ইনসাইড থট

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনন্য কীর্তিসমূহ-৭

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 18/11/2020


Thumbnail

২০১০ সাল থেকে বিশ্ব চতুর্থ শিল্প বিল্পবে (4IR, Fourth Industrial Revelution) প্রবেশ করেছে যার মূল কথা হলো- স্বাভাবিক বুদ্ধিমত্তার পরিবর্তে Artificial Intelligent, Robotics, Cloud computing ইত্যাদি দ্বারা পৃথিবী পরিচালিত হবে। মানুষ তার বর্তমান পেশা হারাবে, নতুন পেশার উদ্ভব হবে। এই পরিবর্তিত অবস্থায় টিকে থাকতে হলে দরকার ব্যাপক প্রস্তুতি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সব বিষয়ে অবগত হয়ে প্রস্ততি নিয়েছেন। শুধু তাই নয়, তিনি পরিবেশ দূষনের ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন। তাই শিল্প মন্ত্রনালয়কে তিনি যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।

বৈদ্যুতিক গাড়ি (Electric Car) একটি অটোমোবাইল যা এক বা একাধিক  বৈদ্যুতিক মোটর দ্বারা চলে এবং রিচার্জেবল ব্যাটারিতে সঞ্চিত শক্তি ব্যবহার করে। ১৮৮০-এর দিকে প্রথম ব্যবহারিক বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরি হয়েছিল। অভ্যন্তরীণ ইঞ্জিন, বিশেষত বৈদ্যুতিক স্টাটার এবং সস্তা পেট্রোল এবং ডিজেল উৎপাদন শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত, ১৯ শতকের শেষদিকে এবং ২০ শতকের প্রথম দিকে বৈদ্যুতিক গাড়িগুলি জনপ্রিয় ছিল।

২০০৮ সাল থেকে ব্যাটারির মানগত অগ্রগতির কারণে এবং গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ হ্রাস করা এবং নগরীর বায়ুর মানের উন্নতি করার ইচ্ছার কারণে বৈদ্যুতিক যানবাহন উৎপাদনে একটি পুনর্জাগরণ ঘটে। বৈদ্যুতিক গাড়ির চার্জিং বিভিন্ন চার্জিং স্টেশনগুলিতে করা যেতে পারে, এই চার্জিং স্টেশনগুলি বাড়ি এবং পাবলিক উভয় জায়গায়ই স্থাপন করা যেতে পারে।

২০১৫ সালের ৩০ নভেম্বর থেকে ১২ ডিসেম্বর ফ্রান্সের প্যারিসে জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন, COP21 অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এটি ছিল ১৯৯২ সালের জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত জাতিসংঘের ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশনের পার্টির সম্মেলনের ২১তম বার্ষিক অধিবেশন(21th Conference of the parties (COP21) to the 1992 United Nations Framework Conversation on Climate Change(UNFCCC)। প্যারিসে অনুষ্ঠিত ঐ অধিবেশনে জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত জাতিসংঘের ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশনের মধ্যে গ্রীনহাউস-গ্যাস-নিঃসরণ প্রশমন, অভিযোজন বিষয়ে একটি চুক্তি হয়েছিল, প্যারিস চুক্তি-২০১৫ নামে পরিচিত।

প্যারিস চুক্তি-২০১৫ অনুযায়ী আগামী ২০৩০-৪০ এর মধ্যে কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ করে এমন যানবাহনের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে কমানোর সিদ্ধান্ত হয়। বৈদ্যুতিক মোটর যান চলাচলের সময় কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ ১০০% বন্ধ হয়। ফলে বৈদ্যুতিক মোটর যান ব্যবহার পরিবেশের জন্য ভাল। পরিবেশের কথা বিবেচনা করে জাপান ২০১০ সালে বৈদ্যুতিক গাড়ি উৎপাদন শুরু করে। ২০১৫ সালে সেগুলো বেশ জনপ্রিয় হয়। জাপান সরকার ২০৩০ সাল নাগাদ ঐ দেশের মোট গাড়ি উৎপাদনের ৫০% বৈদ্যুতিক গাড়ি উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চায়না এবং আমেরিকা কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ কমিয়ে আনার জন্য নিজ নিজ দেশের চাহিদা অনুযায়ী বৈদ্যুতিক গাড়ি উৎপাদন শুরু করেছে। বিশেষ করে আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ায় কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ ০% এ নামিয়ে আনার জন্য পেট্রল-ডিজেল এর গাড়ির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করছে। চায়না ২০১৯ সাল থেকে ভিন্ন ধরনের জ্বালানীযুক্ত গাড়ি যেমন- Hydrogen gas vehicle, Bio-gas vehicle ব্যবহার করে কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করছে। ভারত ও ইউরোপের দেশগুলো Plug in Hybrid Vehicle (PHV), যেগুলো বাহির থেকে বিদ্যুতায়িত হয়ে বৈদ্যুতিক মোটর দ্বারা পরিচালিত হয় এবং ২০% কার্বন-ডাই-ক্সাইড নিঃসরণ কমায়। ঐ সকল দেশ পরবর্তিতে PHV থেকে HV তে রুপান্তর করবে।

দূরদর্শী নেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় শিল্প মন্ত্রনালয় এরই মাঝে পরিবেশ-বান্ধব যানবাহন উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য নীতিমালা প্রণয়নের কাজ হাতে নিয়েছেন। 

*এ নীতিমালার প্রাথমিক উদ্দেশ্য হচ্ছে যানবাহনের একটি বিরাট অংশ বিশেষ করে প্যাসেঞ্জার এবং বাণিজ্যিক যানসমুহ যথাক্রমে বাস, ট্রাক, থ্রি হুইলার, অটো রিক্সা, প্যাসেঞ্জার কার ইত্যাদিকে দ্রুত এনার্জি এফিসিয়েন্সি (EV) পদ্ধতির আওতায় নিয়ে আসা।  

*এ নীতিমালায় পরিবেশ-বান্ধব বৈদুতিক শক্তি চালিত যানবাহন সংযোজন ও নির্মাণের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করে, যাতে ২০৩০ সালের মধ্যে সকল প্রকার নিবন্ধিত নতুন যানবাহনের ১৫% হবে পরিবেশ-বান্ধব বৈদ্যুতিক শক্তি চালিত যানবাহন এবং যেগুলো পরিবহণ খাতে কার্বন নিঃসরণের মাত্রা কমাতে ব্যাপক অবদান রাখতে পারবে।  

*কৌশলগত বিনিয়োগ এবং দেশীয় বাজারের জন্য উন্নততর প্রযুক্তি অবলম্বন এবং ২০৩০ এর মধ্যে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বাজারে প্রবেশের মাধ্যমে বাংলাদেশকে জ্বালানি সাশ্রয়ী যানবাহন উৎপাদনের (এনার্জি এফিসিয়েন্ট ভেহিকেল,ইইভি) কেন্দ্রস্থলে পরিণত করতে সরকার বিশেষ উৎসাহমুলক প্রণোদনা প্যাকেজ প্রদান করবে।

*কারখানার অবস্থান অর্থনৈতিক অঞ্চল বা তার বাইরে যেখানেই হোক না কেন সরকার জ্বালানি-সাশ্রয়ী যানবাহন (ইইভি) সংযোজনে বিনিয়োগের জন্য অধিকতর আকর্ষণীয় কর সুবিধা যথা কর মওকুফ, ট্যাক্স হলিডে ইত্যাদি প্রদান করবে। এছাড়াও স্থানীয়ভাবে ইইভি সংযোজন উৎসাহিত করার জন্য সরকার এসআরও জারির মাধ্যমে পার্টস ও কপোন্যান্ট আমদানির বিপরীতে শুল্ক ও ভ্যাট হ্রাস সুবিধা ঘোষণা করবে।

*দেশে বৈদ্যুতিক শক্তিচালিত (EV) যানবাহনের ব্যাপক উৎপাদন নিশ্চিতকরণ এবং যানবাহন নির্গত বায়ু-দূষণ সর্বোচ্চ পরিমানে হ্রাসের উদ্দেশ্যে সরকার নিম্নবর্ণিত সুবিধাসমূহ নিশ্চিত করবে-
 ১। আর্থিক প্রণোদনা- ক্রয় প্রণোদনা, স্ক্র্যাপিং প্রণোদনা, এবং ঋণের সুদ মওকুফ;
২। নির্ধারিত সময়ের জন্য রোডট্যাক্স এবং নিবন্ধন ফি মওকুফ;
৩। চার্জিং স্টেশন স্থাপন এবং অকেজো ব্যাটারি পরিবর্তনের জন্য বিস্তৃত নেটওয়ার্ক স্থাপন এবং সরকারি মালিকানায় তথ্যভান্ডার নির্মাণ;
৪। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (BRTA) তে দ্রুত সেবাপ্রদানকারী EV সেল স্থাপন এবং বৈদ্যুতিক শক্তি চালিত যানবাহনের উপকারিতা সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে বিস্তৃত প্রচার কার্যক্রম গ্রহণ;
৫। EV ইকোসিস্টেম বিষয়ে ব্যাপক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম গ্রহণ এবং কর্ম-সংস্থান সৃষ্টির উদ্দেশ্যে স্কিল সেন্টার স্থাপন;
 ৬। ব্যাটারি পুণঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ ইকোসিস্টেম গঠন;
 ৭। একটি জাতীয় ইলেক্ট্রিক ভ্যাহিক্যাল ফান্ড গঠন (যেখানে যানবাহন কর্তৃক নির্গমিত বায়ু দূষনের কারনে প্রাপ্ত জরিমানার অর্থ, এ সংশ্লিষ্ট কর, ফি ইত্যাদি নিয়মিতভাবে জমা করা হবে)।

সরকারের আন্তরিকতা উৎসাহ ও যানবাহন নির্গত বায়ু-দূষণ সর্বোচ্চ পরিমানে হ্রাস করে পরিবেশের উন্নয়নের লক্ষ্যে ‘বাংলাদেশি ব্র্যান্ড’ নামে দেশেই বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরি করতে চায় বিভিন্ন উদ্যোক্তাগন। বাংলাদেশের উদ্যোগক্তাদের উৎসাহ ও অনুপ্রেরণায় বিভিন্ন দেশের অটোমোবাইল ম্যানুফ্যাকচারাররা ইতিমধ্যেই ব্যাপক সাড়া দিয়েছে। জাপান ও চায়নার কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এরই মাঝে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে কারখানার তৈরীর কাজ অনেকটাই এগিয়েছে। আগামী বছর নাগাদ বাংলাদেশী ব্রান্ড‘এ বৈদু্তিক গাড়ি বাজারজাত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক আগ্রহে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে ‘Bangladesh Economic Zone Authority (BEZA) বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে গাড়ি নির্মাণের একটি কেন্দ্র বা হাব গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে। বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেছেন, ‘আমরা গাড়ি নির্মাতাদের জন্য ৫০০ একর জমি রেখেছি। বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরি করতে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানকে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে দেশে ব্যক্তিগত গাড়ি, বাণিজ্যিক যান তৈরির প্রয়োজনীয় জমি বরাদ্দ দেওয়া হবে। মোটর সাইকেল শিল্প স্থাপনের একটা সুযোগ তৈরি হয়েছে। আমরা সুযোগটি কাজে লাগাতে চাই‘। শুধু বাংলাদেশের বাজার নয়, আশপাশের দেশেও বাংলাদেশে উৎপাদিত বৈদ্যুতিক গাড়ি, যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হবে এবং বিপুল কর্মসংস্থান হবে।

চলবে...
(পরবর্তী পর্ব প্রকাশিত হবে আগামীকাল এর বাংলাইনসাইডারে।)



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭