ইনসাইড থট

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনে বিরোধিতা ধর্মীয় নয়- রাজনৈতিক

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 04/12/2020


Thumbnail

কাউকে যদি বলা হয়, বর্তমানে বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রধান সমস্যা কী? একবাক্যে সবাই বলবেন-মহামারি করোনা। সারা বিশ্ব যখন করোনা মোকাবেলায় হিমশিম খাচ্ছে বাংলাদেশে তখন একদল স্বাধীনতা বিরোধী চিহ্নিত লোক বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনে বিরোধীতা করছে যা মূলত ধর্মীয় নয়- রাজনৈতিক। কারন করোনার জন্য বাংলাদেশের বহু মানুষ চাকুরি হারিয়েছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ, নাভিশ্বাস সংসার চালাতে-এর জন্য কোন কথা না বলে তারা নেমেছে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনে বিরোধীতায়। দেশে যখন কোন রাজনৈতিক ইস্যু নেই, তখন কেউ হয়তো এদের লেলিয়ে দিয়েছে সরকারের বিরুদ্ধে।

মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি সম্মান প্রদর্শণ করার জন্য গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ঢাকার দোলাইপাড় চত্বরে (যেখান থেকে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে শুরু) বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। প্রায় দুই মাস ধরে এই ভাস্কর্য স্থাপনে বিরোধিতা করছে কয়েকটি ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক সংগঠন। অক্টোবর মাসে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় ভাস্কর্য নির্মাণের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশও করে ঐ সংগঠনগুলো। পাশাপাশি ‘বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বাস্তবায়ন পরিষদ’ সহ  ভাস্কর্য বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলনরত রয়েছে আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনসমূহ। তবে ভাস্কর্য ইস্যুতে সারাদেশে তোড়পাড় শুরু হয় হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব ও খেলাফত মজলিশের নেতা মামুনুল হকের রুচিহীন মন্তব্যের পর।

ভাস্কর্য স্থাপন বাংলাদেশে নতুন নয়। স্বাধীনতার পর এদেশে অনেক ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে। ভাস্কর্য স্থাপনকে মূর্তি স্থাপনের সঙ্গে তুলনা করে এটাকে শিরক সংস্কৃতি বা বিজাতীয় সংস্কৃতি বলে আখ্যায়িত করেছে তারা। ভাস্কর্য ( Sculpture) বাঙালির নিজস্ব সংস্কৃতির অংশ, বিজাতীয় নয়। এ সংস্কৃতিতে যেসব কর্মকাণ্ড শিরক বা আল্লাহর সঙ্গে অংশীবাদিতার মিশ্রণ ছাড়াই পালিত হয়ে আসছে, সেটিকে হঠাৎ করে শিরক সংস্কৃতি বলা নোংরা রাজনীতি ছাড়া কিছুই নয়।  

হেফাজতে ইসলামের নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম-মহাসচিব ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক সাহেবরা ভাস্কর্য তৈরির যে বিরোধীতা করছে তা ধর্মীয় নয়- আসলে রাজনৈতিক। মামুনুল হক সাহেব ও বাবুনগরী সাহেবরা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য হঠকারী বক্তব্য দিয়ে এদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের উত্তেজিত করার ব্যর্থ চেষ্টা করছে। বাংলাদেশের সচেতন মানুষ তাদের দুজনকেই ভালভাবে চিনেন ও তাদের রাজনৈতিক চরিত্র জানেন। 

বিএনপি-জামাত জোট সরকারের আমলে সারা দেশে জিয়াউর রহমানের অসংখ্য ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়েছিল। তখন মামুনুল হক সাহেবরা ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে কোন কথা বলেননি। উনারা যখন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোটের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন তখন জিয়ার ভাস্কর্য নিয়ে টু শব্দটি করেননি। অথচ তারা আজকে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিরোধিতা করতেছে। জিয়ার ভাস্কর্য হালাল আর বঙ্গবন্ধুর টা হারাম?

ঘটনার একটু গভীরে গিয়ে চিন্তা করলেই স্পষ্ট বুঝা যায়, যে সকল ব্যক্তিবর্গ বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিরোধিতা করছেন, ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে তাদের এবং তাদের পূর্বসূরিদের ভূমিকা কি ছিলো? ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ওরা যেমনিভাবে ধর্মের দোহাই দিয়ে স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল, গনহত্যায় সহযোগিতা করেছিল, মা-বোনদের সম্ভ্রম লুন্ঠন করেছিল, তেমনিভাবে বর্তমানে তারা ভাস্কর্য ও মূর্তি সম্পর্কে ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধীতা করছে। বাস্তবতা হল, যারা স্বাধীনতা বিশ্বাস করে না, তারা বঙ্গবন্ধু আর বাংলাদেশকে বিশ্বাস করে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়ন সহ্য করতে পারছে না। 

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বতর্মান সরকার বাংলাদেশের সমস্ত এলাকার মসজিদের ইমাম, মোয়াজ্জেম এবং খাদেমদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করেছেন। শেখ হাসিনার নিজ উদ্যোগে কওমী মাদ্রাসার মাস্টার্স ডিগ্রি স্বীকৃতি দিয়েছেন। ফলে মাদ্রাসা শিক্ষায় শিক্ষিত গ্রাজুয়েটদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। ইসলামের প্রতি সম্মান শ্রদ্ধার কোন শেষ নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন এবং তিনি নামাজ পড়ে সকাল ভোরে কুরআন শরীফ পড়েন। গত ০৯।০৯।২০২০ বুধবার একাদশ জাতীয় সংসদের নবম অধিবেশনে (মুলতবি অধিবেশন) প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর পর্বে জনৈক সাংসদের সম্পুরক প্রশ্নের উত্তরে সংসদ নেতা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “সকালে উঠে আমি জায়নামাজ খুঁজি। সকালে উঠেই আগে নামাজ পড়ি। নামাজ পড়ার পর কোরআন তেলাওয়াত করি"।
মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারীরা স্বাধীনতা অর্জনকে ঠেকাতে পারেনি, বাংলাদেশের মুক্তিকামী জনতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে ২ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছে। আমার বিশ্বাস, স্বাধীন বাংলাদেশে মহান মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক ‘বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য`হবেই হবে।, ইনশাআল্লাহ। কোন অপশক্তিই ঠেকাইয়া রাখতে পারবে না। বঙ্গবন্ধুর সৈনিকরা বুকের রক্ত দিয়ে হলেও ‘বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য’ স্থাপন করবেই করবে, ইনশাআল্লাহ।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭