ইনসাইড আর্টিকেল

নীল আকাশে শ্বেত মেঘ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 08/09/2017


Thumbnail

থেকে থেকে এখনো কালো মেঘে ফুলে ফুলে উঠছে আকাশের পেট। বজ্র চিৎকার, বিদ্যুৎ চিরে যাচ্ছে কৃষ্ণমেঘের আবরণ। পড়ছে বৃষ্টি। কখনো মুষলধারায়, কখনো গুড়িগুড়ি। অথচ শরৎ সেই কবে শারদীয় সৌন্দর্য নিয়ে চলে এসেছে, ষড়ঋতুর উঠোনে। ভাদ্র গুণে গুণে শেষ সপ্তাহে এসে ঠেকেছে। আশ্বিন এলো বলে…

নবীন ধানের পাতায় ভোরের শিশির জমেনি। শিউলীতলায় পূজোর ফুলও মেলেনি। কিশোরী তাই খোঁপা বাঁধেনি সকালে। খোলা চুল, বিষন্ন মুখ, আঙুলের ফাঁক গলে গলে পড়ছে কমলা রঙের তালশাস।– এখনকার ভাদ্র এরকমই!

এক সময় ঋতুবদল নিয়মিত ছিল। বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে ঋতুরাজ্যে ঢুকে পড়েছে অনিয়ম। ঋতুরাও স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠেছে। ‘ঋতুরঙ্গ’ ভেঙে পড়েছে, পড়ছে। পাশাপাশি থাকা ঋতুগুলো প্রতিবেশী ঋতুরাজ্যে প্রভাব ফেলছে। যেমন, বিদায় নেওয়ার পরও শরৎ- এর আকাশে কালো মেঘ উড়িয়ে সদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছে বর্ষা ঋতু।

এরপরও শরৎ সুন্দর। আকাশজুড়ে মোহন শীতল নীল! ভাসছে শুভ্র, সাদা সাদা পেঁজা তুলো মেঘ! বালুচর, ওয়াপদা সড়কের ঢাল কিংবা অকর্ষিত মাঠের কোথাও ফুটেছে কাঁশফুল। বাতাসের ঝাপটায় ঢেউ তুলে পাল ওঠানো নৌকার মতো দুলছে, প্রসারিত দিগন্তে। শাপলা ও জলপদ্ম ফুলে ভরে উঠেছে আবহমান গ্রামের খাল-বিল, পুকুর, ডোবা কিংবা জলাশয়। ঝিলের টলটেলে জলে ফুটতে শুরু করেছে বেগুনী কলমি ফুল। চিরহরিৎ দ্রুমে গাঢ় সবুজের ছোয়া। পাতাঝরা গাছেরা ঝেড়ে ফেলছে পুরনো পাতা। বাতাসে বাজছে শুকনো পাতার সঙ্গীত। আঙিনায় ফটুছে কামিনী, মালতি, জবা, টগর, হাসনাহেনা, শিউলী, গগন শিরীষ, হিমঝুরি, ছাতিম, পান্থপাদবসহ নানা ফুল।

বিস্তৃর্ণ প্রান্তর জুড়ে মঞ্জুরি ভারে নুয়ে আছে আমন ধানের শীষ। শরীরে লুটিয়ে পড়ে ঝরঝরে বাতাস, সবুজের ঘ্রাণ। এ সময়ের সূর্যোদয়, মিহি রোদের সকাল, বিকেলের নরম আলোর হলুদ-কমলা রঙ, শেষ বেলার রোদ ভেঙে ঘরে ফেরা পাখির ঝাঁক, টকটকে সূর্যাস্ত, প্রবল জোছনার স্বচ্ছ নীল আকাশ ও জ্বল জ্বলে নক্ষত্রের রাত ঢেলে দেয় প্রশান্তি। বাড়ায় মুগ্ধতা।

শরৎসৌষ্ঠব কংক্রিট শহরে অনুপস্থিত, বিপন্ন। এর অপরূপ শোভা ছড়িয়ে থাকে বাংলাদেশের সব গ্রামীণ জনপদে। শরৎকালের নাতিশীতোষ্ণ পরিবেশ যাপিত জীবন এবং মনে নির্মল, স্নিগ্ধ ও নির্ভার পরশ বুলিয়ে দেয়। প্রবলভাবে অনুভূতিপ্রবণ করে। বর্ষার মেঘাচ্ছন্ন ঝড়-বাদল শেষে শরৎ- এর শ্বেত মেঘ ব্যক্তিজীবনে আনে প্রগাঢ় কোমলতা।

প্রকৃতি ও জীবনের কবি জীবনানন্দ দাশও তাঁর কবিতায় কাশবন তথা শরৎকালের অনুভূতি প্রকাশ করেছেন কোনো এক উৎসবের অবয়বে—
‘সেই কুহকের থেকে এসে/ রাঙা রোদ, শালিধান, ঘাস, কাশ মরালেরা বারবার রাখিতেছে ঢেকে/ আমাদের রুক্ষ প্রশ্ন, ক্লান্ত ক্ষুধা, স্ফুট মৃত্যু আমাদের বিস্মিত নীরব রেখে দেয়— পৃথিবীর পথে আমি কেটেছি আঁচড় ঢের, অশ্রু গেছি রেখে:/ তবু ঐ মরালিরা কাশ ধান রোদ ঘাস এসে এসে মুছে দেয় সব।’

ঋতুচক্রের তৃতীয় এ ঋতুতে লেপটে আছে প্রাণবন্ত উৎসব আমেজ। আশ্বিনের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে শুরু হচ্ছে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দূর্গাপূজা। এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে পূজার প্রস্তুতি। বাঙালি মনে লেগেছে উদযাপনের দোল। ঢাক, ঢোল আর শঙ্কধ্বনির সমন্বিত ছন্দ ও তালে মেতে উঠবে প্রতিটি বাঙালি মন-প্রাণ। নয় আশ্বিন শুরু হবে পূজার আনুষ্ঠানিকতা, ১৩ আশ্বিন বিজয়া দশমীর মাধ্যমে শেষ হবে উদযাপন।


বাংলা ইনসাইডার/আরজে/জেডএ





প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭