ইনসাইড টক

‘ডা. মিলনের স্বপ্নের গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়নি’

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 27/11/2020


Thumbnail

ডা. মিলন, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে প্রাণ হারানো এক প্রতিভার নাম। জীবনের কথা না ভেবে দেশের মানুষ এবং গণতন্ত্রের কথা ভেবে অকাতরে প্রাণ দিয়েছেন। তার জীবন ও কর্ম নিয়ে বাংলা ইনসাইডারের কাছে স্মৃতিচারণ করেছেন তার সহযোদ্ধা কবি মোহন রায়হান। পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বাংলা ইনসাইডারের নিজম্ব প্রতিবেদক জুয়েল খান।

মোহন রায়হান বলেন, ডা. মিলন জাসদ সমর্থিত ছাত্রলীগের ঢাকা মেডিকেল শাখার সভাপতি ছিলেন। ঢাকা মেডিকেলের ইন্টার্নি ডাক্তারদের নেতা ছিলেন এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশ মেডক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। শৈশব থেকেই তার ভেতরে সংগ্রামী চেতনার জন্ম নেয় এবং ৬৯ এর গণ অভ্যুত্থান, ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে তিনি ছাত্র অবস্থায়ই অংশ নিয়েছিলেন। একটি শোষণমুক্ত গণতান্ত্রিক সমাজতান্ত্রিক অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের স্বপ্ন তিনি সারাজীবন ধারণ, লালন এবং বাস্তবায়নের সংগ্রামে যুক্ত ছিলেন।

মিলনের ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে তিনি বলেন,  ব্যবহার, মানবিকতাবোধ এবং জণকল্যাণমূলক কাজের জন্য কিকিৎসক সমাজের মধ্যে তার অসম্ভব জনপ্রিয়তা ছিলো। এরই ধারাবাহিকতায় ডা. মিলন স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন আন্দোলনের রাজপথে ছিলেন সামনের সারিতে। নীতি আদর্শের কাছে কখনও কোথাও আপোষ করেনি। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে সম্মুখসারির যোদ্ধাদের টাকা এবং ক্ষমতার অফার এসছে কিন্ত তিনি টাকায় বিক্রি হন নি। রাজপথের সহযোদ্ধা হিসেবে তাকে আমি কাছ থেকে দেখেছি। তিনি কোথাও ব্যক্তিগত সুবিধার জন্য নিজের আদর্শের সাথে আপোষ করেননি।

 ডা. মিলন স্বপ্ন দেখতেন বাংলাদেশের মানুষের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তি পাবে। মানুষের মৈলিক অধিকার বাস্তবায়ন হবে। এই চেতনা মিলনের রক্তে-মাংসে, চেতনায়, মেধা-মননে একাকার হয়েছিলো। যার ফলে আমরা কখনও তাকে আদর্শচ্যুত হতে দেখিনি। জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত তিনি গণতান্ত্রিক মুক্তির জন্য কাজ করে গেছেন। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে তিনি যখন মারা যান তখন তিনি বিএমএ’র একটি মিটিংয়ে যোগ দিচ্ছিলেন। সেসময় তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। মিলনের মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে এরশাদের পতন হয়।

এরশাদ সরকারের অমানবিক নির্যাতনের স্মৃতিচারণ করে এই কবি বলেন, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে যারা সম্মুযোদ্ধা ছিলেন তাদেরকে জেলখানায় নির্যাতন করা হয়েছে, আমাকে উল্টো করে ঝুলিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। সেসময় যারা স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লিখেছেন তাদেরকেও জেল খাটতে হয়েছে। এরশাদের বিপক্ষে লেখার কারণে সেসময়ের জনপ্রিয় সাংবাদিক সৈয়দ বোরহান কবীরকে গ্রেফতার করে নির্যাতন করা হয়েছিলো। আরো অনেক সাংবাদিক, রাজনৈতিক কর্মী এবং পেশাজীবিদেরকে তুলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছিলো কিন্তু এরশাদ সরকারের কাছে কেউ মাথা নত করেননি।

মিলনের চেতনা কতোটা বাস্তবায়ন হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টা খুবই দুঃখ্যজনক। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য মিলন যে স্বপ্ন ধারণ-লালন করেছিলেন সেই গণতন্ত্র এখনও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেলো না।  সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখল করার জন্য এরশাদের ফাঁসি হওয়া উচিত ছিলো কিন্তু তা হয়নি। এরশাদের পতন হয়েছে, নূর হোসেন, ডা. মিলনরা জীবন দিয়েছেন কিন্তু তাদের স্বপ্নের গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রুপ পায়নি। তাদের আত্মদান স্বার্থক হয়নি।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭