ইনসাইড আর্টিকেল

বাংলার প্রকৃতিতে মিশে আছেন বঙ্গবন্ধু

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 11/12/2020


Thumbnail

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্বের বুকে একজন বলিষ্ঠ, সাহসী ও বিশ্বমানের নেতা। তিনি ছিলেন অবাধ, দুর্বার ও অপ্রতিরোধ্য। বঙ্গবন্ধু নিবিড়ভাবে ভালোবেসেছিলেন বাংলার মাটি, মানুষ, পরিবেশ ও প্রকৃতিকে। এতো বলিষ্ঠ নেতাও প্রকৃতির কাছে ছিলেন নমনীয়। দিনশেষে তিনি মোহিত ছিলেন প্রাকৃতির সৌন্দর্যে। প্রকৃতিকে সর্বদা নিজের ভেতর লালন করতেন তিনি।  

তাইতো ‘কারাগারের রোজনামচা’ বইয়ে ১৯৬৬ থেকে ১৯৬৮ সালের কারাস্মৃতি থেকে জানা যায়, জেলখানার বাগান ও গাছপালার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর এক ধরনের ভালোবাসা তৈরি হয়েছিল। জেলখানায় অবাধে প্রবেশ করা পশুপাখি তার সাথী হয়ে গিয়েছিল। এক জোড়া হলুদ পাখির কথা কী সুন্দরভাবে তার লেখনীতে ফুটে উঠেছে, তা সত্যিই অকল্পনীয়।

‘কারাগারের রোজনামচা’-এর (পাতা-১৬৬) ১৯৬৬ সালের ১৭ জুলাইয়ের ঘটনায় তিনি লিখেছেন, ‘বাদলা ঘাসগুলি আমার দুর্বার বাগানটা নষ্ট করে দিতেছে। কত যে তুলে ফেললাম। তুলেও শেষ করতে পারছি না।’ জেলের মধ্যে বন্দি থেকেও তিনি প্রকৃতি-পরিবেশকে ভালোবেসেছেন। প্রকৃতি-পরিবেশ রক্ষায় টান অনুভব করেছেন। একটা মানুষ কতোটা প্রকৃতি প্রেমী হলে সারাদিন কারাবাসের পরও প্রকৃতির জন্য পরিশ্রম করতে পারেন।  

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু যখন রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন তখন সর্বত্রই ছিল ধ্বংসলীলা। হতাশাগ্রস্থ মানুষকে আলোর পথ দেখিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। নিজে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন পরিবেশের সমন্বয়ের মাধ্যমে দেশের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব। তার দূরদর্শী কর্মকাণ্ডের মধ্যে অন্যতম ছিল পরিবেশ ও প্রকৃতি রক্ষা। বঙ্গবন্ধু সুস্থ ও সুন্দর পরিবেশের গুরুত্ব উপলদ্ধি করেছিলেন এবং দেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনাও গ্রহণ করেন।

তিনি নদ-নদী, খাল-বিল, প্রকৃতি-পরিবেশকে খুব বেশি ভালোবাসতেন। নদীর প্রতি ছিল জাতির পিতার অসামান্য দরদ। তার বিভিন্ন ভাষণ ও লেখনীতে নদী অভিজ্ঞান ও নদী দর্শন ফুটে উঠেছে। ১৯৭২ সালে ‘যৌথ নদী কমিশন’ গঠন করে প্রথম পানি কূটনৈতিক কার্যক্রম শুরু করেন।

এছাড়া ১৯৭২ সালে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে ঘোড়দৌড় বন্ধ করে গাছ লাগিয়ে সুদৃশ্য উদ্যান তৈরি করেন, যার নাম দেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। জাতির পিতা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠন ও মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য বন, বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করেন। ১৯৭৩ সালে ‘Bangladesh Wildlife (Preservation) Order অধ্যাদেশ জারি করেন। 

দেশের বন্যপ্রাণী বাঁচাতে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার তাগিদে ১৯৭৪ সালে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন করেন।
দীর্ঘ ৯ মাসের যুদ্ধের ফলে বৃক্ষ সম্পদের যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল, তা পূরণ করার জন্য সারা দেশে বৃক্ষরোপণ অভিযান শুরু করেন। তিনি মহাসড়কের পাশে, বাসাবাড়ির চারপাশে, পতিত জমিতে সবাইকে বৃক্ষরোপণের আহ্বান জানান।

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ এই বাঙালির হাত ধরেই সূচনা হয় উপকূলে বনায়ন কর্মসূচি। প্রকৃতি ও পরিবেশের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসার কারণে তিনি বাংলাদেশ বনশিল্প করপোরেশনকে জাতীয়করণ করেন এবং এর আধুনিকায়নে ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।

দেশব্যাপী এখন যে বৃক্ষ আন্দোলন, প্রতি বছর জুন মাসে বৃক্ষরোপণের যে উৎসব এবং বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়, তার স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন বঙ্গবন্ধুই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে Water Pollution Control Ordinance, 1973 জারির মাধ্যমে বাংলাদেশে পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের সূচনা করেন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের নদ-নদী রক্ষা, বৃক্ষসম্পদ বৃদ্ধিসহ সর্বোপরি প্রকৃতি-পরিবেশ সংরক্ষণের যে ডাক দিয়েছিলেন, তা দেরিতে হলেও সফলতা পেয়েছে। এসব কাজে প্রকৃতি-পরিবেশপ্রেমীদের উৎসাহিত করার লক্ষ্যে বর্তমান সময়ে চালু করা হয়েছে জাতীয় পরিবেশ পদক, বৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু অ্যাওয়ার্ড ফর ওয়াইল্ডলাইফ করজারভেশন, বঙ্গবন্ধু নদী পদক ইত্যাদি।

বঙ্গবন্ধু ভালোবেসেছিলেন বাংলার দেশ, মাটি, মানুষ ও এ দেশের প্রকৃতি-পরিবেশকে। আর তাই প্রকৃতি-পরিবেশ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর সামাজিক আন্দোলন ও উদ্যোগ চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে এই বাংলার বুকে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭