ইনসাইড টক

‘শাস্তি কমিয়ে আসামিকে সংশোধনের সুযোগ দিতে হবে’

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 01/12/2020


Thumbnail

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেছেন, সারাবিশ্ব যেখানে শাস্তি উঠিয়ে দিচ্ছে সেখানে বিশ্বের বর্বর ও অসভ্য দেশগুলো শাস্তি বাড়াচ্ছে। আর বর্বর ও অসভ্যতার প্রধান নিয়ামক বা নিদর্শন হলো, যে সমাজ যতো বর্বর সেই সমাজে শাস্তি তত কঠিন। আর যে সমাজ যত সভ্য সেই সমাজে শাস্তির ওপরে নির্ভরশীলতা কম, শাস্তিও কম। কাজেই শাস্তি কমিয়ে আসামিদের সংশোধনের সুযোগ দিতে হবে। বাংলা ইনসাইডারের সাথে একান্ত আলাপকালে এসব কথা বলেছেন তিনি। পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বাংলা ইনসাইডারের নিজস্ব প্রতিবেদক জুয়েল খান।

ড. শাহদীন মালিক বলেন, শাস্তি দেয়ার পেছনে দুইটা উদ্দেশ্য থাকে। প্রথমত প্রতিশোধ নেয়া। অতীতে ছিলো শাস্তি মানে প্রতিশোধ। তুমি আমার হাত ভেঙেছো আমি তোমার হাত ভাঙবো। বিভিন্ন ধর্ম গ্রন্থে এই শাস্তির কথা বলা ছিলো। মৃত্যুর জন্য মৃত্যু, পুরুষের জন্য পুরুষ, নারীর জন্য নারী, দাসের জন্য দাস, ফ্রি মানুষের জন্য ফ্রি মানুষ। ইসলাম, বাইবেল, তাওড়াতসহ বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে অপরাধের এই ধরনের শাস্তির বিধান আছে। অতীতে শাস্তির উদ্দেশ্য ছিলো প্রতিশোধ। তারপর গত ২শ আড়াইশো বছরের মধ্যে এর পরিবর্তন হয়েছে।

দ্বিতীয়ত হলো, মানুষ ভুল করতেই পারে কাজেই তাকে সংশোধনের একটা সুযোগ দিতে হবে। যদি কাউকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় তাহলে তার সংশোধনের কোনো সুযোগ থাকে না। কোনা আসামিকে যদি আমৃত্যু জেলখানায় রাখা হয় তাহলে সে জেলখানায় ভালো থেকে কি করবে?।  কোনো আসামিকে যদি ২০ বছরের জেল দেয়া হয় আর তাকে যদি বলা হয় যে ভালো কাজ করলে শাস্তি কমিয়ে দেয়া হবে তখন সে ভালো কাজ করবে, সংশোধন হয়ে যাবে। কিন্তু রায়ে যদি বলা হয়, মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত তাকে জেলে থাকতে হবে। তাহলে সে কোনোভাবেই ভালো কাজ করবে না কারণ ভালো কাজ করলেও তার কোনো লাভ নেই। সুতরাং সে আরো খারাপ হবে মানুষকে মারধর করবে, জেলারদের সাথে খারাপ আচরণ করবে। একটা পর্যায়ে তাকে নিয়ন্ত্রণ করাটা জেলারদের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে। কেন না তার ভালো হওয়ার কোনো সুযোগ কিংবা স্বপ্ন নেই। এখানে তার জীবনের সমাপ্তি ঘটবে। সুতরাং সংশোধনের সুযোগ থাকছে না।

তিনি জানান, গ্রিনল্যান্ড একটি দেশ যে দেশটিতে কোনো জেলখানা নেই। সেখানে আদালতের শাস্তি হচ্ছে, বাড়িতে থাকবেন কিন্তু ঘরে থেকে বের হবেন না, অনেকটা কোয়ারেন্টাইনের মত। কোনো পুলিশ নেই, কোনো গার্ড নেই। আসামিকে বলে দেয়া হয় যে আপনি ২ মাস ঘর থেকে বের হবেন না এটাই আপনার শাস্তি। আর সেই ব্যক্তিও প্রতিজ্ঞা করলো যে আমার শাস্তি হয়েছে আমি ঘরের ভেতরে থাকবো। কিন্তু আমাদের দেশে হলে আসামিরা চিন্তা করতো কীভাবে এখান থেকে বাইরে বের হওয়া যায়।

তিনি আরো বলেন, একজন মানুষ কোনো অন্যায় বা খারাপ কাজ করে ফেলেছে তাকে শাস্তি দেয়ার উদ্দেশ্য হলো শাস্তি শেষে সেই ব্যক্তি যেন ভালো হয়ে যায়। আর ভালো হওয়ার জন্য তাকে একটা সুযোগ দিতে হবে। জেলখানা বা শাস্তির কারণ হচ্ছে সংশোধন হওয়ার সুযোগ দেয়া। কিন্তু মৃত্যুদণ্ড বা আমৃত্যু পর্যন্ত কাউকে কারাভোগ করা কোনোভাবেই সংশোধনের সুযোগ থাকে না। বর্তমানে বিশ্বের ১৪০টির মতো দেশে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার বিধান নেই। 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭