ইনসাইড বাংলাদেশ

বাংলাদেশে মৌলবাদীদের নীরব বিপ্লব

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 20/11/2020


Thumbnail

 

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ নিয়ে ধর্মান্ধ মৌলবাদী গোষ্ঠীর আস্ফালনের পর জাতির সামনে কতগুলো মৌলিক প্রশ্ন সামনে এসেছে। এই প্রশ্ন গুলোর মধ্যে প্রধান প্রশ্ন হল বাংলাদেশে একই মৌলবাদীদের নীরব বিপ্লব ঘটিয়েছে? তারা এই ধৃষ্টতার সাহস পায় কোথা থেকে? গত কিছুদিন ধরে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, মৌলবাদীরা বিভিন্ন ইস্যুতে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করছে এবং সেই চাপ প্রয়োগ করে তারা সফলও হচ্ছে। এর আগে বিমানবন্দরের সামনে ভাস্কর্য নির্মাণের প্রতিবাদ করেছিল মৌলবাদী গোষ্ঠী। সেই প্রতিবাদের মুখে সরকার ভাস্কর্য নির্মাণ থেকে সরে এসেছিল। সুপ্রীম কোর্ট প্রাঙ্গণে ভাস্কর্য নির্মাণেরও প্রতিবাদ জানিয়েছিল হেফাজতসহ কিছু মৌলবাদী গোষ্ঠী।

সরকার সেই দাবিকে সম্মান জানিয়ে ওই ভাস্কর্য সরিয়ে নিয়েছিল। হেফাজতের দাবি অনুযায়ী বাংলাদেশের সাধারণ শিক্ষার পাঠক্রমও পরিবর্তিত হয়েছিল বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। প্রগতিবাদি চিন্তাশীল ব্যক্তিরা বলছেন যে, তখন মৌলবাদীদের এই দাবি মেনে নেয়ার পরিণাম আজকের এই পরিস্থিতি। মৌলবাদরা এখন অনেক শক্তি সঞ্চয় করেছে, শুধুমাত্র রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে নয়। প্রশাসন এবং সরকারের রন্ধ্রে রন্ধ্রে মৌলবাদীরা জাঁকিয়ে বসেছে এবং তারা সরকারের জন্য একটি হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের যে মূল চেতনা অসাম্প্রদায়িক এবং ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ এই চেতনার মূলে এখন মৌলবাদীরা আঘাত করছে। দৃশ্যমান হলো যে, বাংলাদেশে দক্ষিণপন্থী ধর্মান্ধ মৌলবাদী রাজনৈতিক দল রয়েছে এবং এই দলগুলো বিভিন্ন ইস্যুতে আন্দোলন করে। একসময় একটি জনপ্রিয় পত্রিকাকে তারা জ্বালিয়ে দিতে চেয়েছিল এবং ওই পত্রিকার সম্পাদক ক্ষমা প্রার্থনা করে বেঁচে ছিলেন। বিশ্বে এবং বাংলাদেশ কোন সামান্যতম ইস্যু হয় তখনই মৌলবাদীদের আস্ফলন দেখা যায়। সাধারন  ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মনে করেন যে, ধর্মকে আঘাত করা বা ধর্মকে হেয় করা কারোরই দায়িত্বশীল আচরণ নয় এবং সেজন্য এই দাবিগুলোর প্রতি সাধারণ মানুষও একটা নীরব সমর্থন থাকে।  ক্রমশ্য এই মৌলবাদী শক্তি এখন রাষ্ট্র এবং সরকারের অনেক মৌলিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার ঔদ্ধত্য দেখাচ্ছে।  আর এটা সম্ভব হয়েছে একাধিক কারণে।

১। মৌলবাদীদের জনশক্তি:

বাংলাদেশে মৌলবাদী রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলো যে ভোটই পাকনা কেন, তাদের একটা জনশক্তি রয়েছে । বিশেষ করে হেফাজতে ইসলামের মাদ্রাসা ভিত্তিক সংগঠন, জামাত ইসলামের তৃণমূল পর্যন্ত সংগঠন এবং অন্যান্য ইসলামী দলগুলো ধর্মীয় আবেগকে কাজে লাগিয়ে জনগণের মধ্যে সঞ্চারিত হয়েছে। আর এর ফলে রাজনীতিতে তারা একটি শক্তিশালী হয়েছে।

২। প্রশাসনে মৌলবাদীদের অনুপ্রবেশ:

বাংলাদেশের প্রশাসনে আস্তে আস্তে মৌলবাদীদের অনুপ্রবেশ ঘটেছে এখন তারা জাঁকিয়ে বসেছে। প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় মৌলবাদীদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। তারা নীরবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের মূলচেতনা অসাম্প্রদায়িকতা এবং ধর্মনিরপেক্ষতা তাকে আঘাত করছে। প্রশাসনের মধ্যে একটি বড় অংশের মধ্যে সাম্প্রদায়িক চেতনা দৃশ্যমান এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে তারা গর্ববোধ করেন। অনেকেই মনে করেন যে বাংলাদেশের প্রশাসনে জামাতি করেন ঘটেছে ।

৩। আওয়ামী লীগের মধ্যে প্রতিক্রিয়াশীলদের দাপট:

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে আওয়ামী লীগ গড়েছিলেন,সেই আওয়ামী লীগ ছিল একটি সেকুলার রাজনৈতিক সংগঠন। বঙ্গবন্ধু আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে আওয়ামী লীগ পরিণত করেছিলেন। এখন আওয়ামী লীগ যেন আবার আওয়ামী মুসলিম লীগে পরিণত হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা করছে। আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে ধর্মকে প্রকাশ করার এক ধরনের সুযোগ্য বাসনা মাঝে মাঝে সাম্প্রদায়িকতাকেও হার মানিয়ে দেয়। আর অনেকেই মনে করেন, গত এক দশকে নীরবে আওয়ামী লীগে মৌলবাদীদের অনুপ্রবেশ ঘটেছে। তাদের একটি নীরব কর্তৃত্ব দলের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই সবকিছু মিলেই বাংলাদেশে মৌলবাদীদের উত্থান ঘটেছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

এখন বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী সংগঠন আছে বটে কিন্তু সেই রাজনৈতিক সংগঠন বঙ্গবন্ধুর মতো করে অসাম্প্রদায়িক চেতনার কথা বলতে পারে কি না, তা নিয়েও অনেকের সংশয় রয়েছে। তাছাড়া যেভাবে নীতি এবং পরিকল্পনায় মৌলবাদীরা হস্তক্ষেপ করছে, তাতে আগামী দিনে বাংলাদেশের সেকুলার অসাম্প্রদায়িক চেতনা এবং চরিত্র কতটুকু থাকবে সেটিও দেখার বিষয়। তবে বাংলাদেশের জনগণ কখনোই ধর্মান্ধ নয় তারা ধর্মপ্রাণ। কাজেই মৌলবাদীরা যখনই বাড়াবাড়ি করেছে তখনই এদেশের জনগণ তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আশাবাদের দিক।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭