ইনসাইড থট

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনন্য কীর্তিসমূহ-৮

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 19/11/2020


Thumbnail

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলদেশের বিজয় অর্জিত হয়। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন দেশে ফিরে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে নগর ও গ্রামের বৈষম্য দূর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, অর্থনৈতিক মুক্তি ছাড়া আমাদের স্বাধীনতার আসলে কোনো অর্থ হবে না। ভুখা-নাঙ্গা, অন্নহীন মানুষ স্বাধীন হতে পারে না। সুতরাং স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে হলে আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তি প্রয়োজন। সেজন্যই জাতির পিতা গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১৬ অনুচ্ছেদে নগর ও গ্রামের বৈষম্য ক্রমাগতভাবে দূর করার উদ্দেশ্যে কৃষিবিপ্লবের বিকাশ, গ্রামাঞ্চলে বৈদ্যুতিকরণের ব্যবস্থা, কুটিরশিল্প ও অন্যান্য শিল্পের বিকাশ এবং শিক্ষা, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের আমূল রূপান্তর সাধনের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে অঙ্গীকার  করেছিলেন। 

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আমাদের দেশে প্রায় ৮০ শতাংশেরও বেশি মানুষের ঠিকানা গ্রামে। গ্রামে বসবাসকারী অর্ধেকেরও বেশি মানুষের বয়স ২৫ বছরের কম। আমাদের দেশে গ্রামের মানুষের উপার্জন  সাধারণত শহরের তুলনায়  বেশ কম। তাই আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, নতুন প্রজন্মের ভবিষ্যৎ গঠন এবং নাগরিক জীবনযাপনে বৈষম্য দূর করার লক্ষ্যে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ একান্ত জরুরি হয়ে পড়েছিল। কারণ গ্রামের মানুষকে অবহেলিত রেখে উন্নত বাংলাদেশ গড়া সম্ভব নয়।

এমন প্রেক্ষাপটেই ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ প্রতিপাদ্য নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের এই লক্ষ বাস্তবায়নের অগ্রযাত্রায় নেতৃত্ব দেন। শহরের বিভিন্ন স্থানে বসবাসকারী অবহেলিত, অসহায় এবং ভাগ্য বিড়ম্বিত ছিন্নমূল মানুষদের গ্রামের আপন ঠিকানায় ফিরিয়ে দেয়ার জন্য ‘আশ্রায়ণ প্রকল্প‘ ও ‘ঘরে ফেরা কর্মসূচি’ হাতে নেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে ক্ষমতার পালাবদলের পর কর্মসুচি দুইটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী জাতির সামনে ‘দিনবদলের সনদ’ উপস্থাপন করে আবারও জনগণের সেবা করার সুযোগ ফিরে পান। এই সনদ তখন জনমনে ব্যাপক নাড়া দিয়েছিল, বিশেষ করে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার অঙ্গীকার লুফে নেয় তরুণ প্রজন্ম। 

উন্নয়নের ধারাবাহিকতায়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নগর ও গ্রামের বৈষম্য দূর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তার বাস্তবায়ন ঘটানোর জন্য নির্বাচনী ইশতেহারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ‘আমার গ্রাম, আমার শহর’ কর্মসূচি অন্তর্ভুক্ত করেছেন। ‘আমার গ্রাম, আমার শহর’- এই ব্যতিক্রমধর্মী ধারণা একাদশ সংসদ নির্বাচনে জনমনে ব্যাপক সাড়া ফেলে। ফলস্বরূপ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে টানা তৃতীয়বার সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ।

‘আমার গ্রাম, আমার শহর‘ এর অর্থ হল গ্রামবাংলার প্রাকৃতিক রূপ অটুট রেখে শহরের সুবিধা গ্রামে পৌঁছে দেয়া। উন্নত জীবনব্যবস্থা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জীবিকার সন্ধানে এবং ব্যবসা-বাণিজ্য করার নামে গ্রামের মানুষ আর শহরে ভিড় করবে না। দেশের প্রতিটি ঘরে পৌঁছে যাবে বিদ্যুৎ। আধুনিক শিক্ষায় আলোকিত হবে প্রতিটি গ্রাম। অত্যাধুনিক চিকিৎসাসেবা পৌঁছে যাবে প্রতিটি গ্রামে। আমার গ্রাম হবে আমার শহর।
‘আমার গ্রাম আমার শহর’ এই নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে গ্রামকেন্দ্রিক কার্যক্রম শুরু করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। গ্রামকে শহরে উন্নীত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ স্ব স্ব অবস্থান থেকে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে। অবশ্য এই প্রকল্পভুক্ত অনেক উদ্যোগ বাস্তবায়নের কাজ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার অনেক আগেই শুরু করে। ফলে ইতোমধ্যে প্রায়  শতভাগ মানুষের বিদ্যুৎসেবা নিশ্চিত হয়েছে।

এদিকে গ্রামীন রাস্তাঘাটও শহরের মত অনেক উন্নত হয়েছে। ১০ টাকায় কৃষকরা ব্যাংক হিসাব খোলার সুবিধা পাচ্ছেন। বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা-উপজেলার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা এখন বেশ ভালো। সড়ক-মহাসড়কে অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন বাস চলছে। নৌপথ ও আকাশ পথেও যোগাযোগ তুলনামূলক বেড়েছে। প্রতিটি গ্রামে ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক সুবিধা পৌঁছে গেছে। ১২ কোটির বেশি জনগণ এখন মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে। ফোনে কথা বলার সুবিধা, ডিজিটাল কৃষি সেবা, অনলাইন প্রানীসেবা সহ নানা ক্ষেত্রেই বেশ উন্নতি হয়েছে।

প্রতিটি গ্রামেই আধুনিক শহরের সব সুবিধাদি হাতের নাগালে। সুপেয় পানি, আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা ও সুচিকিৎসা, মানসম্পন্ন শিক্ষা, উন্নত পয়ঃনিস্কাশন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, কম্পিউটার, দ্রুতগতির ইন্টারনেট সুবিধা, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ও মানসম্পন্ন ভোগ্যপণ্যের বাজার সবকিছুই রয়েছে গ্রামে। গ্রামে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ আরও বাড়াতে এবং নির্ভরযোগ্য করতে সরকার গ্রুপভিত্তিক বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট ও সৌরশক্তির প্যানেল বসানোর উৎসাহ ও সহায়তা দিচ্ছে। গ্রাম পর্যায়ে কৃষিযন্ত্র, সেবাকেন্দ্র, ওয়ার্কশপ স্থাপন করে যন্ত্রপাতি মেরামতসহ গ্রামীণ যান্ত্রিকায়ন সেবা সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। এসবের মাধ্যমে গ্রামীণ যুবক ও কৃষি উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে উৎপাদনশীল কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। অকৃষি খাতের এসব সেবার পাশাপাশি হাল্কা যন্ত্রপাতি তৈরি ও বাজারজাত করতে বেসরকারি খাতের প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণ সুবিধাসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার। 

৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক ও স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির শত বাধা-বিপত্তি এবং হত্যার হুমকিসহ নানা প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন ‘উন্নয়নের রোল মডেল’ হিসেবে। শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে একসময়ের ভঙ্গুর অর্থনীতির বাংলাদেশ এখন অর্থনৈতিক উন্নয়নে অপ্রতিরোধ্য।
২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করে বাংলাদেশ হবে মধ্যম আয়ের দেশ। ২০৩০ সালে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় হবে ৫ হাজার ৪৭৯ মার্কিন ডলারের বেশি। ২০৪১ সালে উন্নত দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়াবে বাংলাদেশ। দারিদ্র্যের হার নেমে যাবে শূন্যের কোঠায়। রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা গ্রামের ভূখা-নাঙ্গা, অন্নহীন মানুষের কাছে অর্থবহ হবে। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠিত হবে, এ দেশের জনগন এমন আশাই করে।

চলবে...
(পরবর্তী পর্ব প্রকাশিত হবে আগামীকাল এর বাংলাইনসাইডারে।)

আগের লিংক: মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনন্য কীর্তিসমূহ-৭



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭