লিট ইনসাইড

ছক্কু মিয়ার গরু কেনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 02/09/2017


Thumbnail

গ্রামের সবাই বলাবলি শুরু করেছে ছক্কু মিয়া এবার ছক্কা মেরেছে। হঠাৎ করেই আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ। গত এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে তার এ আমূল পরিবর্তন। যেই ছক্কু প্রতিদিন ছেলেমেয়ে নিয়ে তিনবেলা পেটপুরে খেতেই পারতো না, সে কিনা এখন লাখোপতি।

ছটকু আহমেদ তার পুরো নাম। অভাবের তাড়নায় আহমেদ বাদ পড়ে ছটকু ছোট্ট হয়ে গিয়েছে ছক্কু। এই ছক্কু মিয়াই এখন লাখ লাখ টাকার মালিক।কিন্তু তার টাকার উৎস সম্পর্কে কেউ কিছু বলতে পারে না। নিশ্চয়ই কোনো আলাদিনের চেরাগ পেয়েছে, যার কল্যাণে তার অবস্থার এ বিরাট পরিবর্তন।

যাক সে কথা, সামনে কোরবানির ঈদ। এবারতো কোরবানি দিতে হবে। দিতেই হবে না শুধু, পছন্দ সই একটা গরু কিনতে হবে যেন গ্রামের আশেপাশে তার নামটা ছড়িয়ে যায়। গত বছরও পাড়া প্রতিবেশীদের বাড়ি থেকে দেওয়া মাংস দিয়েই ছেলেমেয়েদের নিয়ে কোরবানির ঈদ করতে হয়েছিল তাঁকে। এবার টাকার গরম বুঝানোর জন্য হলেও তো একটা যুত সই কোরবানি দিতে হয়।

স্ত্রী বলল- একলা একটা গরু কুরবানি দিবা, এত মাংস রাখবা কই ? একটা ফিরিজের দরকার না। তাইতো কথাটাতো মাথায়ই আসে নাই। পরের দিনই মার্কেট থেকে বড়সড় একটা ফ্রিজ নিয়ে আসলো। মেয়ে বলল- যত টাকা দিয়ে ফ্রিজ কিনেছো তার চেয়ে বেশি টাকায় যেন গরু কেনা হয়। ছক্কু মিয়া বলল- শুধু বেশি নয় প্রয়োজনে ডাবল টাকায় গরু কেনা হবে।

ঈদের তিন-চার দিন বাকি। গ্রাম থেকে প্রায় তিন-সাড়ে তিন কি.মি. দূরে বড়সড় একটা গরুর হাট বসে সপ্তাহে দু’দিন। ছক্কু মিয়া, তার ছেলে, শ্যালক আর একজন লোক সঙ্গে করে নিয়ে গেছে গরু কিনে বাড়ি আনার জন্য। অনেক ঘুরাঘুরি করেও পছন্দসই গরু মেলাতে পারছেনা। গরুর রং মেলেতো দাম মেলেনা, দাম মিললেও পছন্দ হয় না। একটা- না একটা সমস্যা থাকেই। এবার বাপ ছেলে দু’জনে দু’দিকে গেল। ছেলে গেল তার মামাকে নিয়ে, ছক্কু কাজের লোককে নিয়ে ঘুরতে লাগল। একটা গরু পছন্দ হলো, দালালের মাধ্যমে গরুর দামও প্রায় ঠিকঠাক,  ছেলে এসে গরু দেখে পছন্দ করল না। ছেলে কিছুতেইএ গরু আনবে না। দালাল নাছোড়বান্দা, কিছুতেই ছাড়বে না। অগত্যা দালালের হাতে পাঁচশ’ টাকার একটা নোট গুজে দিয়ে কেটে পড়ল ছক্কু মিয়া। এবার  তার সমস্ত রাগ গিয়ে পড়ল ছেলের ওপর। ঘুরাঘুরির এক পর্যায়ে ছেলে একটা ষাঁড় পছন্দ করল। দরদাম ঠিক করে গরু নিয়ে হাট থেকে মাত্র বের হয়েছে, রাস্তায় জটলার মধ্যে তাদের কেনা ষাড়টা এক লোককে গুতু মেরে রাস্তা থেকে খাদে ফেলে দিল, হাত-পা কেটে লোকটার রক্তে একাকার। তাড়াতাড়ি লোকটিকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেল ছক্কু মিয়া। ডাক্তার খরচ বাবদ এক হাজার টাকা গচ্ছা।

যন্ত্রনার যদি শেষ হতো তাহলে একটা কথা ছিল। গরু বাড়ি এনে ঠিকমতো বেঁধে রাখার আগেই গরু দে ছুট। গ্রামশুদ্ধ মানুষের মধ্যে হুলস্থুল লেগে গেল। দ্রুত টাকা দিয়ে লোক ঠিক করল গরুধরে আনার জন্য। এভাবে জায়গায় জায়গায় গচ্ছা দিয়ে ছক্কু মিয়ার যুতসই কোরবানি দেওয়ার শখ মিটে গেল। নাম ফাটানোর জন্য গরু কিনতে গিয়ে মনেহচ্ছে তার দম ফেটে যাচ্ছে।


বাংলা ইনসাইডার/এসএ/জেডএ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭