে বারুদের গন্ধে এক ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি হয়। হামলার স্থানগুলোতে জেএমবির লিফলেট ছড়িয়ে দিয়ে যায় তারা । লিফলেটগুলোতে বাংলাদেশে আল্লাহর আইন কায়েম ও প্রচলিত বিচার পদ্ধতি বাতিল করার কথা বলে তাঁরা।

সিরিজ বোমা হামলা করতে ১২শ’ কোটি টাকার ফান্ড গঠন করা হয়েছিল। ফান্ডের সিংহভাগ টাকা এসেছিল মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ থেকে। বাকি অর্থ যুদ্ধাপরাধীদের গঠিত একটি রাজনৈতিক দল ছাড়াও বিভিন্ন এনজিওর মাধ্যমে  যোগান দেওয়া হয়েছিল। প্রথম দিকে বিএনপি জামায়াতের পরোক্ষ মদদে সংগঠিত হয়ে ওঠা জেএমবি সারাদেশে তাদের অস্তিত্ব জানান দিতে মরিয়া হয়ে উঠে। তারই ধারাবাহিকতায় তাঁরা এই হামলা চালায়। সিরিজ বোমা হামলার পরও তাঁরা ধারাবাহিকভাবে হামলা চালিয়ে যায়।

সিরিজ বোমা হামলার পর গ্রেপ্তার হয় শীর্ষ জঙ্গি জেএমবির আমির শায়খ আব্দুর রহমান, জেএমবির সেকেন্ড ইন কমান্ড সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলাভাই, হুজি প্রধান মুফতি হান্নান, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার অপারেশনাল কমান্ডার মুফতি মঈন উদ্দিন ওরফে আবু জান্দাল, আব্দুল আউয়াল ওরফে আদিল, জেএমবির সামরিক শাখার প্রধান আতাউর রহমান ওরফে সানি, জেএমবির শূরা সদস্য হাফেজ রাকিব হাসান ওরফে মাহমুদ, মো. সালেহীন ওরফে সালাউদ্দিন ওরফে তৌহিদ, ফারুক হোসেন ওরফে খালেদ সাইফুল্লাহ ওরফে সিরাজ ওরফে আমজাদ, জেএমবির সামরিক শাখার আরেক কমান্ডার মো. মোহতাসিম বিল্লাহ ওরফে বশির, জেএমবির বোমা বিশেষজ্ঞ মো. জাহিদ হোসেন সুমন ওরফে বোমা মিজান, জেএমবির আইটি শাখার প্রধান বুয়েটের ইঞ্জিনিয়ার মো. এমরানুল হক ওরফে রাজীব ওরফে মঈনুল ওরফে আবু তোবা ওরফে ইকবালসহ অনেকেই।

সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় সারাদেশে ১৬০টি মামলা হয়েছিল। তদন্ত শেষে ১৪৩টি মামলার চার্জশিট দেওয়া হয়। ফাইনাল রিপোর্ট (চূড়ান্ত প্রতিবেদন) দেওয়া হয় ১৭টি মামলার। ১৬০টি মামলার এজাহারে আসামি করা হয় ২৪২ জনকে। অভিযোগপত্র দেওয়া ১৪৩টি মামলায় আসামি করা হয় এক হাজার ১৫৭ জনকে। এরমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ৯৬০ জনকে।
 
এতে ২৩২ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা এবং ঝালকাঠিতে দুই বিচারক হত্যার মামলায় ৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়। ২০০৭ সালের ৩০ মার্চ এই রায় প্রদান করা হলে শায়খ আবদুর রহমান এবং বাংলা ভাইসহ ৬ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সারাদেশে বোমা বিস্ফোরণের পর বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা এবং সংবাদ মাধ্যমে জঙ্গিদের মদদদাতা হিসেবে সাবেক বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের ৮ মন্ত্রী-সংসদ সদস্য জড়িত থাকার কথা উল্লেখ করা হয়। জঙ্গিবাদে মদদ দেওয়ার অভিযোগে বিএনপি নেতা ও সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল হক, সাবেক উপমন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী আলমগীর কবির, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু, সাবেক এমপি নাদিম মোস্তফা ও শীষ মোহাম্মদের বিরুদ্ধেও মামলা হয়। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে জঙ্গিবাদে মদদ দেওয়ার অভিযোগে ব্যারিস্টার আমিনুল হকের ৩১ বছরের সাজা হয়েছিল।

সিরিজ বোমা হামলার ১২ বছর পার হলেও এখনো কমেনি জেএমবির তান্ডব। গত বছরই নব্য জেএমবি গুলশানের হলি আর্টিজান ও শোলাকিয়ায় বড় দুটি হামলা চালায়।

বাংলা ইনসাইডার/এসএম/জেডএ




প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭