ইনসাইড আর্টিকেল

বঙ্গবন্ধু ও গনতন্ত্রে জন্য সংগ্রাম

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 11/12/2020


Thumbnail

১৮ কোটি মানুষ নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ গনতান্ত্রিক রাষ্ট্র। কীভাবে শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের গনতান্ত্রিক যাত্রা ? সেই যাত্রাপথে কোন রাজনৈতিক দল কিভাবে হেটে ছিল, সেই গল্পের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস নিয়ে আমাদের আজকের পর্ব। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে দিয়ে জন্ম নেয়া এ দেশের স্বাধীনতার পালে হাওয়া দিয়েছিল বিশেষ করে কোন কোন ঘটনাগুলো ? ভাষা আন্দোলন, শিক্ষা কমিশনের রিপোর্টের বিরুদ্ধে আন্দোলন, ছয় দফা দাবি ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, আর সেখানে শেষ পেরেকটি ঠুকেছিল ১৯৭০ সালে পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচনের ফলাফল। 

যেকোনো দেশকে একটি গনতান্ত্রিক দেশ হয়ে উঠতে যে তিনটি বিষয় অত্যাবশ্যাকিয় দরকার তা হলো -

১  সংবিধান প্রণয়ন 

২  নিরপেক্ষ নির্বাচন ও

৩  নাগরিক অধিকার নিশ্চিতকরণ

আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, রাষ্ট্রীয় সংবিধান প্রনয়ন করতে পাকিস্তানের সরকারের লেগেছিল প্রায় আট বছর। ১৯৫৬ সালে গৃহীত হওয়া এ সংবিধান আবার বিলুপ্ত হয় ১৯৫৮ সালে। মজার ব্যাপার হল, পাকিস্তানের গনতান্ত্রিক ধারা ব্যহত করে ক্ষমতা দখল করেন সে সময়কার সেনাপ্রধান আইয়ুব খান। স্বৈরশাসন বজায় রাখার জন্য তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর নেতাকর্মীদের উপর চাপিয়ে দেন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা। তবে পরবর্তীতে ছাত্র-আন্দোলনের তোপের মুখে তাদের মুক্তি দেওয়া হয় এবং আইয়ুব খান ১৯৬৯ সালের ২৫ মার্চ ইয়াহিয়া খানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে বিদায় নেন।

ইয়াহিয়া খান ক্ষমতায় এসেই ঘোষনা দেন জাতীয় নির্বাচনের। আর এটাই পাকিস্তানের প্রথম  জাতীয় পরিষদ নির্বাচন !!! জ্বী ঠিক শুনেছেন। পাকিস্তানের প্রথম জাতীয় পরিষদ নির্বাচন হয়েছিল ১৯৭০ সালে । ব্রিটিশদের থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার প্রায় ২৩ বছর পর !!! 

নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া পূর্ব পাকিস্তানে আওয়ামী লীগ পেয়েছিল ১৬৯ টি আসনের মধ্যে ১৬৭ টি আসন। আর পশ্চিম পাকিস্তানে ভুট্টোর নেতৃত্বে পিপলস পার্টি পায় ৮৮ টি আসন তা সত্বেও আওয়ামী লীগকে সরকার গঠনে বাঁধা দেয়  ইয়াহিয়া খান এবং স্থগিত করে দেয় জাতীয় পরিষদ অধিবেশন। তারপর বাংলাদেশের বুকে নেমে আসে ২৫ মার্চের কালরাত। আর এখান থেকেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সূচনা হয় এবং ত্রিশ লক্ষ শহীদের বিনিমিয়ে অর্জিত হয় বাংলাদেশর স্বাধীনতা । 

শেখ মুজিব, সদ্য স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশের  প্রথম রাষ্ট্রপতি ও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, যিনি বাঙালির অধিকার রক্ষায় ব্রিটিশ ভারত থেকে ভারত বিভাজন আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং পরবর্তীকালে পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে কেন্দ্রীয়ভাবে নেতৃত্ব প্রদান করেছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতি, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং পরবর্তীকালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। এসকল কারণে, তাকে বাংলাদেশের “জাতির পিতা” হিসেবে গণ্য করা হয়। জনসাধারণের কাছে তিনি “বঙ্গবন্ধু”, “শেখ মুজিব” এবং “শেখ সাহেব” নামেই অধিক পরিচিত ছিলেন। 

বঙ্গবন্ধু গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য  ১৯৭২ সালের দশ জানুয়ারি দেশে ফিরেই সংবিধান রচনার কাজে হাত দেন । নতুন এই সংবিধান কার্যকর হয় ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর  থেকে। সংবিধানে জায়গা করে নেয় সমাজতন্ত্র, ধর্ম নিরপেক্ষতা এবং জাতীয়তাবাদের পাশাপাশি “গণতন্ত্র”  সদ্য প্রনীত সংবিধানের ভিত্তিতেই ১৯৭৩ সালে হয় স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় নির্বাচন। নির্বাচনে ৩০০ টি আসনের মধ্যে ২৯৩ টি আসন পেয়ে জয় লাভ করে আওয়ামী লীগ । কিন্তু নির্বাচিত আওয়ামী লীগ সরকার যুদ্ধ-পরবর্তী বিশৃঙ্খলা  ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় হিমশিম খায়। এই অবস্থা থেকে উত্তরনের জন্য এবং জনগণের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে “বাকশাল” নামক একটি একদলীয় রাজনৈতিক ধারা প্রণয়ন করেন। এটি ছিল মুক্তিযুদ্ধের পর বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লব। ১৯৭৫ সালের ২৪ জানুয়ারি বাংলাদেশের সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীবলে বহুদলীয় সংসদীয় সরকার পদ্ধতি পরিবর্তন করে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়। দলটি দ্বিতীয় বিপ্লব নামক তত্ত্বের অধীনে সংস্কারগোষ্ঠীর একটি অংশ হিসেবে রাষ্ট্র সমাজতন্ত্রের পক্ষে মত দেয়। দ্বিতীয় বিপ্লবের উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য বাকশাল ছিল সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী পরিষদ। যার মূল উদ্দেশ্য ছিল একক ভাবে সদ্য স্বাধীন হওয়া ও যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নতি সাধন। কিন্তু এ বিপ্লব বাস্তবায়নের শুরুতেই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নির্মমভাবে  স্বপরিবারে হত্যা করা হয়  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।

দেশে এক অরাজক পরিস্থিতি নেমে আসে, ঘটতে থাকে পাল্টা পাল্টি সামরিক অভ্যুথান। আর প্রায় ১৫ বছরের জন্য দেশ চলে যায় স্বৈরশাসকদের দখলে। ১৯৭৬ সালে ক্ষমতা দখল করে তৎকালীন সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান। ক্ষমতা দখল করেই সংবিধানের অন্যতম মূলনীতি “ধর্মনিরপেক্ষতা” বাদ দিয়ে সর্ব শক্তিমান আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা এবং বিশ্বাস কথাটি স্থাপন করেন। এবং সংবিধানের অন্যান্য ধারাতেও বেশকিছু পরিবর্তন আনেন তিনি। ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে আততায়ীর হাতে নিহত হন জিয়াউর রহমান।

ক্ষমতার পালাবদলে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করেই ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করেন । তার এই অবৈধ শাসন চলে প্রায় দশ বছর। তাঁর এই স্বৈর শাসনের বিরুদ্ধে ধীরে ধীরে গনতন্ত্রের জন্য আন্দোলন দানা বাঁধতে শুরু করে। তবে সেসব তথ্য নিয়ে কথা হবে আগামীকাল। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন বাংলা ইনসাইডারের সাথেই থাকুন।  



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭