ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

বিশ্বের যত পাগলাটে রাষ্ট্রপ্রধান

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 21/01/2021


Thumbnail

বিভিন্ন সময় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এমন রাষ্ট্রপ্রধান আসে যাদের কর্মকাণ্ড ছিল পাগলাটে ধরণের। একজন রাষ্ট্রপ্রধানকে যতটা চিন্তাশীল, বিচক্ষণ এবং ধৈর্যশীল হতে হয় এরা ছিল তার ব্যতিক্রম। আসুন দেখে নেয়া যাক এমন কিছু পাগলাটে রাষ্ট্রপ্রধানদের কর্মকাণ্ড।

ডোনাল্ড ট্রাম্প, যুক্তরাষ্ট্র: যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫ তম প্রেসিডেন্ট। ২০ জানুয়ারি, ২০১৭ সালে তিনি ক্ষমতা গ্রহণ করেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প একজন পাগলাটে সরকার প্রধান হিসেবে পরিচিত। ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষেপাটে আচরণের কারণে সারাবিশ্ব যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে। বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের যে একক ক্ষমতা এবং দাপট ছিল সেটি ক্ষুণ্ণ হয়েছে তার এই আচরণ এবং মনোভাবের জন্য। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। ফলশ্রুতিতে ৩ নভেম্বর, ২০২০ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জো বাইডেনের কাছে তিনি পরাজিত হন।

এডলফ হিটলার, জার্মানি: এডলফ হিটলার ১৯৩৩ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত জার্মানির চ্যান্সেলর ছিলেন। হিটলার এমন একটি বৈদেশিক নীতি গ্রহণ করেন যাতে সকল স্থান দখল করে নেয়ার কথা বলা হয়। ১৯৩৯ সালে জার্মানরা পোল্যান্ড অধিকার করে এবং ফলশ্রুতিতে ব্রিটেন ও ফ্রান্স জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। এভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়। জার্মান নেতৃত্বাধীন শক্তি মহাদেশীয় ইউরোপ এবং আফ্রিকা ও এশিয়ার বেশ কিছু অঞ্চল দখল করে নিয়েছিল, কিন্তু অবশেষে মিত্র শক্তি বিজয় লাভ করে। ১৯৪৫ সালের মধ্যে জার্মানি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। হিটলারের রাজ্য জয় ও বর্ণবাদী আগ্রাসনের কারণে লক্ষ লক্ষ মানুষকে প্রাণ হারাতে হয়। ৬০ লক্ষ ইহুদিকে হত্যা করা হয় তার নির্দেশে। ইহুদি নিধনের এই ঘটনা ইতিহাসে হলোকস্ট নামে পরিচিত।

বেনিতো মুসোলিনি, ইতালি: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বেনিতো মুসোলিনি ছিলেন ইতালির সর্বাধিনায়ক। মুসোলিনি দ্বিতীয় মহাযুদ্ধকালে জার্মান একনায়ক এডলফ হিটলার- এর একান্ত বন্ধুতে পরিণত হন আর তাকে প্রভাবিত করেন। মুসোলিনি ১৯৪০ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির সাথে অক্ষশক্তিতে যোগদান করেন। ইতালির এই একনায়ক ১৯২২ সাল থেকে ১৯৪৩ সালে তার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সমগ্র রাষ্ট্রের ক্ষমতাধর ছিলেন। ১৯৪৫ সালে সুইজারল্যান্ডে পালাবার সময় তিনি কম্যুনিস্ট প্রতিরোধ বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন এবং পরে তাকে হত্যা করা হয়।

রবার্ট মুগাবে, জিম্বাবুয়ে: রবার্ট মুগাবে ১৯৮০ সালে জিম্বাবুয়ে ক্ষমতায় আসেন।  রবার্ট গ্যাব্রিয়েল মুগাবে ১৯৮০ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত জিম্বাবুয়ের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এবং ১৯৮৭ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে কাজ করেছিলেন। তিনি ৩৭ বছরের শাসনামলে জিম্বাবুয়ে শীর্ষস্থানীয় পদ থেকে পদত্যাগ করেন।

সাদ্দাম হোসেন, ইরাক: ১৬ জুলাই, ১৯৭৯ থেকে ৯ এপ্রিল, ২০০৩ সাল পর্যন্ত ইরাকের রাষ্ট্রপতি ছিলেন সাদ্দাম হোসেন। ইরাক-ইরান যুদ্ধের পরে ১৯৯১-এ সাদ্দাম উপসাগরীয় যুদ্ধে জড়িয়ে পরেন। সাদ্দাম তার মতে ইরাকের স্থিতিশীলতার বিরুদ্ধের সকল পক্ষকে নির্মূল করার উদ্যোগ নেন। ২০০৩ সালে যুক্তরাজ্যের নেতৃত্বে কতিপয় আন্তর্জাতিক রাষ্ট্র ইরাক আক্রমণ করে। ১৩ ডিসেম্বর ২০০৩ সালে সাদ্দাম হোসেন আমেরিকান সেনাদের কাছে ধরা পড়েন। পরবর্তীতে আমেরিকা ইরাকি সরকারের হাতে সাদ্দাম হোসেনের বিচার করে। সাদ্দামের বিরুদ্ধে ছিল মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। ২০০৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর ইরাকি সময় সকাল ৬.০৬ মিনিটে ইরাকে সাদ্দাম হোসেনের ফাঁসি হয়।

মুয়াম্মার গাদ্দাফি, লিবিয়া: মুয়াম্মার প্রায় ৪২ বছর ক্ষমতায় ছিলেন। গাদ্দাফি লিবিয়ার বিপ্লবী, রাজনীতিবিদ এবং রাজনৈতিক তাত্ত্বিক ছিলেন। মুয়াম্মার গাদ্দাফির অত্যাচারের বিরুদ্ধে লিবিয়ার জনগণ তমূল আন্দোলন করে। ২০১১ সালের ২০ অক্টোবর বিদ্রোহীদের হাতে তিনি নিহত হন।

নিকোলাস মাদুরো, ভেনেজুয়েলা: নিকোলাস মাদুরো বর্তমানে ভেনেজুয়েলার রাষ্ট্রপতি হিসেবে আসীন রয়েছেন। ১৪ এপ্রিল, ২০১৩ তারিখে অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিজয়ী হন মাদুরো। জানা যায়, মাদুরো বিদেশী ভাষায় কথা বলতে পারেন না। পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রধানের দায়িত্ব পালনকালে মুয়াম্মার গাদ্দাফি সরকারের কাছ থেকে সুন্দর বৈদেশিক নীতির মাধ্যমে ব্যাপক সহায়তা পান। এছাড়াও, ২০১০ সালের কলম্বিয়া-ভেনেজুয়েলার মধ্যকার বিচ্যুত কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের প্রয়াস চালান তিনি। সাংবিধানিকভাবে তার ক্ষমতায় আরোহণ ও নির্বাচনে অংশগ্রহণের ফলে বিরোধী দল থেকে নানা প্রশ্ন উত্থাপিত হয় এবং পুনরায় ভোট গণনার দাবি জানান ও নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি মাত্র ১.৫ শতাংশ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন।

কিম জং উন, উত্তর কোরিয়া: ২০১১ সালে পিতা কিম জং ইলের মৃত্যুর পর রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ করার পরে শুরু থেকেই কিম জং উন তার অদ্ভুত ধরনের নৃশংসতার জন্য আলোচিত। তার ক্ষমতা গ্রহণের তিন বছরের মধ্যে উত্তর কোরিয়ার অন্তত ১০০ জন এলিটকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন তিনি। চুলের বিচিত্র ছাঁট, পোশাক-পরিচ্ছদে ভিন্নতা ও শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান, অদ্ভুত সব নিয়ম আর কথায় কথায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে উত্তর কোরিয়ার কিম জং উন বিশ্ব গণমাধ্যমে হয়ে উঠেছেন একজন পাগলাটে রাষ্ট্রপ্রধান। তিনি অদ্ভুত সব নিয়ম করেছে যা হলো- কারো নাম কিম জং উন নাম রাখা যাবে না, ইচ্ছেমতো চুল কাটা মানা, গাঁজা সেবনে বাধা নেই, জন্মদিন পালনেও নিয়ম মানতে হবে, জিন্স পরা নিষিদ্ধ সহ আরও অনেক অদ্ভুত নিয়ম।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭