ইনসাইড আর্টিকেল

ওবামার সংগ্রামী জীবন: হাওয়াই থেকে হোয়াইট হাউজ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 28/10/2020


Thumbnail

 

আগামী সপ্তাহেই অনুষ্ঠিত হবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। প্রতি চার বছর পরপর নির্বাচিত হন বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর এই প্রেসিডেন্ট। আর আজকের গল্প তেমনি এক সংগ্রামী মার্কিন প্রেসিডেন্টকে নিয়ে। আর সংগ্রামী এই মার্কিন প্রেসিডেন্টের নাম বারাক ওবামা। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট তিনি। যে যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকার আদায়ে এখনো চলে ‘ব্লাক লাইভ ম্যাটারস’ আন্দোলন; সেই দেশেই কৃষ্ণাঙ্গ পরিচয়ে প্রেসিডেন্ট হয়েছে ওবামা। আর ২০১৭ সালে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে দায়িত্ব ছাড়ার আগে ‘ফেয়ারওয়েল স্পীচ’ এ ওবামা বলেছিলেন, ইয়েস, উই ক্যান- উই ডিড। কৃষ্ণাঙ্গ হিসেবে ‘হোয়াইট হাউজ’ এ প্রবেশের গর্ব থেকেই এমনটা বলেন তিনি।

জীবনের বাস্তবতা ও সংগ্রাম

প্রতিটা সফল মানুষের জীবনে একটা সংগ্রামের গল্প থাকে। আর এই সংগ্রামী জীবন গাঁথা আমাদের অনুপ্রেরণা দেয়, উদ্যোগী ও উদ্যমী করে তুলে। কারও ক্ষেত্রে সংগ্রামী এই জীবন কাটে শৈশবে, আর কারও ক্ষেত্রে তরুণ বা মধ্যবয়সে। কিন্তু এখানেই যেন ব্যতিক্রম বারাক ওবামা। তার পুরোটা জীবনই যেন সংগ্রামী। মাত্র দুই বছর বয়সে থাকা অবস্থায় মা-বাবার ডিভোর্স। তারপর হাওয়াই ছেড়ে ইন্দোনেশিয়া। কালো হওয়ায় সেখানে বন্ধুদের হাতে নিগ্রহের স্বীকার। ১০ বছর বয়সে আবার হাওয়াই এ ফিরে আসা। এখানে আসার বছর দশেক পরে তার বাবা মারা যায়। হাওয়াই এ নানা-নানীর কাছে থাকতেন ওবামা। পড়াশোনা করতেন পুনাহো স্কুলে। কালো হওয়ায় এখানেও বুলিং এর স্বীকার হতে থাকে ওবামা। আর এভাবে একটা সময় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পরেন তিনি। আর এতে করে হাইস্কুলে থাকাকালীন সময়েই কোকেইন ও মারিজুয়ানায় আসক্ত হয়ে পরেন।

জীবনের মোড় পাল্টানো

প্রতিটি মানুষের জীবনে একটা ‘টার্নিং পয়েন্ট’ থাকে। থাকে জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার সূচনা বিন্দু। প্রতিকূলতার মধ্যেও তা আসে। আর এমনটা এসেছিল বারাক ওবামার জীবনেও। আর এই ‘টার্নিং পয়েন্ট’ হল ওবামার কলেজ জীবন। স্কুলের পাঠ চুকিয়ে কলেজে পড়তে হনুলুলু ছেড়ে লস এঞ্জেলেস চলে এসেছিলেন তরুণ ওবামা। এরপর নিউইয়র্কের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের স্নাতক ডিগ্রি অর্জন। এরপর বেশ কয়েক বছর চাকরিও করেন তিনি। পিতৃভূমি কেনিয়া থেকে ফিরে এসে আইন বিষয়ে ভর্তি হন হার্ভার্ডে। এরপর তিনি হার্ভাড ল রিভিউয়ের সম্পাদক নির্বাচিত হন, ঠিক দুই বছর পর ১০৪ বছরে রুদ্ধদ্বার ভেঙে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ওবামা। এটি ছিল তার জন্য বিশাল এক মাইলফলক। এরপর ১৯৯১ সালে হার্ভাড ল’ কলেজ থেকে জুরিস ডক্টর ডিগ্রি নিয়ে ওবামা শিকাগো শহরে ফিরে আসেন।

হাওয়াই থেকে হোয়াইট হাউজ

স্কুল জীবনে ‘মাই এইম ইন লাইফ’ রচনায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার কথা লিখে ছিলেন ছোট্ট ব্যারি (ওবামার ডাকনাম)। আর এমনটা তিনি যে শুধু একবার করেছিলেন তা নয়। ইন্দোনেশিয়ায় স্কুলে এমনটা করেন তিনি বিভিন্ন ক্লাশে। তবে রাজনীতিতে বারাক ওবামার অবস্থান তৈরি করে দেয় তার দেওয়া একটি ভাষণ। বলতে গেলে এই ভাষণের কারণেই হোয়াইট হাউজে প্রবেশের টিকিট পান তিনি। ২০০৪ সালে বোস্টনে দেওয়া ভাষণে বারাক ওবামা বলেন, ‘দেয়ার ইজ নো কনজার ভেটিভ অ্যামেরিকা, দেয়ার ইজ নো লিবারেল অ্যামেরিকা, দেয়ার ইজ অনলি দ্য ইউনাইটেড স্টেটস অব অ্যামেরিকা’। এই ভাষণের পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। হাওয়াই এর অখ্যাত এই কৃষ্ণাঙ্গ পুরো যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে আলোচনায় চলে আসে। ওবামা হয়ে উঠে আমেরিকার ‘রাইজিং স্টার’। আর ২০০৭ সালে ঘোষণা দিয়েই নামেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে। রিপাবলিকান প্রার্থী জন ম্যাককেইনকে হারিয়ে তিনি হন আমেরিকার ৪৪তম এবং প্রথম আফ্রিকান-আমেরিকান কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট। এরপর ২০০৯ সালে শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন ওবামা। সকল অনিশ্চয়তা কাটিয়ে দ্বিতীয়বারও জিতে নেন হোয়াইট হাউজের চাবি।

পরপর টানা দুইবার টাইম ম্যাগাজিন কর্তৃক ‘পারসন অব দ্যা ইয়ার’ নির্বাচিত হন বারাক ওবামা। নিজের লেখা বইয়ের অডিও ভার্সনের জন্য গ্রামি এ্যাওয়ার্ডও পেয়েছেন। অর্জন আর প্রাপ্তির তালিকায় রয়েছে আরও অসংখ্য পুরষ্কার। তবে সব কিছুর পেছনে রয়েছে তার জীবন সংগ্রাম। আর যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম এই কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্টের সংগ্রামী জীবন সম্পর্কে জানতে পড়তে পারেন তার নিজের লেখা ‘ড্রিমস ফ্রম মাই ফাদার’, ‘দ্য অডাসিটি অব হোপ এবং অফ দি’, ‘আই সিং: এ লেটার টু মাই ডটারস’ বইগুলো।         



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭