ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

কৃষক আন্দোলন চলছেই ভারতে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 30/11/2020


Thumbnail

বিতর্কিত কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে টানা কয়েকদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে  ভারতের পাঞ্জাব ও হরিয়ানার কৃষকরা। হাজার হাজার কৃষক এখন দিল্লীতে অবস্থান করছে। তাদের সাথে একে একে যুক্ত হচ্ছেন অন্য রাজ্যের কৃষকরাও।

ট্রাক্টর ও ট্রলিতে বেশ কয়েক মাসের রেশন নিয়ে, খোলা আকাশের নিচে তাঁবু খাটিয়ে শীতের রাত কাটানোর প্রস্তুতি নিয়েই অনেকে এখন দিল্লীর পথে। এখন রাজধানীর `লাইফলাইন` জাতীয় সড়ক ৪৪ কার্যত তাদেরই দখলে। আন্দোলনরত হাজার হাজার কৃষক কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়া আগাম আলোচনার প্রস্তাবও ফিরিয়ে দিয়েছেন।

সম্প্রতি পার্লামেন্টে পাস হওয়া তিনটি বিতর্কিত কৃষি বিল প্রত্যাহারের দাবি তাদের। দাবি মানা না হলে রাজপথ ছাড়তে নারাজ ভারতের আন্দোলনরত কৃষকরা। 

সরকার ও বিরোধীরা কি বলছে? 

ভারতের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভায় আগেই পাস হওয়া কৃষি সংস্কারের দুটি বিল গত ২০ সেপ্টেম্বর উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় কণ্ঠভোটে পাস হয়।

ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) বলছে, কৃষি সংস্কার সংক্রান্ত এসব বিলে ভারতের কৃষকদেরকে বৃহৎ ক্রেতাদের কাছে সহজে পণ্য বিক্রির সুবিধা করে দেওয়া হয়েছে।

নতুন এ বিলগুলো মান্ধাতার আমলের আইনের সংস্কারের পাশাপাশি কৃষিপণ্যের ব্যবসা থেকে দালাল ও ফড়িয়াদের উৎখাত করবে। কৃষকদের সুযোগ করে দেবে ওয়ালমার্টের মতো খুচরা বিক্রেতা এবং প্রাতিষ্ঠানিক ক্রেতাদের কাছে পণ্য বিক্রি করার।

তবে বিরোধীরা বলছে, বিজেপির আনা সংস্কার বিলগুলোতে কৃষকদের দর কষাকষির সুযোগ সীমিত করে দেওয়া হয়েছে; যে কারণে খুচরা বিক্রেতারা এখন কৃষকদের উপর বেশি মাতবরি করার সুযোগ পাবে।

তাছাড়া, বিলে কৃষিপণ্য বিপণনের ক্ষেত্রে কোথাও কৃষকদের না রাখায় এর পুরো সুবিধাই পাবে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। ফলে বিভিন্ন কৃষক ইউনিয়ন এবং বিরোধীদলগুলো এই বিলকে কৃষকদের স্বার্থবিরোধী হিসাবেই দেখছে।

প্রায় ৫০ কোটি কৃষক এখন আন্দোলনে নেমে পড়ছে। এতোদিন করোনার কারণে স্থির থাকলেও গত এক সপ্তাহ ধরে তারা আর নিয়মনীতি তোয়াক্কা করছেন না। 

তবে লাগাতার এই তুমুল বিক্ষোভের মধ্যেও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কৃষি বিলের সমর্থনে কথা বলেছেন। তার কথায়,কিছু মানুষ ব্যক্তিগত স্বার্থে কৃষকদের ভুল বোঝাচ্ছে এবং বিপথে চালিত করছে।

কৃষি ভারতীয় সংবিধানের যৌথ তালিকায় থাকলেও এ ক্ষেত্রে রাজ্যের অধিকার ছিল প্রশ্নাতীত। সংস্কারের ফলে সেই অধিকার চলে আসছে কেন্দ্রের হাতে। নতুন আইনে কৃষিবাজারের (এ দেশে যা ‘মান্ডি’) ওপর রাজ্যের একচেটিয়া অধিকার আর থাকবে না। কৃষকদের মতো বেসরকারি বহুজাতিক সংস্থাও তাদের পছন্দমতো ‘মান্ডি’ তৈরি করতে পারবে। কৃষককে বাধ্য করা যাবে না কোনো এক বাজারে উৎপাদিত পণ্য বিক্রিতে। চুক্তিভিত্তিক চাষও করা যাবে। সবচেয়ে বড় কথা, কোন দামে চাষি তাঁর পণ্য বেচবেন, তা বাজারই ঠিক করে দেবে। কৃষক বিক্ষোভের বড় কারণগুলোর মধ্যে এটা অন্যতম।

তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষোভ ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বা মিনিমাম সাপোর্ট প্রাইস (এমএসপি) নিয়ে। এ দেশের কৃষিব্যবস্থায় এমএসপি প্রথা চালু রয়েছে বহু দশক ধরে। ক্ষতির হাত থেকে চাষিকে বাঁচিয়ে ন্যায্যমূল্য দিতে সরকার প্রতিবছর বিভিন্ন ফসলের এমএসপি ঠিক করে দেয়। এটাই এই দেশের কৃষকের প্রধান রাজনৈতিক হাতিয়ার। সেই দামের নিচে সরকার ফসল কিনতে পারে না। এই ব্যবস্থা চাষির কাছে একটা বড় নিরাপত্তাও। নতুন আইনে কিন্তু এই প্রথা বাধ্যতামূলক রাখা হয়নি। 

সংস্কার আরও একটি বিষয় নিশ্চিত করেছে, অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইনের আওতা থেকে বাদ দিয়েছে চাল, ডাল, তৈলবীজ, পেঁয়াজ ও আলুকে। এই পাঁচ পণ্যের উৎপাদন ও মজুতের ওপর কেন্দ্র বা রাজ্য কোনো সরকারেরই আর কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। আলু ও পেঁয়াজের মতো পচনশীল পণ্যের ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ ও অন্য পণ্যের দাম ১০০ শতাংশ বাড়লে একমাত্র তবেই রাষ্ট্র হস্তক্ষেপ করতে পারবে। নইলে বাজারই সর্বেসর্বা।

যদিও মোদী সরকার বলছে, এই সংস্কার ২০২২ সালে আয় দ্বিগুণ বাড়াবে কৃষকের। কিন্তু তাতেও নিভছে না কৃষক মনের ক্ষোভ।

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭