ইনসাইড আর্টিকেল

আমরা নিজেরাই নিজেদের বিপদ!

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 12/02/2021


Thumbnail

শীত প্রায় শেষ হয়ে এলো, এরপরেই  ধিরে ধিরে বাড়বে গরমের দাবদাহ। তখন এক পশলা বৃষ্টির জন্য চাতকের মত হাহাকার করবে গরমের দাবদাহে জ্বলা মনে। কখন নামবে বৃষ্টি ? বৃষ্টি নামলে জুড়াবে দেহ, শীতল হবে মন। কিন্তু তারপর? তারপর যা তাই, হয় গৃহবন্দি, নয়তো হাঁটু সমান পচা নোংরা পানিতে কাপড় উচিয়ে হাটার জন্য প্রস্তুতি। বর্ষায় জলাবদ্ধতা যেন আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী, বিশেষ করে ঢাকাবাসিদের জন্যে। একটু বৃষ্টি হলেই জলে ডুবে যায় রাস্তা ঘাট সহ ঢালু এলাকাগুলি। কিন্তু কেন? উত্তরে হয়তো আপনি বলবেন কর্তৃপক্ষের পয়ঃনিস্কাসনের ব্যর্থতা। আসলেই কি তাই? একটু ভাল করে ভাবুনতো। আমি যদি বলি এই জলাবদ্ধতার পিছনের কারণ হিসাবে, আপনি আমি আমরা সকলেই দায়ী। আপনি হয়তো জানতে চাইবেন কিভাবে? আমি বলবো, অনেক ভাবেই। আসুন আজকে শুধু একটি বিষয় নিয়ে বলি তাহলেই আপনারা বুঝতে পারবেন কিভাবে।    

 

ভাবুন তো প্লাস্টিকবিহীন একটা দিন পারকরা আপনার পক্ষে সম্ভব কিনা? না সম্ভব না। আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় সবকিছু বাদ দিলেও আপনার হাতে যে ফোনটি রয়েছে তাতে রয়েছে প্লাস্টিকের উপাদান। অর্থাৎ আমাদের দৈনন্দিন জীবনের পুরোটা জুড়েই ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে এই প্লাস্টিকের ব্যবহার। কিন্তু আপনি কি জানেন সাম্প্রতিককালে পরিবেশ দূষণসহ জলাবদ্ধতার একটি প্রধান কারণ হল এই প্লাস্টিক বর্জ্য !

 

এবার আপনি বলুন এই দূষণের পিছনে আপনার সম্পৃক্ততা কতটুকু? এখনো হয়তো আপনি বলবেন আমি আর কতোটুকু এই প্লাস্টিক ব্যবহার করি? তাহলে আসুন আপনাকে একটা সমীক্ষা দেখাই। 

প্লাস্টিক এমন বস্তু যা কোন সিন্থেটিক বা আধা-সিন্থেটিক জৈব যৌগ দ্বারা তৈরি। একটি সমীক্ষায় দেখা যায়, প্রতিদিন শুধুমাত্র ঢাকা শহরেই প্রায় দুই কোটির বেশি পলিব্যাগ একবার ব্যবহার করে ফেলে দেওয়া হয়। এসব পলিথিন দূষণ সৃষ্টির পাশাপাশি পানি চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে জলাবদ্ধতা তৈরি করছে, ড্রেণ নর্দমা ভরাট করছে। এরফলেই একটু বৃষ্টি হলেই সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। এবার বলুন এই পরিবেশ দূষণ ও জলাবদ্ধতা সৃষ্টিতে আপনার ভুমিকা কতটুকু ? নিশ্চয়ই নিরব থেকে হলেও আপনি আমার সাথে একমত হবেন যে, এজন্য কমবেশি  আমরা সকলেই দায়ী। এতো গেলো পরিবেশ দূষণ ও জলাবদ্ধতার কথা। এবার আসুন জেনে নেই এগুলো আমাদের মানব দেহের কি কি ক্ষতি করে  করে।  

 

প্লাস্টিক দূষণ মানুষের স্বাস্থ্যের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। অনেক সময় এসব প্লাস্টিক পুড়িয়ে ফেলা হয়। কিন্তু প্লাস্টিক পোড়ালে বিষাক্ত স্টাইরিন, মোনোমার, ডাইওক্সিন ও ফুরানের গ্যাস নির্গত হয় এবং নিঃশ্বাসের মাধ্যমে বা লোমকূপ দিয়ে এই বিষ আমাদের শরীরে প্রবেশ করে।  দীর্ঘদিন এই বিষ মানবদেহে প্রবেশ করার ফলে মাথাধরা, ক্লান্তি, দুর্বলতা এমনকি স্নায়ুতন্ত্র বিকল হওয়ার মতো জটিল রোগ দেখা দেয়। তাহলে আর নিশ্চয়ই আপনাদের বুঝতে বাকী রইলনা যে আমরা আমাদের নিজেদের কি ভংকর পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাচ্ছি ! তাহলে আসুন জেনে নেয়া যাক এই প্লাস্টিকের উপর সমগ্র পৃথিবীর একটা ছোট্ট সমীক্ষা। 

 

১৯৫০-২০১৫ সালের মধ্যে পৃথিবীতে ৬৩০ কোটি টন প্লাস্টিক বর্জ্য জমেছিল, এর মাত্র ৯ শতাংশ পুনর্ব্যবহার হয়েছে, ১২ শতাংশ সঠিক প্রযুক্তি প্রয়োগ করে জ্বালানো হয়েছে আর বাকি ৭৯ শতাংশ বর্জ্য ফেলার নির্দিষ্ট স্থানে বা যত্রতত্র আজও জমে আছে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে ২০৫০ সালে ১২০০ কোটি টন প্লাস্টিক বর্জ্য আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করবে। ইউএনইপি এর তথ্য অনুযায়ী, পৃথিবীর মানুষ প্রতি বছর ৫০ হাজার কোটি প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহার করে। ৮০ লক্ষ টন প্লাস্টিক বর্জ্য প্রতি বছর নদী-নালা হয়ে সাগরে জমছে, স্থলপথে ওই পরিমাণ বর্জ্য পরিবহণ করতে হলে প্রতি মিনিটে একটি করে ট্রাক লাগবে। এমন অবস্থা অব্যাহত থাকলে ২০৫০ সালে সাগরে মাছের থেকে বেশি প্লাস্টিক থাকবে।

 

২০১২ সালে, গবেষণার মাধ্যেমে জানানো হয় যে, সমগ্র বিশ্বের সমুদ্রে আনুমানিক ১৬৫ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক বর্জ্য আছে। এক পরিসংখ্যানে জানা যায় যে, সমুদ্রের পানিতে ৫ ট্রিলিয়নের বেশি প্লাস্টিক ভেসে থাকে ৷  আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে যে পরিমাণ তারা আছে, সুমুদ্রে সেই সংখ্যার থেকেও বেশি প্লাস্টিক আছে ৷ ১৪ মিলিয়ন টনের বেশি প্লাস্টিক প্রতিবছর সুমুদ্রে জমা হচ্ছে ৷ গবেষকরা মনে করেন, প্লাস্টিক দূষণ সামুদ্রিক প্রাণীর জন্য "একক সর্বাধিক হুমকি যা সমুদ্রে থাকা প্রাণীর ক্ষতি ও মৃত্যুর জন্য দায়ী।

 

২০০৪ সালে এক গবেষণায় মাধ্যমে গবেষকরা জানান একটি "সামুদ্রিক গিল" এর পেটে ৩০ খন্ডের সম পরিমাণ প্লাস্টিক পাওয়া যায়। অন্য এক পরিসংখ্যানের মাধ্যমে জানা যায় যে, ১.৫ মিলিয়ন লাইসন অ্যালবাট্রস পাখি যারা উত্তর ক্যরোলাইনে বাস করে তাদের পাকস্থলিতে প্লাস্টিক পদার্থ পাওয়া যায় এবং তাদের এই প্লাস্টিক খাওয়ার কারণে মৃত্যুর ঘটে ৷

 

এবার নিশ্চয়ই আপনারাও আমার সাথে একমত হবেন যে, কি ভয়ংকর এক প্লাস্টিকময় পৃথিবীর সৃষ্টি করতে যাচ্ছি আমরা আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য! পরিবেশ, প্রাণী, সমুদ্র তথা সমগ্র বিশ্বমন্ডল রক্ষার্থে আমাদের এখনই সোচ্চার হতে হবে। যাতে আমরাই নিজেরাই নিজেদের বিপদ ডেকে না আনি।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭