ইনসাইড আর্টিকেল

বিল গেটস: ধনীর দুলাল থেকে এক মানবিক ধনকুবের!

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 29/10/2020


Thumbnail

 

ইতিহাস বলে, সফলদের জীবনী সংগ্রাম গাঁথা। বেশিরভাগ সফল মানুষের জীবন কেটেছে নানা উত্থান পতনের মধ্যে দিয়ে। দারিদ্র্য আর দুর্দশায় ছিলেন সফলদের অনেকেই। আবার কেউ কেউ তো বলেই বসেন যে, দরিদ্রতাই প্রথম প্রজন্মের ব্যক্তিদের সফল করে তুলে। কিন্তু সফলদের সংগ্রামী জীবনগাঁথার আজকের আয়োজনে তুলে ধরব এক ভিন্ন মানুষ সম্পর্কে; তুলে ধরব এমন এক মানুষ সম্পর্কে যিনি বাবার অফুরন্ত বিত্ত-বৈভবের মধ্যে থেকেও বখে যাননি। বিশ্বের সেরা ধনীর তকমা নিয়েও যিনি বিলাসিতার নতুন নতুন সব রেকর্ড গড়েননি। হ্যা, পাঠক বলছি ধনীর দুলাল এই গ্রহের মানবিক ধন কুবের বিল গেটসের কথা।

‘সিয়াটলের রবীন্দ্রনাথ’ বিল গেটস

১৯৫৫ সালে ওয়াশিংটনের সিয়াটলে বিল গেটসের জন্ম। তার পিতার উইলিয়াম হেন্‌রী গেটস সিনিয়র ছিলেন একজন প্রসিদ্ধ আইনজীবী। আর মা মেরি ম্যাক্সয়েল গেটসও ছিলেন বনেদী পরিবারের। জানা যায়, শৈশবে বাবা-মা তাকে আইনজীবী বানাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দুরন্ত বিল গেটসের শিক্ষা জীবন যেন অনেকটা কবিগুরুর মতো। রবীন্দ্রনাথের মতো তিনি স্কুল না পালালেও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাকে যে, থোরাই কেয়ার করতেন তা খুব সহজেই জানা যায়। কম্পিউটারের নেশায় হার্ভার্ডের ডিগ্রি ছেড়ে দিলেন। একটি জার্নালে তার গণিত বিষয়ক নিবন্ধ প্রকাশের সুযোগ এলেও মাইক্রোসফট প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে আর ওই দিকে মনোযোগ দেননি। আর এই নিয়ে বিল গেটসের শিক্ষকদের তখন কম আক্ষেপ ছিল না।

ধনকুবের বিল গেটস

১৯৭৫ সালে মাইক্রোসফট প্রতিষ্ঠা করেন বিল গেটস। তখন তার বয়স মাত্র ২০ বছর। নিষ্ঠা আর একাগ্রতা দিয়ে ১৯৮৭ সালেই বিশ্ব ধনীর তালিকায় উঠে আসেন বিল গেটস। ১৯৯৫ থেকে ২০০৭ ও ‘০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বিল গেটস ছিলেন পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি। বর্তমানে তার মোট সম্পত্তির পরিমাণ ১০৫ বিলিয়ন ডলার। জানা যায়, প্রতি সেকেন্ডে তার আয় ৩২ হাজার টাকা। আর প্রতিদিন তিনি ৮ কোটি টাকা খরচ করলেও তার অর্থ শেষ হতে সময় লাগবে ২শ’ ১৮ বছর।

মানবিক বিল গেটস

বিশ্ব স্বাস্থ্য খাতে ব্যক্তি পর্যায়ে সবচেয়ে বেশী সাহায্য দিয়ে থাকে বিল গেটস। আফ্রিকা সহ তৃতীয় বিশ্বের অনেক দেশের স্বাস্থ্য খাত দাঁড়িয়ে আছে ‘দ্যা বিল এন্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন’ এর সাহায্যে। ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ফাউন্ডেশন নিয়ে কাজ করতে গিয়ে নিজ হাতে গড়া মাইক্রোসফটের প্রধান নির্বাহীর পদ ছেড়ে দেন বিল। স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কৃষি খাতে অনুন্নত দেশে কাজ করে যাচ্ছে এই প্রতিষ্ঠান। স্বাস্থ্য খাতে ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম সম্পর্কে এক সাক্ষাৎকারে বিল গেটস বলেন, এটা কোনো নির্দিষ্ট ধর্মের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। এটা মানবতার জন্য ঈশ্বরের কাজ! নিজেদের স্বাস্থ্য চিকিৎসায় আমরা যেমন ব্যয় করি, অন্য মানুষের স্বাস্থ্যের প্রতিও আমাদের তেমন ভাবা উচিৎ। করোনা সংক্রমণের শুরু থেকেই ভ্যাকসিন আবিস্কারের জন্য কাজ করে যাচ্ছে বিল গেটস। ১৯৯৯ সালে গেটস ফাউন্ডেশন গাবিকে ৭৫ কোটি ডলারের আর্থিক সহায়তা দেয়। আন্তর্জাতিক এই প্রতিষ্ঠানটি সংক্রামক রোগের ভ্যাকসিন ও টিকা আবিষ্কারে লক্ষ্যে কাজ।

২০০৫ সালে আরও ৩৭ কোটি ৫০ লক্ষ ডলারের আর্থিক সহায়তা দেয়। ২০০৭ সালে তারা গাবিকে আবারও ৯৫ কোটি ৭০ লাখ ডলারের অনুদান দেয়, যার মাধ্যমে পৃথিবীর অনুন্নত ৭৪টি দেশ স্বাস্থ্যখাতে সাহায্য পেয়ে থাকে প্রতিবছর। তাদের এ অর্থ মূলত নিউমোনিয়া, পোলিও, ম্যালেরিয়া রোগের ভ্যাকসিন তৈরিতে ব্যবহৃত হচ্ছে। শুধু এসবই নয়। বিশ্ব মানবতার জন্য তিনি তার সম্পত্তির বলতে গেলে প্রায় পুরো অংশই দান করে দিয়েছেন। এক সাক্ষাৎকারে বিল গেটস বলেন, মৃত্যুর পরে তিনি তার আয়ের ৯৯.৯৬ শতাংশ দান করে দেবেন এবং সন্তানেরা তার মৃত্যুর পর মাত্র ৩০ মিলিয়ন ডলার পাবে। আর এমনটা হবে তার মৃত্যুর ২০ বছরের মধ্যে।

বিল গেটসের দার্শনিক সত্তা

দার্শনিক কথাটা বললেই চুল দাড়িওলা কোন আগন্তুক কল্পনায় চলে আসে। দার্শনিক মানেই যেন ফকির বা সন্ন্যাস। বরং সত্যিকারের সফল মানেই যেন দার্শনিক। অফুরন্ত অর্থ বিত্ত থাকলেও বিল গেটস চান তার সন্তানেরা নিজেরা নিজেদের মতো কিছু করে জীবিকা নির্বাহ করুক। এমনটা এখন অনেক মা-বাবাই চান না। আমাদের উচ্চবিত্ত শ্রেণির একটা প্রবণতা হল- তারা টাকার বিনিময়ে সন্তানের জন্য সব কিনে দিতে চান। আর এজন্য সন্তানকে সময় না দিয়ে টাকার পেছনেই ছুটেন তারা। সারা বিশ্বের কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তির কিংবদন্তী ভাবা হয় বিল গেটসকে। অথচ সেই বিল গেটস তার সন্তানদের ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত মোবাইল, কম্পিউটার ঠেকে শুরু করে সকল ধরণের প্রযুক্তি পণ্য থেকে দূরে রেখেছেন।                  



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭