ইনসাইড বাংলাদেশ

যে বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলছেন না শেখ হাসিনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 04/12/2020


Thumbnail

বাংলাদেশের রাজনীতিতে সবচেয়ে সহজ বোধগম্য রাজনীতিবিদ সম্ভবত প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। যে কোন বিষয়ে তিনি স্পষ্টভাবে কথা বলেন এবং কোন বিষয়ে তিনি রাখঢাক করেন না। প্রধানমন্ত্রী যেমন অকপটে বলেন যে ২০০১ সালের নির্বাচনে তারেক জিয়াকে ‘র’ সহযোগিতা করেছিল তেমনি ঠিক অকপটেই তিনি বাংলাদেশের রাজনীতিতে যত ক্ষতগুলোর কথা উচ্চারণ করেন। তার মত স্পষ্টবাদী, কোন সত্যকে রাখঢাক না রেখেই প্রকাশ করার মত রাজনীতিবিদের সংখ্যা শুধু বাংলাদেশেই নয় বিশ্বেও অনেক কম।


সেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই এখন অনেকগুলো বিষয় নিয়ে কথা বলছেন না। প্রতিদিন তিনি বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করছেন। অনেক গুরুত্বপূর্ণ নীতিনির্ধারণ বিষয় নিয়ে বক্তব্য রাখছেন। দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন কিন্তু কতগুলো বিষয় তিনি সযত্নে এড়িয়ে যাচ্ছেন। এটি তার রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও পরিপক্কতার প্রমান বলে মনে করছেন রাজনীতিবিদরা। এই বিষয়গুলোতে তিনি সব বিতর্কের ঊর্ধ্বে থেকে নিজেকে সকলের প্রধানমন্ত্রী এবং জনগণের কাছে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি হিসেবে প্রমাণ করছেন। 


যে বিষয়গুলো প্রধানমন্ত্রী তার প্রাত্যহিক বক্তব্যে এড়িয়ে যাচ্ছেন তার মধ্যে রয়েছে প্রথম একটি হচ্ছে ভাস্কর্যে ইস্যু। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে এখন উত্তপ্ত বাংলাদেশের রাজনীতি। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ তার অবস্থান সুস্পষ্ট করেছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ভাস্কর্য বিরোধিতাকারীদের ধর্মান্ধ মৌলবাদী বলে তাদের সমালোচনা করেছেন। আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতাকর্মী ভাস্কর্যের বিরোধিতাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের প্রত্যয় ঘোষণা করেছেন। কিন্তু এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এখনো পর্যন্ত কোনো বক্তব্য রাখেননি। প্রধানমন্ত্রীর অবস্থান এখানে সুস্পষ্ট। তিনি এখনই বক্তব্য না রেখে নিজেকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। তিনি সব বিতর্কের ঊর্ধ্বে এটিই তিনি প্রমাণ।

দ্বিতীয়, ধর্মীয় উন্মাদনা: বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন করে ধর্মীয় উন্মাদনা দেখা দিয়েছে। ফ্রান্সের ইস্যু নিয়ে মৌলবাদীরা কিছুদিন উস্কানি দিল। এরপর সাকিব আল হাসানকে নিয়েও মৌলবাদীদের উস্কানি দৃশ্যমান হয়েছে এবং সাম্প্রতিক সময়ে মৌলবাদীরা আবার বিভিন্ন ইস্যুতে উস্কানিমূলক বক্তব্য রাখছেন। কিন্তু এসব উস্কানির বিতর্ক থেকে সযত্নে নিজেকে দূরে রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব নিয়ে তিনি এখনো পর্যন্ত কোনো কথা বলেননি। 


তৃতীয়, বাংলাদেশ-ভারত ইস্যু: বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নিয়ে নানা রকম অস্বস্তিও টানা পোড়নের কথা শোনা যায়। বিশেষ করে ভারতের সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে বিরোধী প্রচার প্রোপাগান্ডা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এটি শুরু হয়েছে যখন আইএমএ পূর্বাভাস করেছে আগামী বছর বাংলাদেশের মাথাপিছু গড় আয় ভারতকে ছাড়িয়ে যাবে। এরপর ভারতের গণমাধ্যম থেকে শুরু করে রাজনৈতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের সমালোচনায় মুখর। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সমালোচনা বিতর্কে নিজেকে জড়াচ্ছেন না। সযত্নে নিজেকে দূরে রেখেছেন।


চতুর্থ, খালেদা ও তারেক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হলো বিএনপি। বিএনপির প্রধান দুই নেতা হল বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়া। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী গত কয়েক মাসে বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়া সম্পর্কে কোনো বক্তব্য, মন্তব্য বা সমালোচনা করেননি। খালেদা জিয়াকে প্যারোল দিয়েছেন তিনি নিজেই। এর মধ্যে তিনি রাজনৈতিক উদারতার নজির স্থাপন করেছেন। কিন্তু তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য দেননি। তারেককে নিয়ে অতীতে সমালোচনা করলেও সাম্প্রতিক সময়ে তারেক নিয়ে তাকে কোনো বক্তব্য বা বিবৃতি দিতে দেখা যায়নি।


পঞ্চম, দলের মধ্যে শুদ্ধি অভিযান: দলের মধ্যে শুদ্ধি অভিযানে কিছু স্পর্শকাতর ব্যক্তি আক্রান্ত হয়েছে। বিশেষ করে ফরিদপুর ও সিরাজগঞ্জে শুদ্ধি অভিযানে প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয়রা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কিন্তু এসব নিয়ে সুস্পষ্টভাবে আওয়ামী লীগ সভাপতির কাছ থেকে কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন এটি হল তার পরিপক্বতার সুস্পষ্ট প্রমাণ। একজন প্রধান রাজনীতিবিদকে সব বিষয়ে কথা বলতে হয় না কিন্তু সব বিষয়ে নজর রাখতে হয়। এটিই শেখ হাসিনা দেখাচ্ছেন। এ কারণেই অনেকগুলো বিতর্ক দানা বাধলেও শেখ হাসিনাকেই সকলে বিচক্ষণ বিচারক হিসেবে মানছেন



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭