ইনসাইড বাংলাদেশ

তলিয়ে যাবে রাজধানী?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 17/08/2017


Thumbnail

মাঝারি বা ভারী বৃষ্টি হলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ঢাকার পূর্বাঞ্চল, নিম্নাঞ্চলসহ পুরো রাজধানী পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। ঢাকার আশপাশ ঘিরে এখন পানি আর পানি। এমনিই ঢাকার বিষফোঁড়া জলাবদ্ধতা। এর মধ্যে বন্যায় ঢাকায় পানি প্রবেশ করলে দুর্দশার অন্ত থাকবে না নগরবাসীর। সাম্প্রতিক তথ্যমতে, আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে ঢাকার আশে পাশের নদীগুলোর পানি।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সবশেষ বন্যা পরিস্থিতির প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, ব্রহ্মপুত্র (মেঘনা), যমুনা, গঙ্গা (পদ্মা), সুরমা ও কুশিয়ারা নদ-নদী সমূহে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। আরও তিন দিন পানি বৃদ্ধি পাবে। এতে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

দুর্যোগ, খাদ্য, কৃষি, স্বাস্থ্য ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, এত ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রস্তুতি থাকলেও তা যথেষ্ট নয়।

কিন্তু দুর্যোগ মন্ত্রণালয় বলছে ভিন্ন কথা। ৯ থেকে ১৬ আগস্ট পর্যন্ত বন্যায় ৩৩ লাখ লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফসলি জমির ক্ষতি হয়েছে এক লাখ ৭২ হাজার ২১৭ হেক্টর। তবে এদের মধ্য অর্ধেক ক্ষতিগ্রস্তকে সহায়তা দেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের। এদের মধ্যে গতকাল পর্যন্ত চার হাজার ৪৫০ মেট্রিক টন চাল এবং পৌনে দুই কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে।

এদিকে, বন্যার কারণ হিসেবে আবহাওয়াবিদ ও গবেষকেরা বলছেন, দক্ষিণে বিস্তৃত এই আগস্ট ১১ আগস্ট থেকে হিমালয়ের পাদদেশীয় অঞ্চলে প্রবল বৃষ্টি ঝরাচ্ছে। ওই অক্ষভুক্ত অঞ্চলেই ব্রহ্মপুত্র ও গঙ্গা নদীর উৎস এবং অববাহিকা শুরু হয়েছে। ফলে ওই বৃষ্টির পানি গড়িয়ে এসে নেপাল, ভারত ও বাংলাদেশে বন্যার কারণ হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পর্যবেক্ষণ বলছে, দেশের প্রধান দুই অববাহিকা যমুনা ও গঙ্গা-পদ্মার নদ-নদীর পানি প্রতিদিনই বাড়ছে। ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার নদ-নদীগুলোর পানি কমতে শুরু করলেও তা এখনো বিপৎসীমার ওপরেই আছে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের গতকাল বুধবারের পূর্বাভাস সত্যি হলে, আশঙ্কা করা হচ্ছে আগামীকাল শুক্রবার থেকেই ঢাকাসংলগ্ন শীতলক্ষ্যার পানি বিপৎসীমা ছাড়িয়ে যাবে এবং পরবর্তী তিন-চার দিন তা আরো বাড়তে থাকবে।

সাম্প্রতিক বন্যায় দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রায় ২৬ জেলা প্লাবিত হয়েছে। কবলিত এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে।

আশ্রয়কেন্দ্রগুলো যেন তলিয়ে যাচ্ছে মানুষের ভিড়ে সেখানে ধারণক্ষমতা আর নেই বললেই চলে। সরকারি হিসাবে ছয় লাখের মত মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত আর বেসরকারি হিসাবে তা প্রায় ১৫ লাখ ছাড়িয়ে গেছে।

এবারের বন্যার ভয়াবহতা গত কয়েক বছরের তুলনায় অনেক বেশি। তৈরি হয়েছে ত্রাণ সংকটও। এ অবস্থায় আরও ভারি বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

ভারতের ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও গঙ্গা অববাহিকা দিয়ে পানি আসছে দেশে। এত পানি এক সঙ্গে আসলে চাঁদপুরের মেঘনার মোহনা থেকে পানি বের হতে জট লাগবে। এতে দেশের অভ্যন্তরীণ সকল নদীর পানি বেড়ে যাবে। যা, রাজধানী ঢাকার পাশের বালু ও তুরাগ নদী দিয়ে পানি প্রবেশ করে বন্যা রক্ষা বাঁধের বাইরের এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

ঢাকার কুড়িল থেকে বাড্ডা হয়ে মৌচাক-মালিবাগ বিশ্বরোডের বাইরে ভাটারা, গেন্ডারিয়াসহ নিম্নাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের আওতার বাইরে রয়েছে। ঢাকায় পানি প্রবেশ করলে এসব এলাকায় ব্যাপক জনদুর্ভোগ তৈরি হতে পারে।

ইতিমধ্যে, দেশের বিভিন্ন নদ-নদীর ৯০টি পয়েন্টের মধ্যে ৬০টি স্থানে পানি বাড়ছে ও ২৬টির কমছে। আর ২৯টি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পদ্মার পানি উঠে গেছে বিপৎসীমার ওপরে। আশপাশের সব নদ-নদীর পানিই বেড়ে যাচ্ছে দ্রুত। ঢাকার পাশের জেলা নরসিংদী ইতিমধ্যেই বন্যার কবলে পড়েছে মেঘনার পানি বেড়ে গিয়ে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, ঢাকায় বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। একই কথা বলেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারাও।

বাংলা ইনসাইডার/আরএ/জেডএ




প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭