ইনসাইড এডুকেশন

পাঠ্যপুস্তক নিয়ে সংকটের আশঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 07/09/2017


Thumbnail

২০১৮ সালের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যের বই নিয়ে নানামুখী জটিলতা তৈরি হয়েছে। এ কারণে যথাসময়ে সব বই পাওয়া নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তাও। পাঠ্যবই তদারকির দায়িত্বে থাকা জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অদক্ষতা, এক শ্রেণির প্রেস মালিকদের সিন্ডিকেট ও অসাদুতার কারণে পাঠ্যবই নিয়ে এ অবস্থা তৈরি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টদের মত।

আগামী শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য ৩৫ কোটি ১৩ লাখ ২৬ হাজার ২০৭টি বই বিতরণের কথা রয়েছে। বই ছাপা এবং মাঠ পর্যায়ে বিতরণের ক্ষেত্রে গত বছরের তুলনায় এবার অনেক পিছিয়ে রয়েছে। অবশ্য এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ন চন্দ্র সাহা বলেন, মাধ্যমিকের বই ২০ শতাংশ মাঠ পর্যায়ে পৌছে গেছে। প্রাথমিকের বইও যথাসময়ে পৌছে যাবে। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে শতভাগ বই পৌছে যাবে বলে তিনি জানান।

তবে এনসিটিবির চেয়ারম্যানের বক্তব্য ও বাস্তব চিত্র ভিন্ন। গত বছর সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে প্রাথমিক স্তরের প্রায় আড়াই কোটি বই মাঠ পর্যায়ের পৌছে। কিন্তু এবার এখন পর্যন্ত কাজই শুরু করেনি প্রেস মালিকরা। নবম ও ১০ শ্রেণির ১২ টি পাঠ্যপুস্তক পরিমার্জন করে সুখপাঠ্য, আকর্ষণীয় ও সহজবোধ্য করা বইগুলোর কার্যাদেশ প্রক্রিয়া এখনো শেষ হয়নি। এছাড়া প্রেস থেকে চাহিদা অনুযায়ী কাগজ না পাওয়ায় মাধ্যমিকের বই ছাপার কাজও বিলম্ব হচ্ছে বলে প্রেস মালিকরা জানিয়েছে। নতুন প্রযুক্তিতে বই বাঁধাই নিয়েও সংকট তৈরি হয়েছে। কাভার কাগজ যথাসময়ে না পাওয়ায় ছাপার কাজ শেষ হলেও বই বিতরণ করা যায়নি।

সূত্র জানিয়েছে, চলতি বছর দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির মাধ্যমে নবম ও দশম শ্রেণির ১২ টি পাঠ্যপুস্তক পরিমার্জন করে সুখপাঠ্য, আকর্ষণীয় ও সহজবোধ্য করা হয়। এই বইগুলো হচ্ছে বাংলা, ইংরেজি, পদার্থ, রসায়ন, জীববিদ্যা, উচ্চতর গণিত, বিজ্ঞান, বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা, অর্থনীতি, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়, হিসাববিজ্ঞান । এই বইয়ের টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলেও কোনো প্রতিষ্ঠান বই ছাপার কাজ পাবে সে বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি এনসিটিবি। ফলে যথাসময়ে এসব বই নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। তবে এনসিটিবি থেকে প্রেসমালিকদের জানানো হয়েছে দ্রæতই কার্যাদেশ দেওয়া হবে।

প্রথমবারের মতো আবার ১৮ কোটি বই এবার নতুন প্রযুক্তিতে বাঁধাই হবে। নতুন এ প্রযুক্তি সব প্রেস মালিক বা সংশ্লিষ্টদের কাছে নেই। আবার যাদের কাছে এ প্রযুক্তি নেই তারাও কাজ পেয়েছে। এ কারণে অন্যের কাছ থেকে সহায়তা নিয়ে নতুন প্রযুক্তিতে কাজ শেষ করতে বাড়তি সময় লাগবে বলে প্রেস মালিকরা জানিয়েছেন।

এবার প্রাথমিকের বই নিয়ে জটিলতা বাড়ছে। গতবছর একই সময়ে আড়াই কোটি বই ছাপা হবার পর উপজেলা পর্যন্ত পৌছানো হলেও এবার এই স্তরের বই ছাপার কাজই শুরু করতে পারেনি প্রেস মালিকরা।

প্রেস মালিকরা জানিয়েছে, প্রাথমিকের বই কার্যাদেশ আগে পেলেও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের গাফলতির কারণে বই ছাপার কাজ শুরু করা যায়নি। কারণ হিসাবে তারা বলেন, বই ছাপার পূর্বে কাগজের মান দেখার নিয়ম রয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিপিই) নিয়োগ করা একটি মান যাচাই প্রতিষ্ঠানের। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর মান যাচাইয়ের ওই প্রতিষ্ঠান নিয়োগে বিলম্ব করে। এভাবে ডিপিই এক মাস সময় নষ্ট করেছে। এ কারণে যথাসময়ে বই ছাপা যাচ্ছে না। তবে চলতি সপ্তাহ থেকে কাজ শুরু যেতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে। এছাড়া এবার ৯৮টির মধ্যে ৯৬ লটের কাজ ৪২ দিনে শেষ করার কার্যাদেশ দিয়ে বইয়ের সিডি মুদ্রাকরদের সরবরাহ করা হয়। কিন্তু প্রেসে গিয়ে সিডি খুলে প্রেস মালিকরা দেখতে পায় প্রাথমিকের নয়, ইবতেদায়ি স্তরের বইয়ের সিডি দেয়া হয়েছে। এরপর এনসিটিবি ভুল সিডি ফেরত নেয়। পরে আসল সিডি সরবরাহ করে। এতেও সময় ক্ষেপন হয়।

এছাড়া মাধ্যমিকের কাগজ নিয়ে কাগজ সংকটের কথা জানান কয়েকজন প্রেস মালিক। তারা বলেন, আমাদের চাহিদা অনুযায়ী কাগজ পাওয়া যাচ্ছে না। একদিন কাগজ পেলে পরের দিন কাগজ পাওয়া যাচ্ছে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রেস মালিক এই প্রতিবেদককে জানিয়েছে, আমি সাড়ে তিন কোটি টাকা কাগজ কেনার জন্য একটি কাগজ মিলে অর্ডার দিয়েছি। এখন পর্যন্ত মাত্র এক কোটি টাকার কাগজ পেয়েছি। মিলগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা কম থাকায় এই সমস্যা হয়েছে বলে তিনি জানান।

সূত্র জানিয়েছে, কিছু প্রতিষ্ঠান প্রতিবছরই নিন্মমানের বই ছাপে। কালো তালিকাভুক্ত হয়। আবার তারা পরবর্তীতে বিনামূল্যে পাঠ্যবই ছাপার কাজও পায়। এনসিটিবির সঙ্গে অনৈতিক লেনদের কারণে এসব সুবিধা নিয়ে থাকেন তারা। এসব প্রেস মালিক এনসিটিবিকে বইয়ের দরপত্র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশে বিলম্ব, কার্যাদেশে বিলম্ব করার ক্ষেত্রে পরামর্শ দিয়ে থাকে। এর কারণে হিসেবে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বই ছাপার জন্য প্রেস মালিকদের কম সময় দেওয়া হলে কম সময় থাকার অযুহাতে নিন্মমানের বই ছাপলেও তা যাচাইয়ের সময় পায় না এনসিটিবি। এ কারণে নিন্মমানের বই ছাপলেও পার পেয়ে যান তারা।

এবার ২৬ জেলা বন্যায় আক্রান্ত হয়। পাঠদান বন্ধ হয়ে যায় কয়েকশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বন্যায় স্কুল ডুবে যাওয়ার কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হয় স্কুলগুলো। ওই সব স্কুলে বই পৌছানো যাচ্ছে না। বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির সভাপতি তোফায়েল খান বলেন, বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছি। যথাসময়ে বই পৌছে দিতে আমরা শিক্ষামন্ত্রণালয়কে কিছু পরামর্শ দিয়েছি। সে আলোকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে যথাসময়ে বই পৌছে দেওয়া যাবে বলে তিনি জানান। যে জেলাগুলোতে বন্যা হয়েছে ওই সব এলাকায় বই রাখার জন্য কিছু গুদামঘর প্রস্তুত করার কথা বলেছি আমরা।

বাংলা ইনসাইডার/জেডএ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭