ইনসাইড আর্টিকেল

চকলেট না খেলে হবে না জ্ঞানী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 08/02/2021


Thumbnail

চকলেট শব্দটি শুনলেই কেমন জানি জিভে জল চলে আসে। ছোট বেলায় চকলেট খায়নি এমন মানুষের দেখা মেলাভার। ছোটবেলায় বাচ্চাদের দিয়ে কোন কাজ করাতে চাইলে, আর সেটা যদি সে না করতে চাইতো তাহলে চকলেট খাওয়ানোর কথা বললেই অনায়েসেই করে ফেলানো যেত সেই কাজ। সেটা পড়া লেখা হোক বা অন্য যেকোনো কাজ হোক। শুধু কি শিশু ? যেকোন বয়সী মানুষের কাছে এই চকলেট অত্যন্ত প্রিয় একটি খাবার। উপহার হিসাবেও চকলেট সকল দেশের সকল বয়সী মানুষের কাছে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে রয়েছে। 

চকলেটের ইতিহাস শুরু হয়েছিল মেসোমেরিকাতে। "চকলেট" শব্দটি ক্লাসিকাল নাহুয়াতল শব্দ Xocolātl থেকে এসেছে এবং তা পরবর্তীতে স্প্যানিশ ভাষা থেকে প্রবেশ করেছে ইংরেজি ভাষায়। ধারনা করা হয়  চকলেট থেকে তৈরি খাঁটি পানীয়গুলি খ্রিস্টপূর্ব ৪৫০ অব্দে। অ্যাজটেকরা বিশ্বাস করতেন যে ক্যাকো বীজ হল জ্ঞানের দেবতা কোয়েটজলক্যাটেলের উপহার এবং বীজের এত মূল্য ছিল যে এগুলি সে সময় মুদ্রার মতো ব্যবহৃত হত। চকলেট মূলত পানীয় হিসাবে প্রস্তুত করে মশলা বা কর্ন পিউরি মিশ্রন ঘটিয়ে এই চকলেট একটি তিক্ত তরল হিসাবে পরিবেশন করা হত। এটি আফ্রোডিসিয়াক এবং পানীয়কে শক্তি দেয় বলে বিশ্বাস করা হত।  বর্তমানে, এই জাতীয় পানীয়গুলি "চিলিট" নামেও পরিচিত এবং মেক্সিকোর দক্ষিণের স্থানীয়রা এটি তৈরি করে থাকে। ষোড়শ শতাব্দীতে ইউরোপে আসার পরে, এতে চিনি যুক্ত হয় এবং এটি প্রথমে শাসক শ্রেণীর এবং পরে সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বিশ শতকে, যুদ্ধের সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্যদের রেশনগুলিতে চকলেট দেয়াটা অপরিহার্য বলে বিবেচিত হত।

চকলেটের আরও একটু ভিন্ন ও পুরনো ইতিহাস নিয়ে এবার আমরা সামনে আগাবো। আমরা এতদিন জেনে এসেছি, চকলেটের উৎপত্তি মেক্সিকো ও মধ্য আমেরিকায়। ওই অঞ্চলের কোকোয়া গাছ থেকে আহরণ করা কোকোয়া ফল থেকে তৈরি চকলেট পরিণত হয় মূল্যবান পণ্যে। অভিজাত শ্রেণি খাদ্য ও পানীয় হিসেবে আর বিনিময়যোগ্য পণ্য হিসেবে সেখানেই এর প্রচলন ঘটে।

কিন্তু নতুন এক গবেষণা বলছে, চকলেটের ইতিহাস ৫ হাজার বছরেরও পুরোনো। অ্যামাজন বনের ভেতরেই স্থানীয় মানুষ খাদ্য হিসেবে এর উৎপাদন শুরু করেছিল। আজ যে অঞ্চলকে আমরা ইকুয়েডর বলে জানি, সে অঞ্চলের মানুষ ৫ হাজার বছর আগে থেকেই খাদ্য ও পানীয় হিসেবে চকলেট ব্যবহার করতো। সেখানকার সান্তা আনা প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনস্থলে পাওয়া ২১০০ থেকে ৫৩০০ বছরের পুরনো মাটির পাত্র পরীক্ষা করে এর প্রমাণ পাওয়া গেছে। অর্থাৎ অ্যামাজনিয়া থেকে প্রায় ১ হাজার ৫০০ বছর পর, মেক্সিকো আর মধ্য আমেরিকায় চকলেটের প্রচলন ঘটে। আর ১৫২০ সালে স্প্যানিশ অনুপ্রবেশকারীরা নতুন এ খাদ্য খুঁজে পেয়ে ইউরোপে তার প্রসার ঘটায়।

চকলেট হচ্ছে বিশ্বের অন্যতম একটি পছন্দনীয় খাবার। সারাবিশ্বের মানুষের চাহিদা মেটাতে ৩ কোটি টনের অধিক কোকো বা কোকোয়া বীজের প্রয়োজন পড়ে। মূলত চকলেট বলতে নানা প্রকার প্রাকৃতিক ও প্রক্রিয়াজাত খাবারকে বোঝায় যা তৈরি হয় কোকো গাছের বীজ থেকে। এটি দক্ষিণ আমেরিকার অ্যামাজন ও ওরিনোকো নদীর অববাহিকার স্থানীয় উদ্ভিদ। তবে কোকোর চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় দ্রুত এই গাছ অনেক দেশেই চাষ করা শুরু হয়। এছাড়াও পশ্চিম আফ্রিকা, দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে এই গাছের চাষ দ্রুত বিস্তার লাভ করে। বর্তমানে ঘানা, আইভরিকোস্ট, নাইজেরিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং ব্রাজিলে শতকরা ৭৯ ভাগ কোকো উৎপাদিত হচ্ছে। এছাড়াও মালয়েশিয়া, দক্ষিণ ভারত ও উরিষ্যা রাজ্যেও কোকো চাষ শুরু হয়।  

বর্তমানে শুধু বিভিন্ন ধরণের খাদ্য নয় বরং প্রসাধন পণ্য হিসেবে চকলেটের জনপ্রিয়তা বিশ্বজুড়ে। শুনলে অবাক হবেন ২০০৮-২০০৯ সালজুড়ে বিশ্বব্যাপী চকলেটের উৎপাদন হয়েছে ৩৫ লাখ ১৫ হাজার টন।

প্রথমে গাছ থেকে সংগ্রহ করে কোকো বীজ ফার্মেন্টেশন বা গাঁজন করা হয়। গাঁজন করার সময় স্তুপীকৃত করে কলা পাতা দিয়ে ঢেকে রাখা হয়। এভাবে ৩-৭ দিন রেখে দেওয়ার পর চকলেটের ঘ্রাণ উৎপন্ন হয়। অতপর এই বীজ শুকানো হয়। বীজ ৩-৫ দিনের মধ্যে পুরোপুরি শুকিয়ে যায়। এরপর বীজগুলোকে চকলেট ফ্যাক্টরীতে পাঠানো হয়। সেখানে পরিষ্কার করা হয়। তারপর ওভেনে রোস্টের মতো করে তাপ দিয়ে ঝলসান হয়। সে সময় বীজের খোসা ছেড়ে যায়। এছাড়াও বেশকিছু পরিবর্তনের মাধ্যমে অবশিষ্ট কিছু থাকে যাকে বলা হয় নিব। এই নিব থেকেই রোলারের মাধ্যমে তৈরি হয় চকলেট।

সাধারণত ৩ ধরনের চকলেট তৈরি করা হয়ে থাকে। এগুলো হচ্ছে, কালো বর্ণের চকলেট - এখানে চকলেটের পানীয় , ঘি, লেসিথিন, চিনি এবং ভ্যানিলা থাকে। মিল্ক চকলেট - কালো বর্ণের চকলেটে যা থাকে সেগুলোর সাথে মিল্ক চকলেটে অতিরিক্ত চর্বি এবং দুধ থাকে। সাদা চকলেট - সাদা চকলেটে মিল্ক চকলেটের সবগুলো উপাদানই থাকে। তবে চকলেটের পানীয় থাকে না। যদিও এখানে চকলেটের পানীয় না থাকায় অনেকে একে চকলেট হিসেবে মেনে নিতে চান না।

৭ জুলাই বিশ্ব চকলেট দিবস। ধারণা করা হয়, ইউরোপে ১৫৫০ সাল থেকে এ দিনে চকলেট দিবস পালিত হয়ে আসছে। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে জাতীয় চকলেট দিবস পালিত হয় ২৮ অক্টোবর। ঘানাতে কোকো সেলিব্রেটস চকলেট দিবস পালিত হয় ১৪ ফেব্রুয়ারি। তেতোমিষ্টি চকলেট দিবস ১০ জানুয়ারি, মিল্ক চকলেট দিবস ২৮ জুলাই, সাদা চকলেট দিবস ২২ সেপ্টেম্বর এবং চকলেট কভারিং দিবস ১৬ ডিসেম্বর।

ইউরোপের সাধারণ মানুষের কাছে চকলেট পৌঁছতে আর তেমন দেরি হয়নি। ১৮৬৮ খ্রিস্টাব্দে ‘ক্যাডভেরি’ নামে একটি ছোট কোম্পানি চকলেট ক্যান্ডির বক্স ইংল্যান্ডে বাজারজাত করতে শুরু করে। এর কয়েক বছর পরই নেসলে বাজারে নিয়ে আসে মিল্ক চকলেট।

চকলেট পৃথিবীর জনপ্রিয়তম ফ্লেভারগুলোর একটি। বিভিন্ন পালাপার্বণে হরেক রকম চকলেট উপহার দেবার রীতি চালু আছে: ঈস্টার পরবে চকলেটের খরগোশ ও ডিম উপহার খুবই জনপ্রিয়, চকলেটের মুদ্রা হানুক্কাহ, সান্তা ক্লজ ও ক্রিসমাসের অন্যান্য উৎসব প্রতীক, এবং ভালোবাসা দিবসে চকলেটের হৃদয়। চকলেট ঠান্ডা ও গরম পানীয়, চকলেট দুধ এবং গরম চকলেট প্রস্তুতিতে ব্যবহৃত হয়। চকলেট ছোট বড় সকল বয়সী মানুষের কাছে সমান জনপ্রিয়৷

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭