ইনসাইড আর্টিকেল

তাজহাট জমিদার বাড়ি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 01/09/2017


Thumbnail

যেকোনো উৎসব বা আনন্দে সকলেই পরিবার পরিজন নিয়ে সুন্দর সাজানো-গোছানো পরিবেশে সময় কাটাতে চান। অনেকে আবার পছন্দ করেন ঐতিহাসিক প্রত্নতাত্ত্বিক কোনো স্থাপনা। প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনার পরতে পরতে জড়িয়ে থাকা ইতিহাস যাদের ভালো লাগে তাদেরই জন্য চমৎকার একটি স্থান রংপুরের তাজহাট জমিদার বাড়ি।



রংপুর শহর থেকে মাত্র তিন কি.মি. দূরে তাজহাট জমিদারবাড়ি। প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকতেই পিচঢালা রাস্তার দুই পাশে সারিবদ্ধ নারিকেল গাছ। প্রাসাদটি প্রায় ২১০ ফুটের মতো প্রশস্ত ও চারতলার সমান উঁচু। গঠনশৈলী প্রাচীন মুঘল স্থাপত্য থেকে অনুপ্রাণিত বলে মনে করা হয়। বাড়িটির পেছন দিকে গুপ্ত সিঁড়িও রয়েছে, যার কোনো একটি সুড়ঙ্গের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ঘাঘট নদে নেমে গেছে বলে শোনা যায়। তবে সিঁড়িটি এখন নিরাপত্তার কারণে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

নিচতলা থেকে সরাসরি দ্বিতীয় তলায় ওঠার জন্য রয়েছে সিঁড়ি, যার কারণে তাজহাট জমিদার বাড়িটি কিছুটা আহসান মঞ্জিলের মতই লাগে। ইতালি থেকে আমদানি করা দামি শ্বেত পাথরে তৈরি এই সিঁড়ি। বাড়ির দোতলায় ওঠার বিশাল শ্বেত পাথরের সিঁড়িসহ মোট চারটি সিঁড়ি আছে। এই ভবনে ২৮টি কক্ষ রয়েছে। নিচতলায় চারটি বড় কক্ষ এবং ১১ জোড়া কপাটবিশিষ্ট দরজা রয়েছে।



প্রাচীন রঙ্গপুরের ইতিহাস পুস্তক থেকে জানা যায় যে, মান্নালাল রায় রঙ্গপুরের মাহিগঞ্জে এসেছিলেন হীরা, জহরত ও স্বর্ণ ব্যবসার জন্য। প্রথমে তিনি নানা ধরণের নামী দামী হীরা, মানিক জহরত খচিত তাজ বা টুপির ব্যবসা করতেন। তাজ বিক্রির লক্ষে এখানে হাট বসতো যা পরবর্তীতে বিরাট প্রসিদ্ধি লাভ করে এবং এ তাজহাটকে কেন্দ্র করে এই জমিদারবাড়ির নামকরণ করা হয় তাজহাট জমিদার বাড়ি।

মান্নালাল বসবাস করার জন্য তাজহাটে একটি ভবন নির্মাণ করেন। তবে ভূমিকম্পে ভবনটি ধ্বংস হয়ে যায়। এতে তিনি আহত হয়ে পরে মারা যান। এরপর তাঁর দত্তক পুত্র গোপাল লাল রায় বাহাদুর জমিদারির দায়িত্ব পেয়ে এই প্রাসাদটি নির্মাণ করেন।

রংপুর শহর থেকে মাহিগঞ্জ পর্যন্ত যে সড়কটি রয়েছে এর নাম জি এল রায় রোড অর্থাৎ গোবিন্দ লাল রায় রোড। প্রায় তিন কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই রাস্তা এক দিন এক রাতে নির্মাণ করা হয়েছিল বলে এলাকায় জনশ্রুতি রয়েছে। জি এল রায় ছিলেন গোপাল লাল রায় বাহাদুরের পুত্র।



১৯৮৪ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট এরশাদের সরকার জমিদার বাড়িতে স্থাপন করে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশনের রংপুর বেঞ্চ। ১৯৯২ সালে হাইকোর্ট বেঞ্চ প্রত্যাহার করার পর ১৯৯৫ সালে জমিদার বাড়িটি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ২০০৫ সালের ২০ মার্চ রংপুর জাদুঘর স্থানান্তর করা হয় তাজহাট জমিদার বাড়িতে।

তাজহাট জমিদার বাড়ি জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে শত বছরের পুরোনো, ঐতিহ্যবাহী ও মূল্যবান অনেক নিদর্শন। এখানকার উল্লেখযোগ্য নিদর্শনগুলোর মধ্যে দেখতে পাওয়া যায় আরবি শিলালিপি, বেলে পাথরের বাংলা শিলালিপি, সাঁওতালদের ব্যবহৃত তীর, বল্লম, পোড়ামাটির পাত্র, পোড়ামাটির ময়ূর, ঊনবিংশ শতাব্দীতে পাওয়া পিতলের দুর্গা, শিবলিঙ্গ, পাথরের মূর্তি, উল্কাপিণ্ড, ঝাড়বাতি (ধাতব), কালো পাথরের সংস্কৃত শিলালিপি, বেগম রোকেয়ার স্বহস্তে লেখা চিঠি, তুলট কাগজে সংস্কৃত হস্তলিপি, ফার্সি কবিতা ইত্যাদি।



এছাড়া বাড়িটির চারদিকে রয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ শোভা বহন করা ফুলের বাগান এবং উত্তর ও দক্ষিণাংশে কামিনী, মেহগনি, কাঁঠাল ও আমবাগান। প্রাসাদের সামনে আছে সুবিশাল শানবাঁধানো তিনটি পুকুর।

ঢাকার কল্যাণপুর ও গাবতলী থেকে প্রতিদিন রংপুরের উদ্দেশ্যে নাবিল পরিবহন, গ্রীন লাইন, টি আর ট্রাভেলস, আগমনী পরিবহন, এস আর, শ্যামলী, হানিফ, কেয়া পরিবহনের ভোর হতে গভীর রাত পর্যন্ত অসংখ্য বাস ছাড়ে। রংপুরের জাহাজ কোম্পানি মোর অথবা শাপলা চত্তর থেকে অটো রিক্সায় চড়ে ২০/৩০ টাকায় তাজহাট জমিদার বাড়ি চলে যেতে পারবেন অতি সহজেই।

বাংলা ইনসাইডার/জেডএ



 

Save



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭