ইনসাইড আর্টিকেল

‘মাচুপিচু’ হারিয়ে যাওয়া সভ্যতা যা আজ এক সপ্তাশ্চর্য

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 19/01/2021


Thumbnail

পৃথিবীর ইতিহাসে সমৃদ্ধতম, বিখ্যাত ও অদ্ভুত সব রীতিনীতির ধারক হিসেবে পরিচয় দেয় ইনকা সভ্যতা। আর এই ইনকাদের হারিয়ে যাওয়া একটি আধুনিক ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব সম্পন্ন শহর হচ্ছে মাচু পিচু Machu Picchu। তাই, এটি ইনকা সভ্যতার সবচেয়ে আলোচিত নিদর্শন, যাকে ‘ইনকাদের হারানো শহর‘ বলা হয়। যা বর্তমান বিশ্বের সপ্তাশ্চর্যের একটি। কেউ কেউ এটিকে সূর্যনগরীও বলেন। স্প্যানিশ ভাষায় এই শব্দটি উচ্চারণ করা হয় মাত্সু পিৎসু। যার অর্থ প্রাচীন চূড়া। তবে মাচু পিচু উচ্চারণই অধিক প্রচলিত।সে সময় ইনকাদের রাজধানী ছিল কোস্কো। রাজধানী কোস্কো থেকে মাত্র ৮০ কি.মি. দূরেই অবস্থিত ছিল এই মাচুপিচু শহরটি।মাচু পিচু দক্ষিন আমেরিকায় অবস্থিত পেরুর একটি প্রধান নগরী।

আন্দিজ পর্বতমালার পেরুর অংশের দিকে একটি পাহাড়ের চূড়ায় এই মাচু পিচু নগরীটি নির্মান করা হয়েছিল। এখন অবশ্য গোটা পাহাড়টির নামই হয়ে গেছে মাচু পিচু। সেখানে শহরটি ছিল একটি সুপরিকল্পিত নির্মাণ এবং এর অবস্থান ছিল অত্যন্ত সুরক্ষিত। অন্যদের পক্ষে এই শহর খুঁজে পাওয়া যেমন দুষ্কর ছিল, তেমনি খুঁজে পাওয়ার পর শহরটিতে আক্রমণ করতে গেলেও কেউ সুবিধা করতে পারতো না। কারণ, ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে প্রাকৃতিকভাবেই শহরটি বেশ নিরাপদ ছিল। এজন্য শহরটি ইনকাদের প্রাচীন দুর্গনগরী নামেও পরিচিত।

অনেকের মতে মাচুপিচু ছিল ধর্মীয়ভাবে পবিত্র এক জায়গা। তবে এমন অনেকেই আছেন যারা মনে করেন এটি আসলে ইনকা রাজাদের নির্মিত এক জেলখানা ছিল। এখানে রাখা হতো ভয়ঙ্কর ভয়ঙ্কর সব অপরাধীদের। ইনকাদের এই শহর নিয়ে অনেক গবেষকই অনেক রকম গবেষণা করেছেন। তাদের মাঝে জন রো এবং রিচার্ড বার্গার তাদের প্রাপ্ত তথ্য থেকে কিছুটা ভিন্ন মত পোষণ করে থাকেন। তাদের মতে এটি ছিল তৎকালীন ইনকা রাজার অবকাশ যাপন কেন্দ্র। বেশিরভাগ পুরাতত্ববিদই আবার তাদের এই মতবাদকেই সমর্থন করে থাকেন। এখানকার অবশিষ্ট নিদর্শন দেখে এটা নিশ্চিত বলা যায় যে এখানে মানুষের বসতি অবশ্যই ছিলো। কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে এক সময়ে পুরো শহরটি জনমানবশূণ্য হয়ে যায়। অনেকে বলেন গুটিবসন্তের আক্রমনে এখানকার সব মানুষ মারা যায়। পরবর্তী কয়েকশ বছর এই শহরটি একেবারে জনমানবহীন থাকায় ঘন জঙ্গলের আড়ালে পড়ে যায়। কিছু আদিবাসীর যাতায়ত হয়তো ছিলো। কিন্তু কলম্বাস আমেরিকা আবিস্কার করে ফেললেও ১৯১১ সালের আগ পর্যন্ত এই শহরের কথা বিশ্ববাসী জানতো না।

বেশিরভাগ পুরাতত্ববিদ বিশ্বাস করেন যে, মাচু পিচুকে পাচাকুতিক (১৪৩৮-১৪৭২) নামক ইনকা রাজার শাসন আমলে গড়ে তোলা হয়েছিল অর্থাৎ ১৪৫০ সালের দিকে।

মাচু পিচু শহরটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২,৪০০ মিটার বা ৭,৮৭৫ ফুট উঁচুতে অবস্থিত। অর্থাৎ আমাদের দেশের সর্বোচ্চ চূড়া তাজিন ডং ১২৩১ মিটার এর প্রায় দ্বিগুণ উচ্চতায় অবস্থিত এই শহরটি। এত উঁচুতে কীভাবে তারা এই শহরটি নির্মাণ করেছিল সেটাই সবচেয়ে বড় রহস্য। আশ্চর্যের বিষয় ইনকা সভ্যতায় চাকার দেখা পাওয়া যায় না। তারা কখনই তাদের ব্যবহারিক কাজে চাকার ব্যবহার করেননি। তাহলে এতো উঁচুতে পাথর উঠিয়েছিল কিভাবে! যা দিয়ে এই শহর নির্মাণ করা হয়েছিল! ধারণা করা হয় শত শত শ্রমিক পাহাড়ের ঢালু দিয়ে ঠেলে ঠেলে নিয়ে গিয়েছিল এই সব পাথর। কিছু কিছু পাথরের গায়ে হাতলের মতো গাঁট দেখতে পাওয়া যায়। এমন হয়ে থাকতে পারে যে, এ গাঁটগুলো ব্যবহার করা হয়েছিল পাথরগুলোকে নির্দিষ্ট স্থানে বসাতে। পাথরগুলোকে নির্দিষ্ট স্থানে বসানোর পর হয়ত হাতলগুলোকে গুড়িয়ে সমান করে দেয়া হয়েছিল। কেন গুড়িয়ে দেয়া হয়েছিল ?

পাঠক হারিয়ে যাওয়া এই সভ্যতার বাকী গল্প নিয়ে কথা হবে আগামীকাল। আশাকরি বাংলা ইনসাইডারের সাথেই থাকবেন। 

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭