নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: 04/12/2020
আজ থেকে সরকার রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর শুরু করলো । কক্সবাজার থেকে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের সিদ্ধান্তটি আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্নের মুখে পড়েছে। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এখনই রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছে কিন্তু সরকারি এসব আপত্তি উপেক্ষা করে রোহিঙ্গাদের কে স্থানান্তরের কার্যক্রম শুরু করেছে । শুরু থেকে মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের যখন আশ্রয় দেওয়া হয় তখন থেকেই এই ইস্যুটি নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গন বিভক্ত হয়ে পড়েছিল।
মিয়ানমারের সামরিক জান্তাদের নির্মমতা ও বর্বরতার প্রতিবাদ সব মহল থেকে করা হলেও বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক মহল বিভক্ত ছিল। বিশেষ করে মিয়ানমারের সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্কের স্বার্থে চীন, রাশিয়া ও ভারতের মতো গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলো মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কোনো অবস্থান গ্রহণ করেননি । ফলে রোহিঙ্গাদের দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে মিয়ানমার সরকার কোনো চাপ অনুভব করেননি কখনই । এর ফলে রোহিঙ্গাদের তাদের নিজেদের দেশে ফেরা অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে । যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন যুক্তরাজ্যসহ বেশকিছু পশ্চিমাদেশ রোহিঙ্গা ইস্যুতে সোচ্চার ছিল । মিয়ানমারে গণহত্যা তাদের নির্যাতন নিপীড়নের নিন্দা করেছে সব সময় এবং মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে দাবি করে আসছে ।কিন্তু এই সমস্ত দাবি দেওয়া এবং প্রতিবাদ কখনোই গায়ে মাখিনি মিয়ানমার ।
জাতিসংঘ ,মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ,ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পশ্চিমা দেশগুলো রোহিঙ্গা ইস্যুতে সব সময় বাংলাদেশের পক্ষে ছিল এবং রোহিঙ্গারা যেন তাদের নিজ দেশে ফিরে যেতে পারে এই লক্ষ্যে তারা বাংলাদেশের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছিল । কিন্তু এরকম পরিস্থিতিতে এই দেশগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা, সমঝোতা, সমন্বয় না করে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের ফলে বাংলাদেশ কূটনৈতিক ঝুঁকিতে পড়েছে বলে অনেকে মনে করছেন । এর ফলে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ একেবারেই একঘরে হয়ে গেল কিনা এই প্রশ্ন কূটনৈতিক মহলে উঠেছে । কারণ রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য কিছু দেশ কখনোই মিয়ানমারকে চাপ দিবে না । আর পশ্চিমা দেশগুলো এই ব্যাপারে আন্তর্জাতিক মহলে যে সচেতনতা তৈরি করেছিল, মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কিছু ব্যবস্থা গ্রহণের চেষ্টা করছিল বাংলাদেশের এ সিদ্ধান্তের ফলে সেই চেষ্টা থমকে দাঁড়াবে কিনা সে প্রশ্নও উঠেছে ।সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো প্রায় ১১ লক্ষ রোহিঙ্গাদের ভরণপোষণের বিষয়টি আন্তর্জাতিক অঙ্গনের সাথে মিলে মিশেই করছে বাংলাদেশ । কারণ ১১ লক্ষ লোকের সামগ্রিক দায় দায়িত্ব এবং চাপ বাংলাদেশের জন্য গ্রহণ করা অত্যন্ত কঠিন এবং কষ্টসাধ্য ব্যাপার ।আর এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের কূটনৈতিক কৌশল হওয়া উচিত ছিল সব দেশ কে সাথে নিয়ে রোহিঙ্গা ইস্যুর যৌক্তিক সমাধান।
তবে এই রোহিঙ্গা ইস্যুর একটি যৌক্তিক সমাধান আছে তা হল বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেওয়া । আর সেই সমাধানের জন্য মিয়ানমার সরকার কে প্রবল আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগ করা দরকার । সেই চাপ প্রয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে অবশ্যই সমস্ত প্রভাবশালী দেশগুলোকে সাথে নিতে হবে । কিন্তু এখন ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর সেই ঐক্যে ফাটল ধরাবে কিনা সেই প্রশ্ন এখন বিরল। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাতিসংঘ সকলেই ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের কে স্থানান্তরের বিরোধিতা করছে। এর ফলে রোহিঙ্গা ইস্যুতে কূটনীতিক ভাবে বাংলাদেশ একঘরে হয়ে গেল কিনা সেই প্রশ্নই এখন মুখ্য বিষয় !
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭