ইনসাইড ইকোনমি

স্বাধীনতা ও বাংলাদেশের অর্থনীতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 02/12/2020


Thumbnail

বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের দ্রুত উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। অর্থনীতিতে বাংলাদেশ বর্তমানে ৪১ তম দেশ এবং দ্রুত বর্ধনশীল দেশে পঞ্চম। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের সময় পাকিস্তান বাংলাদেশকে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে পরিণত করে। পাকিস্তান চেয়েছিল স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আমরা যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারি। স্বাধীনতা পরবর্তী যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সচল করেন।

দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর অঙ্গীকার বাস্তবায়নে নির্ভীক শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পর দারিদ্র্য দূরের লড়ায়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে ভূমি ব্যবস্থাপনায় আমূল সংস্কার, শিল্প বিকাশে নয়া উদ্যোগ, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের প্রণোদনা প্রদান, কৃষির আধুনিকায়নে সমন্বিত কর্মসূচী গ্রহণ, সমবায় চেতনা বিকাশে শুরু করেছিলেন কর্মযজ্ঞ। মানুষের মনের ভেতরে প্রবেশ করে তাদের প্রণোদনার মাধ্যমে গড়ে তুলেছিলেন এক যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের অর্থনীতি।

১৯৭২ সালে আমাদের অর্থনীতির আকার ছিল মাত্র ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর আমাদের রিজার্ভে তখন কোন বৈদেশিক মুদ্রাও ছিল না। শতকরা আশি ভাগের মতো মানুষ দরিদ্র ও ক্ষুধার্ত। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর বৈপ্লবিক নেতৃত্বের কল্যাণে যুদ্ধ বিধ্বস্ত অবকাঠামো এবং সত্যিকার অর্থে কোন নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান না থাকা সত্ত্বেও দেশের অর্থনীতি দ্রুত ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে।
দেশের ভেতরে ও বাইরে বেশ কিছু প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে তখন খাদ্যশস্যের ভয়াবহ সঙ্কট চলছিল। ওই সময়টায় আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল ও খাদ্যের সঙ্কটের পাশাপাশি মূল্যস্ফীতির চ্যালেঞ্জও বঙ্গবন্ধুর সরকারকে মোকাবেলা করতে হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু পোষণ করতেন, দেশের একটি মানুষও হতদরিদ্র থাকবেনা। চ্যালেঞ্জের মুখে বঙ্গবন্ধু এর বাস্তবায়ন করেন।

স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতি যথেষ্ট অগ্রগতি অর্জন করেছে। স্বাধীনতা পর বাংলাদেশের অর্থনীতি মূলত পাট ও পাটজাত পণ্যের ওপর নির্ভরশীল ছিল। ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দে পাটজাত দ্রব্যের জনপ্রিয়তা ও বাণিজ্য কমতে থাকলেও বাংলাদেশের অর্থনীতি মুর্ছে পরেনি।

এরপর থেকে বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশে রূপান্তরিত হয়। বর্তমানে বাংলাদেশের তৈরি পোষাক শিল্প বিশ্বের বৃহত্তম শিল্পের মধ্যে অন্যতম এবং দেশের অর্থনীতি পোশাক শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। পোশাক শিল্প (রপ্তানি) থেকে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে থাকে।

জাতিসংঘ ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে তালিকাভুক্ত করে। সেই পর্যায় থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার যোগ্যতা বাংলাদেশ অর্জন করেছে। ২০২৪ সালের মধ্যে এই উত্তরণপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। প্রবৃদ্ধি নিয়ে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক নিচে পাকিস্তান। ২০১৯/২০ অর্থ বছরে (৩০ জুন) বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ২ শতাংশ  হয়েছে৷ পরবর্তী অর্থ বছরে তা বেড়ে ৩ শতাংশ হতে পারে।  যেখানে পাকিস্তানে ২০১৯/২০ অর্থ বছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৪ শতাংশ৷ পরবর্তী অর্থবছরে তা বেড়ে ৩ শতাংশ হতে পারে৷  

বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের দ্রুত উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩ হাজার ৯০০ কোটি ডলার। কৃষি মন্ত্রণালয়ের জানুয়ারি ২০২০ পর্যন্ত তথ্যানুসারে বাংলাদেশ সবজি, ধান ও আলু উৎপাদনে বিশ্বে যথাক্রমে ৩য়, ৪র্থ ও ৭ম। এছাড়াও মাছে ৪র্থ, আমে ৭ম, পেয়ারায় ৮ম এবং খাদ্যশস্য উৎপাদনে বিশ্বে ১০ম। বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) কৃষির অবদান ১৬.৬ %।
২০২০সালে বিশ্ব মন্দা স্বত্তেও বাংলাদেশের রেমিট্যান্স আয় ছিল ২৫০০ কোটি মার্কিনডলার যা ২০১৯ সালে ছিল ১৯০০ কোটি মার্কিনডলার । ২০১৮, ২০১৭, ২০১৬ ও ২০১৫ সালে রেমিট্যান্স এসেছে যথাক্রমে ১,৫৫৩, ১,৩৫৩, ১,৩৬১ ও ১,৫৩১ কোটি মার্কিন ডলার।
২০২০-২১ সালে বাংলাদেশের বাজেটের আকার ৫,৬৮,০০০ কোটি টাকা। এ থেকে বোঝা যায় বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন কোথায় গিয়ে দাাঁড়িয়েছে। ২০২৪ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে ঘোষণা করবে।

বিশ্লেষকদের ধারণা, অন্যান্য দেশের তুলনায় করোনার মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্রুত ঘুড়ে দাঁড়াচ্ছে। এজন্য সরকারের ধারাবাহিকতা, শক্ত নেতৃত্ব, সময় উপযোগী সিদ্ধান্তের ভূমিকা রয়েছে।

করোনার মধ্যেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের অর্থনীতিকে চাঙা রাখতে সবখাতেই কমবেশি প্রণোদনার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। ক্ষুদ্র আয়তনের একটি উন্নয়নশীল দেশ হয়েও বাংলাদেশ সারা বিশ্বের নিকট ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবহার এবং দারিদ্র দূরীকরণ ও অর্থনৈতিক সূচকের ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে করোনার শুরুতেই সরকার অর্থনৈতিক প্যাকেজগুলো ঘোষণা করেছিলো তার একটা বড় প্রভাই ইতোমধ্যে পড়তে শুরু করেছে। বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাত টিকিয়ে রাখা, শ্রমিকদের বেতনের ব্যবস্থা খুবই দ্রুততার সঙ্গে করতে পারা। একদিকে করোনা নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রেখেছে অন্যদিকে শিল্প কারখানা পর্যায়ক্রমে খুলে অর্থনীতির চাকাকে সচল করেছে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭