ইনসাইড আর্টিকেল

আবেগ জড়ানো কাপ্তান বাজার কবুতরের হাট


প্রকাশ: 22/12/2020


Thumbnail

কবুতর শান্তির প্রতীক। কবুতর পায়রা কিংবা কপোত নামেও পরিচিত। কবুতর নিয়ে লেখা হয়েছে অনেক গান, গল্প, কবিতা। ‘যা কবুতর, চিঠি নিয়ে যা ’, ‘যাও পাখি বলো তারে সে যেন ভোলে না মোরে’ এমন কত কত শত গান লেখা হয়েছে যুগ যুগ ধরে। শুধু আমাদের দেশেই নয় কবুতর নিয়ে অন্যান্য ভাষা, সাহিত্যেও সৃষ্টি হয়েছে অনেক সাহিত্যকর্ম। শুধু শিল্প-সাহিত্যে নয়, প্রাচীনকালে পত্র যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম ছিল কবুতর। পৃথিবীতে প্রযুক্তির ছোঁয়া যখন লাগেনি তখন কবুতরের মাধ্যমেই দূর দূরান্তে চিঠি আদান-প্রদান করা হতো।

প্রযুক্তির ছোঁয়ায় যোগাযোগের অভূতপূর্ব উন্নয়ন হলেও বাঙালির জীবনের সাথে কবুতরের সম্পর্ক আজও গভীর। অনেকেই শখের বশে কবুতর পুষেন। কিশোর থেকে বৃদ্ধ প্রায় সব বয়সের শৌখিন কবুতর প্রেমীরা কবুতর পালন করেন গভীর মমতা ও উচ্ছ্বাস নিয়ে। নিজেদের আনন্দ, উচ্ছ্বাস এবং ভালোবাসা একে অপরের মাঝে ছড়িয়ে দিতে প্রতি সপ্তাহের শুক্রবার কবুতরপ্রেমীরা একত্রিত হন গুলিস্থানের কাপ্তান বাজারের কবুতরের হাটে। সকাল ৭টা থেকে এই বাজার জমতে শুরু করে। রাজধানী ও এর আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন কবুতর নিয়ে এই হাটে আসেন। আর এই কেনাবেচা চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত।

সারা পৃথিবীর প্রায় ২০০ জাতের কবুতরের মধ্যে বাংলাদেশে আছে প্রায় ৩০ জাতের কবুতর। বিভিন্ন রং, বৈশিষ্ট্য, গুণাগুণ, চোখের রং ও আকৃতির ওপর ভিত্তি করে কবুতরের নামকরণ বা জাত ঠিক করা হয়। কোনও কবুতর বড়, কোনটা ছোট। কোনও কবুতর দেখতে সুন্দর আবার কোনটা আকাশে চমৎকার খেলা দেখায়। এক এক জাতের কবুতরের এক এক গুণ। বাংলাদেশে পাওয়া যায় এমন জাতগুলো হলো— দেশি কবুতর গোলা, হোমার বা হোমিং পিজিয়ন, গিরিবাজ, ভারতীয় জাতের লাক্ষা, শৌখিন সিরাজী, কাগজি, চিলা, গোররা, চুইনা, রান্ট, প্রিন্স, জ্যাকোবিন, পটার, ফ্রিল ব্যাক, স্ট্রেসার, মডেনা, মুসল দম, নোটন ও কিং। বাংলাদেশে কবুতরের জাতের মধ্যে গিরিবাজ সবচেয়ে জনপ্রিয়।

গুলিস্তানের কাপ্তান বাজারের এই কবুতরের হাটে সবচেয়ে দামি ‘হোমার’ জাতের কবুতর। এক জোড়া কবুতরের দাম লাখ টাকারও বেশি। এই কবুতরের বিশেষত্ব হল, এরা অনেক সময় ধরে উড়তে পারে। প্রাচীনকালে এই কবুতর উড়াল প্রতিযোগিতায় ব্যবহার করা হত। এছাড়া যত দূর থেকেই এই কবুতরকে ছেড়ে দেওয়া হোক না কেন, নির্দিষ্ট জায়গায় ফিরে আসবে। তবে এখন এত দামের কবুতর হাটে আসেনা বলে জানান কবুতরের পাইকার ব্যবসায়ী শহীদ।

গুলিস্তানের কবুতরের এই হাট ঘুরে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় গিরিবাজ কবুতর। এই জাতের মধ্যেও বিভিন্ন প্রকারের কবুতর রয়েছে। এই জাতের কবুতর আকাশে ডিগবাজি খায় বলে এদের টাম্বলার বলে। এরা আকাশে অনেক ধরনের খেলা দেখাতে পারে। কবুতরপ্রেমী থেকে শুরু করে সবাই এই কবুতর পছন্দ করে। সবচেয়ে বেশি দেখা যায় সবুজ গলা ও লাল গলা গিরিবাজ। এদের জোড়ার দাম ৩০০ থেকে শুরু করে ৩০০০ টাকা পর্যন্ত হয়। এছাড়া বড় আকারের কবুতর কিং জাত বিক্রি হয় ১০ থেকে ২০ হাজার টাকায়, তীব্র ও জোরালো ডাকের র‌্যাগস জাত বিক্রি হয় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকায়, ময়ূরী জাত ২ থেকে ৩ হাজার টাকায়, সিরাজী জাত ৩ থেকে ৪ হাজার টাকায়, শাটিং জাত ২ হাজার টাকা জোড়ায় বিক্রি হচ্ছে।

একদিকে সঠিক দাম না পাওয়ায় বিক্রি হয়নি কবুতর, অন্যদিকে ইজারাদারকে দিতে হচ্ছে ১০০ টাকা। তাই ক্ষোভ নিয়েই হাট ত্যাগ করছেন অনেকে। বিশেষ করে হাটের নতুন বিক্রেতারা পড়েছেন আরো বিপাকে।

একদিকে হাটে যেমন বিভিন্ন ব্যক্তি আসেন তাদের পোষা কবুতর বিক্রি করতে, একইভাবে পাইকার বিক্রেতারাও কবুতর বিক্রি করে থাকেন এই হাটে। ক্রেতা কিংবা বিক্রেতা যেই হোক, কবুতরের এই হাট থেকে খাঁচা নিয়ে বের হলেই দিতে হবে ১০০ টাকা। এছাড়াও কেউ কবুতর বিক্রি করলে তাদের কাছে থেকে বিক্রির অর্থের ১০ শতাংশ হাটের ইজারাদারকে দিতে হয়। বিক্রি করতে আসা কবুতর বিক্রি না হলেও গুনতে হবে ১০০ টাকা। এই নিয়ে অসন্তোষ দেখা যায় ক্রেতা বিক্রেতাদের মধ্যে। এই হাট ছাড়া অন্য হাটে এত টাকা ইজারা দিতে হয়না। তবুও কেন এখানেই আসেন এমন প্রশ্নের জবাবে কবুতরপ্রেমীরা জানান, সাপ্তাহিক ছুটির দিনে এই হাট বসায় এখানে বেচাকেনা ভালো হয় এবং ভালো দাম পাওয়া যায়।

কবুতরের এই হাটে সকলেই ক্রেতা, আবার সকলেই বিক্রেতা। এদের কেউ কেউ আসেন ভিন্ন জাতের কিছু কবুতর কিনে নিজের সংগ্রহশালা সমৃদ্ধ করতে, আবার কেউ আসেন বাড়তি কিছু অর্থ উপার্জন করতে। কবুতরের পাশাপশি ভিন্ন কিছু পাখির দেখাও মিলে এই হাটে। ভোরের আলো ফোটার পর থেকে সূর্যের সাথে পাল্লা দিয়ে জমে উঠে কাপ্তানবাজার কবুতরের হাট। কবুতর প্রেমীদের কত আনন্দ-বেদনা, বিরহ-মিলনের সাক্ষী এই কবুতর হাট!



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭