ইনসাইড হেলথ

টিকায় যত মহামারী ঠেকিয়েছে বিশ্ব

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 13/01/2021


Thumbnail

পৃথিবী সৃষ্টির সময় থেকে একের পর এক মহামারী এসেছে। নতুন ভাইরাসের আবির্ভাবে দেখা দেয় এসব মহামারী। পৃথিবীর বড় বড় বিজ্ঞানী, গবেষক, চিকিৎসকরা মহামারী ঠেকাতে এর টিকা আবিষ্কারের জন্য উঠে পড়ে লাগে এবং এইসব মহামারী নিয়ে গবেষণা চলছে প্রতিনিয়ত।

ব্ল্যাক ডেথ (বিউবোনিক প্লেগ): পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি লোকের প্রাণহাণি ঘটায় ‘ব্ল্যাক ডেথ’। এটি ছিল মূলত বিউবোনিক প্লেগ। বিভিন্ন সময়ে এই রোগে ১৬২৯ সালে ইউরোপের মিলান, ভেনিস ও ফ্লোরেন্স শহরে, ১৬৬৫ সালে ইংল্যান্ডে, ১৭২০ সালে ফ্রান্সের মার্সেই শহর ও ১৮৫৫ সালে চীনের ইউনান প্রদেশে এ রোগ আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। 

ইতিহাস থেকে জানা যায়, এ রোগে মারা যায় প্রায় ২০ কোটি মানুষ। ১৮৯৭ সালে ওয়ালডেমার হাফকিন প্লেগের ভ্যাকসিন আবিস্কার করেন। তবুও এই ভ্যাকসিন পৃথিবীতে সর্বপোরি স্বীকৃত নয়।

কলেরা: কলেরা রোগ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশে, বিশেষ করে ভারতীয় উপমহাদেশে আবির্ভূত হয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়ে। গত দুশো বছরে সাত বার কলেরা মহামারি আকারে দেখা যায়। এশিয়া, উত্তর আফ্রিকা, পূর্ব ইউরোপ ও রাশিয়ায় কলেরায় কয়েক লক্ষাধিক লোক মারা যায়।

পাসিনি, কোচ, লুই পাস্তুর ও ফেরানের গবেষণা সূত্র ধরে ১৮৮৫ সালে কলেরার টিকা আবিস্কৃত হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) বলছে, এখনও বিশ্বে প্রতি বছর ১৩ থেকে ৪০ লক্ষ মানুষ কলেরায় আক্রান্ত হয়, মারা যায় ২১ হাজার থেকে ১ লক্ষ ৪৩ হাজার।

গুটিবসন্ত: ইতিহাস প্রচলিত ধারণা, লিথুয়ানিয়ায় সপ্তদশ শতকে মারা যাওয়া একটি শিশুর মমি সম্ভবত পাল্টে দিতে যাচ্ছে গুটিবসন্ত রোগের। শিশুটির ডিএনএ পরীক্ষা করে গুটিবসন্তের ভাইরাসের উপস্থিতি নিয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

বিংশ শতাব্দীতেই পুরো বিশ্বজুড়ে প্রায় ৩০ কোটি মানুষ মারা যায় এই গুটিবসন্ত রোগে। অবশেষে ১৯৮০ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ঘোষণা দেয় যে, গুটিবসন্ত রোগটি শতভাগ নির্মূল সম্ভব হয়েছে। শেষবার এ রোগে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছিলো ১৯৭৭ সালে। 

ডঃ জেনার আবিষ্কৃত প্রতিরোধ ব্যবস্থা অনুসরণ করে করে গুটিবসন্ত রোগকে পৃথিবী থেকে বিতাড়িত করতে প্রায় ২০০ বছরের মতো সময় লেগে যায়। এটি গুটিবসন্তের প্রথম আবিষ্কৃত টিকা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) অবদানে টিকাদানের ফলে এই গুটিবসন্তই বর্তমানে প্রথম ও একমাত্র নির্মূলকৃত রোগ।

ফ্লু (ইনফ্লুয়েঞ্জা): এই রোগটির নাম ফ্লু। এর ভাইরাসের নাম ইনফ্লুয়েঞ্জা। এ ভাইরাসটি এক এক সময়ে এক একটি রূপ নিয়ে পৃথিবীতে মহামারি সৃষ্টি করেছে। এটি আক্রান্ত লোকের হাঁচি, কাশি থেকে বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায়।

১৮৮৯ সালে ‘রাশিয়ান ফ্লু’-তে পূর্ব ইউরোপ ও রাশিয়ায় মারা যায় ১০ লক্ষ মানুষ। ১৯১৮ সালে ‘স্প্যানিশ ফ্লু’-তে সারা বিশ্বে প্রায় ২-৫ কোটি মানুষ মারা যায়। বিভিন্ন সময় এই ফ্লু বিভিন্ন নামে আভির্ভাব হয়। ২০০৯ সালে এ ভাইরাসটি আঘাত হানে ‘সোয়াইন ফ্লু’ নামে। তখন এতে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় ১ থেকে ৪ লাখ মানুষ।

ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের বিজ্ঞানীরা ২০০৯ সালে সোয়াইন ফ্লু এর টিকা আবিষ্কারের দাবী জানায়।

ইবোলা: ১৯৭৬ সালে আফ্রিকার সুদান ও জায়ার হতে ইবোলা যাত্রা শুরু করে। এটি রক্তের মাধ্যমে সংক্রামিত হয়। আফ্রিকা মহাদেশ থেকে এই ভাইরাস আমেরিকা মহাদেশে ছড়ায়। তবে অন্য মহাদেশে ইবোলা খুব বেশি একটা ছড়াতে পারেনি। ২০১৩ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত আফ্রিকায় ইবোলার প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পায়। এতে প্রায় ১২ হাজার লোক মারা যায়।

ইবোলার প্রাদুর্ভাবের তিন বছর পর ২০১৯ সালে এসে এর ভ্যাকসিন আবিস্কৃত হয়।

ডেঙ্গু: ১৭৭৯ সালে প্রথম ডেঙ্গু মহামারী আকারে ছড়িয়ে ছিল হয়েছিল বলে ধারনা করা হয়। বাংলাদেশে ২০১৯ সালে ডেঙ্গু ছিল এক আতঙ্কের নাম। শরীরে ব্যথার কারণে একে `হাড়ভাঙ্গা জ্বর` বলেও ডাকা হতো। 

২০১১ সালে প্রথম ডেঙ্গুর টিকা আবিষ্কারের দাবী করে যুক্তরাষ্ট্রের নাভাল মেডিকেল রিসার্চ সেন্টার। এরপর বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দেশ ডেঙ্গুর টিকা আবিস্কারে কাজ করে যাচ্ছে।

পোলিও: আমেরিকায় ১৯৫০ সালে শিশুদের মধ্যে পোলিও রোগ হিসাবে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছিল। এটি সংক্রমিত হয়েছিল হাজার হাজার শিশুর মাঝে। পঙ্গুত্ব এবং শিশুমৃত্যু এই রোগকে একটা বিভীষকায় পরিণত করেছিল।

জোনাস এডওয়ার্ড সল্ক প্রথম পোলিও টিকার উদ্ভাবন করেন। ১৯৫২ সালে সর্বপ্রথম এর পরীক্ষা চালান। ডাঃ টমাস ফ্রান্সিস জুনিয়র ১৯৫৫ সালের ১২ এপ্রিল গোটা বিশ্বে এই টিকার কথা ঘোষণা করেন। আলবার্ট সাবিন পোলিওর দ্বিতীয় প্রকার টিকা উদ্ভাবন করেন, যা কিনা মুখ দিয়ে খাওয়া যায়। ১৯৫৭ সাল থেকে সাবিনের এ টিকা দেয়া শুরু হয়।

করোনা: ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের মতো আরেকটি ভাইরাস আবির্ভূত হয় যার নাম করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯। ২০০৩ সালে প্রথম করোনা ভাইরাস আবির্ভূত হয়। তবে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে চীনে ভাইরাসটি দেখা দেয় এবং ২০২০ বছর জুড়ে ভাইরাসটি মহামারী আকার ধারণ করে।

এই মহামারী ঠেকাতে বর্তমানে বিভিন্ন দেশ টিকা আবিষ্কারের দাবী করেছে। সেগুলো হলো- স্পুৎনিক-৫ (রাশিয়া), বঙ্গভ্যাক্স (বাংলাদেশ), অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রোজেনিকা ভ্যাকসিন (যুক্তরাজ্য), সিনোভ্যাক (চীন), ফাইজার-বায়োএনটেক (যুক্তরাষ্ট্র-জার্মানি), ‘কোভিশিল্ড’ ও ‘কোভ্যাক্সিন’ (ভারত), মর্ডানা (যুক্তরাষ্ট্র)

প্লেগ, কলেরা, ফ্লু, সার্চ-মার্স-করোনা, ইবোলা, জিকা, চিকুনগুনিয়া, ডেঙ্গু ইত্যাদি মহামারী বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে। বর্তমানে এ সব রোগের অনেক রোগই এখনও আছে, আবার অনেক রোগ চিরতরে নির্মূল হয়ে গেছে। কোন কোন মহামারী সময়ের সাথে প্রাকৃতিকভাবেই দূর হয়েছে, কোন মহামারী ঠেকাতে প্রয়োজন হয়েছে টিকা। ভবিষ্যতে হয়েতা আবার নতুন কোনও এক রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটবে, বিশ্ববাসী ব্যস্ত হবে নতুন মহামারীর টিকা আবিষ্কারে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭