ইনসাইড আর্টিকেল

টেলিভিশন কেন দর্শক জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 21/11/2020


Thumbnail

বিশ্ব টেলিভিশন দিবস আজ। তাই আজ খুব করে মনে পড়ছে ফেলে আসা সেই দিনগুলির কথা। যে প্রজন্মের জীবনটা ছিলো টেলিভিশন নির্ভর। শৈশবে পুরনো মডেলের একটা সাদাকালো টিভি ছিল। আর ছিল প্রায় নড়ে-চড়ে যাওয়া অ্যান্টেনারের ঝিরঝির রোগ। সে সময় শুধুমাত্র বাংলাদেশ টেলিভিশন দেখে সন্তুষ্ট থাকতে হতো। এরপর দারুণ বিপ্লব ঘটিয়ে এলো ক্যাবল টিভি।  ক্রমেই বিটিভির সঙ্গে যুক্ত হতে শুরু করলো বিভিন্ন বিদেশী চ্যানেল। দেশি আনুষ্ঠানের পাশাপাশি আমরাও দেখতে শুরু করলাম রঙবেরঙের বিদেশী অনুষ্ঠান। দিনগুলোও এখনও অনেকটা তুলে রাখা পুরনো স্মৃতির মতো।
  
এখন ফেসবুক, ইউটিউব, নেটফ্লিক্স ও মোবাইলের যুগে মানুষ আর রিমোট হাতে টিভি চ্যানেল খুলে বসে থাকে না। ওয়েব প্ল্যাটফর্মের রমরমার মধ্যে সবার ধৈর্য ও সময় কমে গিয়েছে। সৃষ্টি হয়েছে বৈচিত্র্যময় কন্টেন্টের ব্যাপক প্রতিযোগিতা। অনলাইন টিভি এখন জনপ্রিয়তার নেপথ্যে। জনপ্রিয় হচ্ছে অনলাইন ভিত্তিক সংবাদ ও বিনোদন মাধ্যম। স্মার্টফোনে সরাসরি সংবাদ আর বিনোদনের যাবতীয় আয়োজন থাকায় অনলাইন ভিডিও, নিউজ পোর্টাল, আইপি টিভি ও ইউটিউব চ্যানেলের প্রভাবে জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে স্যাটেলাইট টিভি। অনেকেই অভ্যস্ত হয়েছেন অফিসে, গাড়ীতে ও বিছানায় শুয়ে অনলাইনে সংবাদ ও বিনোদন উপভোগ করতে।  ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হচ্ছে নেটফ্লিক্সের মতো প্ল্যাটফরমগুলো। সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত ঝকঝকে প্রিন্টের ছবি দেখা যায় এসব স্ট্রিমিং সাইটে।

অনেকের মতে টিভি নাটকের দর্শক কমে গেছে। কিন্তু অন্যদিকে অসংখ্য নাটক ও সিনেমা অনলাইনে লক্ষ বার দেখছেন দর্শকেরা। ইউটিউবে মুক্তির উদ্দেশ্য মাথায় রেখেও নির্মিত হচ্ছে অসংখ্য নাটক ও সিনেমা। ইতোমধ্যে অনেক স্যাটেলাইট চ্যানলগুলোও অনলাইন পোর্টাল, অনলাইন টিভি, ইউটিউব চ্যানেল ও সোস্যাল মিডিয়ার দিকে ঝুঁকছে। সেই সঙ্গে টেক্স এবং ভিডিও কনটেন্টের বিস্তৃত ব্যবহার থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সাইটগুলোতে আপলোড দিচ্ছে তাদের কনটেন্ট।
 
১৯৪১ সালে বিশ্বের প্রথম বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপন প্রচারিত হয় আমেরিকান টেলিভিশনে ‘বুলেভো ওয়াচের’ ঘড়ির। এদিকে ১৯৬৭ সালে বাংলাদেশে প্রথম সম্প্রচারিত বিজ্ঞাপনটি ছিল ৭০৭ ডিটারজেন্ট সাবানের । আর এখন তো বিজ্ঞাপন ছাড়া টেভি ইন্ডাস্ট্রি ভাবাই যায় না। ক্রমেই একে অপরের পরিপূরক হয়ে উঠেছে টিভি ও বিজ্ঞাপন।
আরেকটি বিষয় হচ্ছে চ্যানেলের বিজ্ঞাপনের বাড়াবাড়ি ও মানসম্পন্ন অনুষ্ঠান না হওয়ায় দর্শকেরা বিমুখ হয়ে পড়ছে। এদিকে শুধু বিজ্ঞাপনের নামে যাচ্ছেতাই অনুষ্ঠান চলছে। সেখান থেকে কী তথ্য দিচ্ছি, কী শিক্ষা দিচ্ছে? সেটা ভাবার বিষয়। মানুষ চ্যানেল কেন দেখবে? কেন বিজ্ঞাপনী সংস্থা বিজ্ঞাপন দেবে? বুঝতে হবে টার্গেট কোন মানুষগুলি? তাদের বয়স, রুচি ভেদে অনুষ্ঠান বানাতে হবে। টেলিভিশনগুলোতে বিষয়বস্তুর সংকট, অপেশাদারী ব্যবস্থাপনা ও মেধার অবমূল্যায়নও হচ্ছে। প্রয়োজন উপযুক্ত ট্রেনিং, ওয়ার্কশপ ও সেমিনারের মতো বিষয়গুলো। প্রয়োজন যুগোপযোগী মার্কেটিং জ্ঞান ও বাস্তবমুখী শিক্ষা। অথচ মানন্নোয়নের এই বিষয়টি আজ মার্কেটিং পেশাজীবীদের কর্মক্ষেত্রে ভীষণভাবে অবহেলিত। এদিকে ফেসবুক, ইউটিউবসহ কয়েকটি মাধ্যম বিজ্ঞাপন গ্রাস করছে। টেলিভিশন শিল্পকে বাঁচাতে শুধু বিজ্ঞাপন নির্ভরশীলতা কমিয়ে বিকল্প আয়ের উৎস খোঁজা জরুরি।

এদিকে বাংলাদেশে নানা সংকটে এখন টেলিভিশনের পেশা ছেড়েছেন ও ছাড়তে চান অনেকেই। এ খাতের এক বিশাল অংশ বিশ্বাস করে, টেলিভিশনে কোনো ভবিষ্যৎ নেই। তাছাড়া চ্যানেলগুলো কতটা গণমাধ্যম আর প্রচারমাধ্যম এ নিয়েও বিতর্ক আছে প্রবল।
ওয়েব প্ল্যাটফর্মের রমরমার মধ্যেও অনেকেই অনেকের বিশ্বাস, এখনও টেলিভিশন র্শককে প্রভাবিত করার ক্ষমতা রাখে। ভাল মানের ধারাবাহিক হলে তা সাধারণ মানুষকে প্রভাবিত করে। টেলিভিশনের দর্শকও এখন বদল চান। আর সেখানেই ওয়েবের সঙ্গে তুলনার জায়গাটা চলে আসে। দিনের পর দিন খারাপ জিনিস দেখালে তারা প্রত্যাখ্যান করবেনই। এখন সকলের ধৈর্য ও সময় কমে গিয়েছে বৈচিত্র্যময় কন্টেন্টের ব্যাপক প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হয়েছে। তাই অতি বাণিজ্যিক মানসিকতা ত্যাগ করে সময়োপযোগী সম্ভার তুলে ধরতে হবে দর্শকের কাছে। তা না হলে চরম বিপর্যয় নেমে আসবে টিভি অঙ্গনে। করোনাকালীন গুগোল, ইউটিউব ও ফেসবুক চোখে আঙুল দিয়ে টেলিভিশনের হারিয়ে যাওয়ার বিষয়টি দেখিয়ে দিয়েছে। এক সময় হয়তো অধিকাংশ টিভি চ্যানেল পরিত্যক্ত হিসেবে বিবেচিত হলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭