ইনসাইড বাংলাদেশ

প্রকল্প পরিচালক: যেন আলাদিনের চেরাগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 27/11/2020


Thumbnail

বাংলাদেশে এখন উন্নয়নের জোঁয়ার চলছে। বিভিন্ন উন্নয়নের মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন চলছে। আর এই সমস্ত উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়নের জন্য গ্রহণ করা হয়েছে শতাধিক প্রকল্প। আর এসব প্রত্যেকটা প্রকল্পের একজন করে প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। এখন সচিব হওয়া কিংবা বিদেশে কূটনীতিক চাকরি নয়। প্রকল্প পরিচালক হওয়া যেন সব চেয়ে লাভজনক চাকরি। প্রকল্প পরিচালক হওয়া মানেই আলাদিনের চেরাগ। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতির ব্যাপারে অনুসন্ধান করতে যেয়ে টিআইবি দেখেছে, প্রকল্প পরিচালক হওয়ার জন্য আমলাদের মধ্যে রীতিমত প্রতিযোগিতা চলছে। একটি প্রকল্পের পরিচালক হওয়া মানেই আলাদিনের চেরাগ পাওয়া, সারা জীবন যেন তাকে আর কিছু করতে হবে না। এক প্রকল্পের পরিচালক হলেই বাকি জীবন রাজার হালে কাটানো যাবে। এমন একটি পরিস্তিতি তৈরি হয়েছে। 

করোনার সংক্রমণের কথাই যদি ধরা যায়, দেথা যাবে দেশে করোনা সংক্রমন শুরু হওয়ার সাথে সাথে এডিবি এবং বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশেকে অর্থায়ন করে। সেই অর্থায়নে কোভিড রেসপন্স প্রজেক্ট চালু করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এই দুটি প্রকল্পেরই প্রকল্প পরিচালক করা হয়েছিল একজন বিএনপি ঘরনার চিকিৎসককে। তিনি ওই প্রকল্পে কি করেছেন তা নিয়ে গণমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। এমনকি গাড়ীর ব্যবসায়ীদেরকেও মাস্ক কেনার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। মাস্কের দাম, পিপিইর দাম যেভাবে বাড়িয়ে ধরা হয়েছিল তা বিস্ময়কর। এখন ওই প্রকল্প পরিচালক নেই।

বাংলাদেশের যে কোন প্রকল্পেরই বাজেট এবং প্রক্কলিত ক্রয় তালিকা দেখলে ভীরমি খেতে হয়। কোন কোন প্রকল্পে একটি সাইকেলের দাম ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে। কোন প্রকল্পে সাধারন একটা চেয়াররের দাম ধরা হয়েছে এক লক্ষ টাকা। আর এই প্রকল্পের দুর্নীতির কথা প্রতিদিনই পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে। তারপরও প্রকল্পে দুর্নীতি বন্ধ হচ্ছে না। একটি প্রকল্প যখন তৈরি করা হয় তখন এর একটি দলিল, পরিকল্পনা কমিশন থেকে অনুমোদন করিয়ে নিতে হয়। এই প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনে যাওয়ার আগে প্রকল্পের প্রক্কলিত ব্যয় এবং কেনাকাটার প্রক্কলিত হিসেব মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে হয়। মন্ত্রণালয় সেটা অনুমতি দিলে পরিকল্পনা কমিশনে যায়।  আর পরিকল্পনা কমিশন সেটিকে অনুমোদন করে। আর তাই প্রকল্পের যে দুর্নীতি আর অস্বাভাবিক কেনাকাটার খরচ সেটির দায় শুধু একার না। 

টিআইবির একজন গবেষক মনে করছেন যে, এই প্রকল্পের দুর্নীতিটা হচ্ছে একটা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে। এখানে শুধু প্রকল্প প্ররিচালকই জড়িত নন, তার সঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের কিছু কিছু ব্যক্তিও জড়িত রয়েছে। সবাই মিলেই দুর্নীতি করে। কারণ যখন একটি জিনিশের প্রক্কলিত মুল্যে বেশি ধরা হয়, দশগুণ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। তখন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব এটিকে তদন্ত করা এবং ওই দামের ব্যাপারে আপত্তি করা। তাহলে দুর্নীতির ক্ষেত্রে একটা জবাবদিহিতা স্থাপন করা যায়। মন্ত্রণালয় যদি নাও করে এটি যখন পরিকল্পনা কমিশনে যায় তখন পরিকল্পনা কমিশনের দায়িত্ব এই প্রকল্পের ব্যয়ভার গুলোকে যাচাই বাছাই করা এবং সঠিক আছে কিনা তা ক্ষতিয়ে দেখা। কিন্তু সেটিও হয় না, যার ফলে দুর্নীতি হচ্ছে।

প্রকল্পগুলোই এখন বাংলাদেশে দুর্নীতির হট স্পট বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে এই প্রকল্পের দুর্নীতির ভাগিদার সবাই হলেও প্রকল্প পরিচালক থাকেন সর্বেসর্বা এবং একজন প্রকল্প পরিচালকের একাধিক গাড়ি থাকেন।  তারা প্রকল্পের মাধ্যমে যে আয় উপার্জন করে সেই আয় উপার্জন দিয়েই চলে। প্রকল্প থেকে তাদের বিভিন্ন রকম যে অবৈধ আয়, সেটি দিয়েই তারা ফুলে ফেঁপে ওঠে। আর এ কারণেই বড় বড় প্রকল্পের পরিচালক হওয়ার জন্য তদবির দেন-দরবার চলে সবচেয়ে বেশি।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭