ইনসাইড আর্টিকেল

শীতের আমেজকে পূর্ণতা দেয় পিঠা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 18/01/2021


Thumbnail

ঋতু বৈচিত্রের দেশ বাংলাদেশ। বৈচিত্রময় এই ঋতুর কারণে ঘুরে ফিরে পিঠা বাঙালী জীবন ও সংস্কৃতির এক অপরিহার্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আদিকাল থেকেই প্রতিবছর নানা রকমের পিঠা উৎসব চলে বাঙালীর ঘরে ঘরে। নতুন ধান কাটার উৎসব থেকেই শুরু হয় পিঠার মহউৎসব। তবে সবচেয়ে বেশি পিঠা পুলির আয়োজন  হয় শীতকালে। কারণ বাঙালীর পিঠা তৈরির মূল উপকরণ খেজুরের রস ও গুড় পাওয়া যায় এই শীতকালেই। বাঙালীর কত বাহারী রকমের পিঠা আছে তা সুনির্দিষ্ট তালিকা করা আজও সম্ভব হয় নি। তবে ১৯৯১ সালে শিশু একাডেমী প্রাঙ্গণে যে পিঠা মেলা হয়েছিল সেখানে ১০৬ রকমের পিঠা প্রদর্শিত হয়েছিল।

পিঠা সাধারণত মেহমান এলে, নবান্ন, পৌষসংক্রান্তি, চৈত্রসংক্রান্তি, জামাই খাওয়া, বিয়ে, খৎনা, সামাজিক অনুষ্ঠান ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে বানানো হয়। শীতকালে যে সকল পিঠা বেশি জনপ্রিয় তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোঃ-

চিতোই পিঠাঃ চিতোই পিঠার নাম অঞ্চলভেদে বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। কোথাও চিতাই, সাতপ, কাচিখুচা, ছাঁচের পিঠা, সাজের পিঠা ইত্যাদি নামেও পরিচিত। এ পিঠা গরম গরম মাংসের ঝোল দিয়ে খেতে সুস্বাদু ও মজাদার। খেজুরের রস ও দুধ দিয়ে ভিজিয়ে এই পিঠা খাওয়া হয়। তখন এর নাম হয় দুধ পিঠা বা ভেজানো পিঠা। তবে বর্তমানে ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অলিতে গলিতে এই চিতোই পিঠা বানিজ্যিকভাবে হরেক রকমের ভর্তা দিয়ে বিক্রি করে থাকে। 

 ভাপা পিঠাঃ শীতের অন্যতম প্রধান পিঠা হলো ভাপা পিঠা বা ধুপি পিঠা। চালের গুড়া, গুঁড়, নারকেল কোড়া, লবন পানি মিশিয়ে চুলার গরম পানির বাস্পে রেখে সিদ্ধ করা হয়। এরপর গরম গরম সেই পিঠা পরিবেশন করা হয়। এই ভাপা পিঠাও শীতের শুরু থেকে শেষ পর্যন্তা দশ টাকা কোথাও কোথাও বিশ টাকা মুল্যে বিক্রি হয়ে থাকে। 

পুলি পিঠাঃ পুলি পিঠার আরেক নাম কুলি পিঠা, ক্ষীর পুলি, চন্দ্রপুলি ইত্যাদি। পুলি পিঠা তৈরি করতে  নারিকেল, চিনি, চালের গুঁড়া, সয়াবিন তেল লাগে। 

পাটিসাপটাঃ ঝুনো নারকেল কুড়ো, গুড় বা চিনি অথবা ক্ষীর পাক করে পুর বানিয়ে নিতে হয়। এরপর চাপ্টি তৈরি করে ভাজ করে লম্বাটে আকৃতি দেয়া হয়।

সেমাই পিঠাঃ সেমাই পিঠাকে অনেক জায়গায় চই পিঠা বা সই পিঠা বলে। চালের গুড়া অল্প লবন আর পানি দিয়ে সেদ্ধ কাই করে, হাত দিয়ে ছোট ছোট করে সেমাই মতো কেটে একটু শুকানো হয়। তার দুধ,রস বা খেজুরের গুড় আর নারকেল কুরি দিয়ে পাতলা সিরা তৈরি করে তার মধ্যে সেমাই গুলো দিয়ে আরেকটু জ্বাল দিয়ে সেমাই পিঠা বা চই পিঠা বানানো হয়।  

এছাড়াও প্রায়ই সকল পিঠাই শীতকালে আয়োজন করে তৈরি করা হয়। যেমনঃ পাকান / তেল / পোয়া পিঠা, মালপোয়া, কাটা পিঠা, কলা পিঠা, খেজুরের পিঠা,লবঙ্গ লতিকা,মুগ পাকন, ঝিনুক পিঠা ,নকশী পিঠা ,গোলাপ পিঠা সহ হরেক রকমের পিঠা। উৎসব মানেই পিঠা। তা যে উৎসবই হোক না কেন। বাঙালী জীবনে এই পিঠা ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষে মানুষে তৈরি করে এক অদ্ভুত মেলবন্ধন।

পিঠে বা পিঠা বাংলার নিজস্ব আদিম আভিজাত্যপূর্ণ খাদ্যদ্রব্য। এটি চালের গুঁড়ো, আটা, ময়দা, অথবা অন্য কোনও শস্যজাত গুঁড়ো দিয়ে তৈরি করা হয়। অঞ্চলভেদে পিঠের ভিন্ন ভিন্ন বৈচিত্র্য দেখা যায়। গ্রামাঞ্চলে সাধারণত নতুন ধান তোলার পর থেকেই পিঠা তৈরির আয়োজন করা হয়। শীতের ও পৌষ পার্বণের সময় বাংলার প্রতি ঘরে ঘরে পিঠে তৈরি করা হয়। পিঠে সাধারণত মিষ্টি স্বাদের হয়ে থাকলেও ঝাল, টক বা অন্য যে কোনও স্বাদ হতে পারে।

বাংলাদেশের কবি বেগম সুফিয়া কামাল বিখ্যাত কবিতা তার পল্লী মায়ের কোল কবিতায় লিখেছেন,
“পৌষ পার্বণে পিঠা খেতে বসি খুশিতে বিষমখেয়ে 
আরও উল্লাস বাড়িয়েছে মনে মায়ের বকুনি খেয়ে”



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭