ইনসাইড আর্টিকেল

সর্বশ্রেষ্ঠ দামাল ছেলে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 12/12/2020


Thumbnail

জাতিক পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজেই ছিলেন তারুণ্যের প্রতিক। ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন দামাল, দুরন্ত ও নির্ভীক। কিশোর বঙ্গবন্ধু খেলতে খুব ভালবাসতেন। ছোট্ট বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে পছন্দের খেলা ছিল ফুটবল। তাইতো কিশোর বয়স থেকেই পারদর্শী ছিলেন ফুটবলে। জার্সি জড়িয়ে মাঠ মাতিয়েছেন ভলিবল ও হকিতেও। 

বঙ্গবন্ধুর খেলার প্রতি ভালোবাসা তার রক্তে মিশে আছে। বঙ্গবন্ধুর পিতা শেখ লুৎফর রহমানও ছিলেন একজন পরিচিত ফুটবলার। শেখ লুৎফর রহমান গোপালগঞ্জ অফিসার্স ক্লাবের ফুটবল টিমের অধিনায়কও ছিলেন। ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে তিনি ক্লাবটির সেক্রেটারির দায়িত্বও পালন করেন। 

ফুটবল খেলাতে শেখ লুৎফর রহমান বিশেষ সুনাম কুড়িয়েছিলেন।অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান লিখেছেন ‘আমার আব্বাও ভাল খেলোয়াড় ছিলেন। তিনি অফিসার্স ক্লাবের সেক্রেটারি ছিলেন। আর আমি মিশন স্কুলের ক্যাপ্টেন ছিলাম। আব্বার টিম ও আমার টিম যখন খেলা হত তখন জনসাধারণ খুব উপভোগ করত।’

কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে পড়া অবস্থায় তিনি কলকাতার বিখ্যাত দুই ক্লাব এরিয়ান্স ও মোহামেডানে খেলার প্রস্তাব পেয়েছিলেন। কিন্তু সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেননি। দেশে ফিরে তিনি ঢাকার একটি শৌখিন ক্লাবে কিছুদিন খেলে যোগ দেন ঐতিহ্যবাহী ওয়ান্ডারার্সে।

১৯৪০ সালের শুরুতে তিনি রাজধানী ঢাকায় ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের সঙ্গেও জড়িয়ে পড়েন। চল্লিশ দশকে বগুড়ায় অনুষ্ঠিত এক জনপ্রিয় টুর্নামেন্টে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ওয়ান্ডারার্স অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়। ওই ম্যাচে ফাইনালে ওয়ান্ডারার্স ৫-০ গোলে জয়ী হয়। তখনকার সত্তর মিনিটের ম্যাচে প্রথমার্ধেই বঙ্গবন্ধুর দেওয়া অসাধারণ ২ গোলে ওয়াল্ডারার্স এগিয়ে থাকে। দ্বিতীয়ার্ধে তিনটি গোল হয় তার নিখুঁত পাসে। টুর্নামেন্টে সেরা ফুটবলারের পুরস্কার পান বঙ্গবন্ধু। 

এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘রাজনীতিতে ব্যস্ততার কারণে বঙ্গবন্ধু বেশিদিন খেলতে পারেননি। যদি খেলতেন তিনি চল্লিশ দশকে এশিয়ার অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার হতে পারতেন।‘

খেলাধুলার প্রতি তার ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ দেখা গেছে ক্রীড়াঙ্গনে। তিনি একাধারে সফল রাষ্ট্র নায়ক, খেলোয়াড় ও ক্রীড়া সংগঠক। দেশের সব বিষয়ে ছিল তার সমান দৃষ্টি। তিনি ক্রীড়াঙ্গনেও রেখে গেছেন অনন্য অবদান। খেলাধুলার অনুরাগের পাশাপাশি ক্রীড়া-উন্নয়নে ছিল তার বিশেষ নজর।

ক্রিকেটের প্রতি ছিল অগাধ ভালোবাসা। খেলাধুলাকে ভালবেসে দেশকে পুর্নগঠনের অংশহিসেবে একেও প্রাধান্য দেন। সেই ভালোবাসার তাগিদে ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড বিসিসিবি গঠন করেন- যা বর্তমানে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড বিসিবি নামে পরিচিত। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের ক্রীড়াঙ্গনকে এগিয়ে নিতে তিনি ১৯৭২ সালে গঠন করেন ক্রীড়া নিয়ন্ত্রণ সংস্থা। 

বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার তার পরিকল্পনা থেকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আজকের বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি)। এক কথায় রাষ্ট্রনায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই ক্রীড়াঙ্গনে প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন সংক্ষেপে বাফুফে, একসময়ের দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় বাংলাদেশের ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা এটি। বাফুফের যাত্রাও শুরু হয়েছে ১৯৭২ সালে। এর দুবছর পরেই বাফুফে পেয়ে যায় ফিফা ও এএফসির সদস্যপদ। 

বঙ্গবন্ধু ক্রীড়াঙ্গনের কিশোর-যুবকদের সম্পৃক্ত করার তাগিদ অনুভব থেকেই যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমকে নিজ থেকে খতিয়ে দেখতেন।

১৯৭২ সালের মে মাসে ঢাকায় খেলতে আসে ভারতীয় ফুটবলের অন্যতম সেরা দল কলকাতা মোহনবাগান। প্রথম ম্যাচে কলকাতা মোহনবাগান ঢাকা মোহামেডানকে হারালেও পরের ম্যাচে হোঁচট খায় সফরকারীরা। দ্বিতীয় ম্যাচে মোহনবাগান ঢাকা একাদশের মোকাবেলা করে। ম্যাচের দিন প্রধান অতিথি হিসেবে মাঠে উপস্থিত থেকে খেলোয়াড়দের মনোবল চাঙ্গা করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে সেই দিন দুর্দান্ত এক জয় উপহার দিয়েছিলেন ফুটবলারা।

১৯৭৩ সালে বাংলাদেশে খেলতে আসে রাশিয়ার মিন্সক ডায়নামো ক্লাব। ফুটবল প্রেমি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠত্ব বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছোট ছেলে শেখ রাসেলকে নিয়ে ভিআইপি গ্যালারিতে বসে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের বঙ্গবন্ধু খেলোয়াড়দের অনুপ্রেরণা যোগাতেন। দলের সবার সঙ্গে কুশল বিনিময় করে ছবিও তুলতেন বঙ্গবন্ধু। ১৯৭৫ সালে মালয়েশিয়ার মারদেকা ফুটবল টুর্নামেন্টে খেলতে গিয়েছিলো ফুটবল দল। খেলোয়াড়দের উজ্জীবিত করতেই জাতির জনক তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবর রহমান জাতীয় দলের বিদায়ক্ষনে গনভবনে ডেকেছিলেন। খেলাধুলার প্রতি ভালোবাসা না থাকলে এমনি সম্ভব নয়।

(বাফুফে) বর্তমান সভাপতি কাজী সালাহউদ্দিন বলেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন একজন ক্রীড়াপ্রেমী মানুষ। তার হাজারো ব্যস্ততা সত্বেও তিনি আমাদের সময় দিতেন। তার বড় ছেলে শেখ কামাল আমার ক্লাসমেট ছিল। বিকেল বেলা খেলাধুলা শেষে শেখ কামালের সঙ্গে ওদের বাসায় যেতাম।  

সালাহউদ্দিন আরো বলেন, শেখ কামালের নেতৃত্বে আমরা আইএফএ শিল্ড খেলার জন্য ভারত সফরে গিয়েছিলাম। তখন শেখ মুজিবুর রহমান ফোন করে কামালকে বললেন, সব খেলোয়াড়দের জানিয়ে দিও, যদি তোমরা চ্যাম্পিয়ন হতে পারো তাহলে তোমাদের বিমানে করে দেশে নিয়ে আসা হবে। 

পিতার মতই খেলাধুলার প্রতি তার আগ্রহ, আন্তরিকতা রয়েছে। তিনি ফুটবল, ক্রিকেটসহ সব খেলা ও খেলোয়াড়দের জন্যে আন্তরিকভাবে কাজ করছেন। ক্রীড়াঙ্গনের প্রতি তার ভালোবাসা জাতি আজীবন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭