ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

বিভিন্ন দেশে প্রধান বিচারপতি অপসারণ পদ্ধতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 25/08/2017


Thumbnail

বিভিন্ন দেশের বিচার বিভাগ ও আইন বিভাগের মধ্যে দেখা দেয় দ্বন্দ্ব। এমন দ্বন্দ্বের পরিপ্রেক্ষিতে কখনো বিচারপতিকে অপসারণ করা হয়, আবার কখনো বিচারপতি নিজেই পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। প্রধান বিচারপতিকে অপসারণে বিভিন্ন দেশে মানা হয় বিভিন্ন পদ্ধতি। জেনে নেওয়া যাক কয়েকটি দেশের প্রধান বিচারপতি অপসারণের পদ্ধতি।

প্রধান বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা বিভিন্ন দেশে সাধারণত পার্লামেন্টের হাতে থাকে। আবার কোনো কোনো দেশে প্রধান বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা রয়েছে পার্লামেন্টের বাইরে অন্য প্রতিষ্ঠানের হাতে।

যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে আনুষ্ঠানিক অভিশংসন প্রস্তাব দেওয়া হয়, আর এর চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয় উচ্চকক্ষে। দুটি দেশেই নিম্নকক্ষে প্রস্তাব উত্থাপনের পর তা নিয়ে আলোচনা হয়। পরে প্রস্তাবটি উচ্চকক্ষে পাঠানো হয়। উচ্চকক্ষে ভোটাভুটির মাধ্যমে চূড়ান্ত অভিশংসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। তবে যুক্তরাজ্যের ক্ষেত্রে বিচারপতি অপসারণে অবশ্যই রানির সম্মতি প্রয়োজন হয়। অবশ্য এটি একটা আনুষ্ঠানিকতাই মাত্র।

প্রধান বিচারপতি অপসারণের ক্ষেত্রে ভারতের সংবিধানের ১২৪ (৪) ধারা অনুযায়ী, পার্লামেন্টের যে কোনো কক্ষে অভিশংসনের প্রস্তাব উত্থাপন করা যেতে পারে। রাজ্যসভার ৫০সদস্য কিংবা লোকসভার ১০০ সদস্য অভিশংসন প্রস্তাব তুললে সংশ্লিষ্ট কক্ষের স্পিকার এ-সংক্রান্ত প্রস্তাবের বিষয়ে অনুসন্ধানের জন্য তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেন। সংশ্লিষ্ট বিচারকের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পেলে কমিটি অভিশংসনের জন্য সুপারিশ করে পার্লামেন্টে প্রস্তাব উপস্থাপন করে। এ প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটি হয়। ভোটের মাধ্যমেই নির্ধারিত হয় অভিশংসনের বিষয়টি। স্পিকার গঠিত কমিটি সংশ্লিষ্ট বিচারকের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে কোনো প্রমাণ না পেলে কমিটি একটি প্রতিবেদন দিয়ে তা অবহিত করে এবং অভিশংসন প্রক্রিয়ার সমাপ্তি ঘটে।

শ্রীলঙ্কা ও নেপালেও একই নিয়ম। এ দুই দেশে পার্লামেন্টে ভোটাভুটি করে অপসারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং পরে তা প্রেসিডেন্টের মাধ্যমে পাস করানো হয়।

জার্মানিতে অনুসরণ করা হয় ভিন্ন পদ্ধতি। দেশটিতে ফেডারেল কোর্টের প্রধান বিচারক অপসারণের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে ফেডারেল কোর্ট অব জাস্টিসকে। অন্যদিকে জার্মানির সংবিধানের ৯৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংবিধান লঙ্ঘনের দায়ে ফেডারেল বিচারপতিকে অপসারণ করা যায়। এক্ষেত্রে জার্মান পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য ফেডারেল কোর্ট অব জাস্টিসকে অভিযুক্ত প্রধান বিচারককে অপসারণ বা অন্য কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানাতে পারে।

ভিন্ন চিত্রও দেখা গেছে ফিলিপাইন ও দক্ষিণ কোরিয়ার ক্ষেত্রে। এ দুই দেশের পার্লামেন্ট প্রধান বিচারপতিকে অভিশংসন করলেও পরবর্তী সময়ে আদালত সংসদের সিদ্ধান্ত বাতিল করে রায় দিয়েছেন।

রাশিয়ায় প্রধান বিচারপতিকে সুপ্রিম কোর্টের চেয়ারম্যান হিসেবে পরিচিত। সুপ্রিম কোর্টের চেয়ারম্যান ও অন্যান্য বিচারকদের নিয়োগ ও অপসারণের ক্ষমতা থাকে ফেডারেশন কাউন্সিলের হাতে। যদি প্রেসিডেন্ট প্রধান বিচারপতিকে অপসারণ করতে চান তবে তিনি ফেডারেশন কাউন্সিলকে জানান। ফেডারেশন কাউন্সিল আপত্তি জানালে রুশ পার্লামেন্ট দুমায় দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে তা বাতিল করা যায়।

ইন্দোনেশিয়ায় প্রধান বিচারপতি নির্বাচিত হন সুপ্রিম কোর্টের অন্যান্য বিচারপতির ভোটে। এরপর প্রেসিডেন্ট প্রধান বিচারপতিকে নিয়োগ দেন। কিন্তু ২০১৩ সালে আকিল মোচতারকে প্রেসিডেন্ট সরাসরি বরখাস্ত করেন। একই বছর প্রেসিডেন্ট সুশিলো বামবাং ইউধোইউনো নতুন একজনকে প্রধান বিচারপতি পদে নিয়োগ দেন। এই নিয়োগের বিরুদ্ধে অন্যান্য বিচারকরা চ্যালেঞ্জ জানালেও সফল হননি। এক্ষেত্রে দেশটিতে প্রধান বিচারপতি নিয়োগে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা বেশি।

প্রধান বিচারপতিকে অপসারণের জন্য অনেক দেশে প্রেসিডেন্ট নিজেই প্রধান ভূমিকা পালন করে থাকেন। অনেক সময় দেখা যায় পার্লামেন্টের অনুমোদন নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেন না।


বাংলা ইনসাইডার/আরএইচবি/জেডএ




প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭