লিট ইনসাইড

গরুর গলায় কোন মালা?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 02/09/2017


Thumbnail

সেই সব দিনগুলোতে শীতকালে ঈদ হতো। বিকাল-সন্ধ্যায় নদীর পাড়ে হিম  বাতাসে যতটা সম্ভব মোটা কাপড় পরে খেলাধুলা করতাম আমরা। আর কোরবানির গরু দেখে মুগ্ধ হতাম অথবা হতাশ হয়ে পড়তাম। হাটবারে দুপুর শুরু হতে না হতেই কত কত গ্রামের মানুষ গরু নিয়ে পরানপুর বা লোহাগাড়া যেতে ব্যস্ত হয়ে পড়তো। কেউ কেউ যেত ভাটিয়াপাড়ার হাটে। আমরা কেবলই খেলাধুলার ফাঁকে গরু নিয়ে তুমুল কৌতূহল প্রকাশ করতাম। কোন গরুর স্বাস্থ্য দেখে নিজেরাই মাংসের ভাগ বসাতে চাইতাম। হঠাৎ দুয়েকটা গরুর সুন্দর সাজগোজ দেখে কিছুদূর তাঁর সঙ্গে হাটতাম। খেলা বন্ধ করে কিছুক্ষণ ভালোমন্দ সমালোচনা চালাতাম। বিক্রয়যোগ্য যেকোনো কিছুর উপস্থাপন বড় ব্যাপার তা বুঝার ক্ষমতা তখনো আসেনি। তবে মানুষের মনোরঞ্জনের জন্য সাজসজ্জার প্রয়োজনীয়তা আমার জন্মের আগে থেকেই চলে আসছে। কত কত বছর পার হয়ে গেলো; তখন থেকে গরু সাজসজ্জার ব্যাপারে এখনের মানুষ বেশি সচেতন। বদলেছে সেই সংখ্যা, পরিবর্তন হয়েছে সাজসজ্জারও।

কোন কোরবানির ঈদে হিঙ্গুল দাদা’র পালে জবরদস্ত এঁড়ে গরু হয়নি, এমন হতে দেখিনি। তবে এই বেচারা প্রথমদিকে গরুর  সাজসজ্জায় আস্থা রাখতে পারেনি। তাতে দুয়েক হাজার টাকা কম পেলেও সে বিষয় বোঝার প্রয়োজনীয়তা এই মুরুব্বীর ছিল না। এক বছর হিঙ্গুল দাদা’র পালে বিরাট সুদেহি এক এঁড়ে গরু হল। গ্রামে অত বড় গরু কেনার মানুষ পাওয়া কঠিন। দাদা সিদ্ধান্ত নিলো কোনো ভাবে ট্রাকে করে নিয়ে গরুটি ঢাকার হাটে উঠাবে। এরমধ্যে কোনো এক দলালের বুদ্ধিতে গরুকে সুন্দর করে সাজানো হলো। গলায় লাল কাগজের ফুলের মালা, চুটে জরি মাখা আর রঙ করা দড়ি দিয়ে দু’দিক থেকে বাঁধা হয়েছে। সেবারে বেশ চড়া দামে গরু বিক্রি করতে পেরেছিলেন এই ভদ্রলোক। এতে এলাকার মানুষের মনে দুই ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। প্রথমত, সবাই হিঙ্গুল দাদার বুদ্ধিমত্তার বাহবা জানায়। দ্বিতীয়ত, এলাকার অনেক গরু মালিক গরু সাজসজ্জায় বিশ্বাসী হয়।  এমনকি হায়দারের শুকনা গরুকেও ব্যাপক সাজসজ্জা করে হাটে যেতে দেখা যায়।  কমপক্ষে একটি রঙিন কাগজের মালা দেওয়া হয়েছিল প্রায় সব গরুকেই।

গরুর সাজালে একটু বেশি দাম পাওয়াই যায়, এমন কথা নিশ্চিত করে বলছি না। তবে দৃষ্টি আকর্ষনের সুবিধা হয় শতভাগ। যা বিক্রেতার জন্য জরুরি। আরেকটি বিষয় লক্ষণীয়। তা হচ্ছে- উৎসবের আমেজ তৈরি হয়। যা কোরবানির  ঈদ পালনে একটু আধটু হলেও প্রয়োজনীয়। এখন উন্নত প্রযুক্তির যুগ, এ যুগে সাঁজের মালা বানানোর উপায় অন্তহীন। রঙিন কাগজের বাইরেও রকমারি মালা পরাতে দেখা যায় গরুর গলায়। এতে জাতি খুব উদ্ধার না হলেও উৎসবের ঐতিহ্য মাথা তুলে দাড়ায়, মানুষে মানুষে সমালোচনা হয়। অতঃপর ঈদ উৎসবমুখর হয়ে ওঠে।

কয়েক বছর আগের কথা। কোরবানির ঈদ সামনে রেখে গাবতলী হয়ে বাড়ি যাচ্ছিলাম। আমিন বাজার পার হতে বেশ সুদেহি এক গরু ঘিরে মানুষের ভিড় দেখলাম। গরুর মালিক তাকে বেঁধে রেখে একটু পানিটানি খাচ্ছিলো হয় তো। অন্যরকম সাঁজ দেখে এরই মধ্যে মানুষে মানুষে গবেষণা শুরু হয়েছে। বাসের কোন কোন যাত্রীকেও অংশগ্রহণ করতে দেখা গেলো। কেউ বলছে, গরুর গলায় যেই মালা লাল-নিল আলো দিচ্ছে তা নিতান্তই ব্যাটারি চালিত কিছু লাইট, এতে এত উত্তেজনার কিছু নেই, সমালোচনারও দরকার দেখিনা। পাশের দুয়েক জন তাকে সমর্থন করলেও অন্য সিটের দুই বন্ধু ফিসফিস করে বলতে লাগলো- সমাচলনা করার কিছু নেই আবার এই লোক নিজেই সমালোচনা করছে। আমি মনে মনে ভাবলাম, এতে হয় তো গরুর মালিক বিশাল অংকের টাকা লাভ করবে না, কিন্তু উৎসব আমেজ আনতে তাঁর অবদান অন্য গরুর মালিক থেকে একটু হলেও বেশি। সে খাতিরে এই মালিককে একটা ধন্যবাদ দিতে পারলে মন্দ হতো না। আবার ভাবলাম, গরুর মালা দেখে মজা পাওয়ার বয়স আমার নেই এখন। একবার ছোটবেলার স্মৃতিচারণও হল। স্কুলে পড়ার সময়ে বাড়িতে না বলে চুপিচাপি বন্ধুরা মিলে কোরবানির গরুর হাট দেখতে গিয়েছিলাম একবার। তখন ঘুরে ঘুরে বড় গরুর পাশে দাঁড়িয়ে থাকতাম। খুব আগ্রহ নিয়ে দেখতাম কোনটা  কত দামে  বিক্রি হচ্ছে। আবার নিজেদের মধ্যে সমালোচনা করতাম- কোন গরুর সাঁজ সবচেয়ে সুন্দর হয়েছে। কোন গরুর গলায় কোন মালা। দূর থেকে কোন গরুর গলায় মালা দেখলে মনে মনে প্রশ্ন জাগতো-  এই গরুর গলায় কোন মালা? কাগজের নাকি প্লাস্টিকের, নাকি অন্যকিছুর।  চাপা  কৌতূহল তাড়া করতো ভীষণ ভাবে।

বাংলা ইনসাইডার/এএসি/জেডএ

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭