ইনসাইড থট

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী: বিজয়ের মাসে আরেকটি ডাকের অপেক্ষা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 01/12/2020


Thumbnail

আজ অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকদের জন্য একটি আনন্দের দিন। করোনা ভাইরাস আক্রমণের পর থেকে বিভিন্ন শহরে যান ও বিমান চলাচল বন্ধ ছিল স্বাস্থ্য নিরাপত্তার কথা ভেবে। বিশেষ করে কুইন্সল্যান্ড সরকার খুবই কঠোরতা প্রদর্শন করেছে এ সময়ে । এক পর্যায়ে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীর আবেদনও নাকচ করেছেন কুইন্সল্যান্ড মুখ্যমন্ত্রী। আজ সেই বন্ধ দুয়ার উন্মুক্ত হলো।

এদিকে গতকাল থেকে মেলবোর্ন শহরে অফিস খুলেছে ৮ মাস বন্ধ থাকার পর।  ওদিকে যুক্তরাজ্যে কোরোনার প্রকোপ কমেছে। লক ডাউন তাদের উপকারে এসেছে। এরকম একটি আনন্দের সময় যে খবরটি বেদনার কারণ হয়ে উঠলো তা হলো : নড়াইলের ছেলে “তুর্কি মুন্নার স্বপ্ন শেষ-বিদেশ গিয়ে তার আর উচ্চ শিক্ষা নেয়া হলোনা।“ কাক ডাকা ভোরে ছিনতাইকারীরা ছিনিয়ে নিলো আরেকটি মায়ের স্বপ্ন, আরেকটি তরুনের স্বপ্ন, আরেকটি পরিবারের স্বপ্ন।

ওই কাক ডাকা ভোরে আমি , আমার স্ত্রী ও সন্তান বেঁচেছি এক অবধারিত মৃত্যুর হাত থেকে।  ছিনতাইকারী গাড়িতে করে টানছে আমার স্ত্রীর ব্যাগ, আর আমরা তিনজনে রিকশায়। এরকম পরিস্থিতিতে হয় নিচের পড়ে মাথায় আঘাত লেগে কিংবা ছিনতাইকারীর চুরিতে আরও অনেকে শাহাদৎ বরণ করেছেন। সেদিন হয়তো আমার স্বপ্নগুলো শেষ হয়ে যেত ! 

এভাবে অনেক স্বপ্ন ঝরে যায়। চিরদিন কে কার কথা মনে রাখবে? একদিন সব কিছু ভুলে যেতে হয়। ঢাকা শহর যে নানা কারণে এখন একটি অনিরাপদ শহর তা বলবার অপেক্ষা রাখে না। আমার এ কথার জবাবে হয়তো মাননীয় মন্ত্রী বলবেন-পৃথিবীর কোনো শহরই নিরাপদ নয়। সব শহরেই আছে খুন , গুম, হত্যা , ধর্ষণ।  সুতরাং, এটাই বাস্তবতা। তার পরেও মনে প্রশ্ন জাগে- কিছুই কি আমাদের করবার নেই ? বাস্তবতাই কি সব?

মাননীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর উপর যেমনটি জনগণের আস্থা আছে- অনেকের মন্ত্রীর উপর কিন্তু তেমনটি নেই। খুব কাছ থেকে মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানবার সুযোগ হয়েছিল বলে আমি এরকম আশাবাদী। আপনার বিজ্ঞতা পারে আমাদের মুক্তির অফুরন্ত দ্বার খুলতে মাননীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী। হয়তো আরও একটু চেষ্টা করবার সুযোগ আছে? মাননীয় মন্ত্রী আপনার মুখপানে চেয়ে আছে বাংলার প্রতিটি নারী -পুরুষ -শিশু। আশা করি আপনি পারবেন একটি নিরাপদ শহর, একটি নিরাপদ দেশ জাতিকে উপহার দিতে। প্লিজ!   

করোনা আসার পর অনেকেই বলছিলো মানুষ এবার ভালো হয়ে যাবে - করোনা ভাইরাস মানুষকে বদলে দিয়ে ভালো করে দেবে।  আমি তখন মনে মনে হাসছিলাম।  কি সরল বিশ্বাস আমাদের।  কথায়  আছে কয়লা ধুলে নাকি ময়লা যায় না। আর স্বভাব যায় না মরলে।  সুতরাং, ভালো হওয়া কারো কারো পক্ষে সম্ভব নয়।  ভালো হতে চাইলেও ভালো হওয়া যায় কি ? অনেকে ভালো মনে করতাম , বিশ্বাস করতাম।  কিন্তু একদিন সেই বিশ্বাসকে মিথ্যে প্রমান করে আনন্দে আত্মহারা হয়। অন্য দিকে হেরে যাওয়া মানুষটি ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে।  কি জানি - বিদ্রোহী কবি কেন নীরব হয়ে গিয়েছিলেন।  তবে, ডিজিটাল নিরাপত্তার আইনের দোহাই দিয়ে এখন অনেকে নীরব! এই নীরবতা কি ভালো লক্ষণ হতে পারে?

পৃথিবীটা একটি রঙ্গ মঞ্চ যেন - সেখানে হাসি -কান্না আমাদের নিত্য দিনের সাথী। কথায় আছে কপালের লিখন না যায় খণ্ডন। আমাদের কপালে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ছিল আমরা সেটা দেখেছি। আমাদের কপালে করোনা ভাইরাস ছিল সেটা দেখছি। এসব কিছুর পরেও একটি কথা আছে চেষ্টা করলে ভাগ্যের লিখন খুলতে পারে।   

সুপ্রিয় পাঠক, হয়তো ভাবছেন  আমি মুন্নার কথা বলতে গিয়ে কোথায় যাচ্ছি! তাই আমি আবারও ঢাকা শহরে ফিরে আসি।  দার্শনিকদের মতে, আমরা আসলে মায়া -লোভেই সবকিছু করছি।  আর এভাবে প্রতিদিন পৃথিবীর বুকে মানুষের স্বরূপকে উন্মোচন করছি।  আমরা যে পশু তা আমরা সকলকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যেন।  তাই শিশু-নারী নির্যাতনের আনন্দে মেতে উঠি। সামান্য কিছুর জন্য খুন করে ফেলি।

আমরা জানি আমাদের পাশেই আছে রোগ, জীবাণু , মরণের ফাঁদ।  তবুও আমরা সেসবকে ভুলে যাই।  প্রশ্ন হলো : আমরা কবে আসলে সচেতন হবো ? আমাদের চেতনায় ছিল সমতা, সহমর্মিতা, ভালোবাসার চেতনা। সেগুলো যেন দিন দিন ফুরিয়ে যাচ্ছে। বিরোধীদের মুখে এখন "চেতনা" একটি গালিতে পরিনিত হয়েছে। উত্থান হয়েছে মেরুদন্ডহীনতা, উন্মাদনা, ও ভণ্ডামির।   

আমরা নিরাপদ শহর চাই। সেই নিরাপত্তা চাই আমরা কোনো জন্তু জানোয়ারের থেকে নয়। এই শহরে এখন বাঘ নেই, শেয়াল নেই, ভাল্লুক নেই। নেই ভুত-পেত্নী। আছে মানুষ কাঠামোর ভেতরে মানুষ নামক প্রাণী! তাই সহজেই এই মানুষ গুলো হয়ে যায় জানোয়ার।  কারণ সে তার নিজের ভেতরের পশুকে দমন করতে পারে না।

 আমার জানি, একটি কম্পিউটার নিজের মতো চলতে পারে না।  সেই কম্পিউটার এখন রোগ নির্ণয়ে ডাক্তারের ভূমিকায় অবতীর্ণ। বিজ্ঞানের এই অভাবিত উন্নয়ন আমাদেরকে আশাবাদী করে তোলে।  হয়তো একটি মানুষের মন কম্পিউটার জানতে পারবে এবং কারও মনে মন্দ চিন্তা এলে সেটা একটি এলার্ট জারি করবে।  এবং আমরা নিরাপত্তাকে নিচ্চিত করতে পারব হয়তো।  তবে বিকল্প একটি পথ এখনো আমাদের জানা আছে।  আর সেটা হলো শিক্ষা। । মানুষকে কমান্ড দেয় তার শিক্ষা।  সেজন্য একজন মা হচ্ছেন সেই ভালো শিক্ষক - যাকে প্রয়োজন আমাদের সমাজের ।  কিন্তু বাবারা মায়েদেরকে যে ভাবে নির্যাতন করে, ভুল পথে চালিত করে যে মায়েরা কেবল অসহায়ভাবে তাকিয়ে দেখেন। 

আমাদের সমাজে এখন ভালো শিক্ষকের খুব অভাব।  একসময় আলেমরা শিক্ষক ছিলেন।  তারা নানা ব্যক্তি স্বার্থে নিজেদেরকে নষ্ট করে ফেলছেন।  এরপর এসেছে বিদ্যালয়ের শিক্ষক।  দিনে দিনে তারাও নষ্ট হয়ে গেছেন।  এই নষ্ট হতে হতে আমরা এতটা নষ্ট হয়েছি যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়ে মোয়া মুড়কির মতো পিএইচডি দিচ্ছি এবং এভাবে একজন ভালো মানুষকে একজন মন্দ মানুষের সঙ্গে সমান করে দিচ্ছি। 

কথায় আছে মাথায় যদি পচন ধরে তবে দেহের পক্ষে সেটা প্রতিরোধ সম্ভব হয় না। শিক্ষক যদি হয় মাথা তবে সেই মাথায় পচন থামানোর সময় এখন! মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি কি আমাদের পাশে একটু দাঁড়াবেন কি যারা এই মাথায় পচন ধরাচ্ছে তাঁদেরকে আলাদা করতে?  এরা শিক্ষাঙ্গনে ভয়াবহ ভাইরাস। আপনি যদি একটু অভয় দেন- তাহলে জনগণ রুখে দেবে এই ভয়াবহ শিক্ষা দুর্নীতির ভাইরাসকে। প্লিজ!

গতকাল আমাদের একজন চিকিৎসক নেতা বলেছেন - ভ্যাকসিনের উপর নির্ভর না করে স্বাস্থ্য বিধি মেনে করোনা ভাইরাসকে মোকাবেলা করতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমরাতো বিগত ১০ মাস দেখলাম।  আমরা এখন জানি এই ভাইরাস এর স্বরূপটি কি।  আমাদের অর্থনীতিকে কিভাবে সচল রাখতে হবে সেটাও জেনেছি।  এবার কি আমরা সকলে মিলে  এই ভাইরাস কে পরাজিত করতে পারি কি ?

বাঙালিরা ২00 বছর বৃটিশদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে, বাঙালিরা পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ করেছে। সেই অকুতোভয় জাতি কেন হেরে যাবে দুর্নীতি কিংবা কোরোনা ভাইরাস এর কাছে?  আমরা জাতির পিতার আদেশে মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি।  আপনি কেবল একটি ডাক দেন বঙ্গবন্ধুর মতো করে।  নিয়ম মেনে ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ করতে হবে- সেই ডাক আপনার মুখ থেকে জাতি শুনতে চায়।  জাতি আরেকটি ৭ মার্চ চায়- যেদিন বঙ্গবন্ধু মুক্তির সংগ্রামে ডাক দিয়েছিলেন।  সেই ডাক আপনিই দিতে পারেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।  জনতা সেই ডাকে সাড়া দিয়ে শিক্ষা, সমাজ , প্রশাসন থেকে সকল ভাইরাস থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করবে।  সেই ডাকটা দিবেন কি ? 

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিজয়ের মাসে আপনার নেতৃত্বে জাতি আরেকটি বিজয় অর্জন করতে চায়। আমাদের স্বপ্নগুলো যেন সম্মিলিতভাবে আপনার স্বপ্নে পরিনিত হয় যেভাবে বাঙালির স্বাধীনতার স্বপ্ন বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠে ধনিত হয়েছিল সেই ৭ মার্চে।  আপনার হাত ধরে বাঙালি অর্থনৈতিক মুক্তির পথ পেয়েছে , জাতি তেমনি সামাজিক মুক্তির পথ খুঁজতে চায় আপনার আহ্ববানে।  আপনার ডাকের অপেক্ষায় বাংলার নিপীড়িত জনতা।  সম্প্রতি এক সাংবাদিক গণ জাগরণের কথা বলেছেন।  সেই গণ জাগরণ হোক আপনার ডাকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।  ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ডাক ছিল স্বাধীনতার মাসে।  আর এই বিজয়ের মাসে হোক মুক্তির ডাক। 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭