নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: 09/09/2017
১৯৭১ সালে দীর্ঘ নয় মাস সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ৩০ লাখ শহীদের তাঁজা প্রাণ ও দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে প্রিয় মাতৃভূমির স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিল বাঙালি জাতি। তাদের এ আত্মত্যাগের বিনিময়ে জন্ম হয়েছে বাংলাদেশ নামে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকে স্মরণ রাখার জন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়েও নির্মিত হয়েছে কিছু ভাস্কর্য। বাংলা ইনসাইডারের আয়োজনে এমন কিছু ভাস্কর্যের কথাই তুলে ধরা হলো।
অপরাজেয় বাংলা
মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ঐতিহ্যের প্রতীক বলা হয় অপরাজেয় বাংলাকে। ১৯৭২-৭৩ সালে ডাকসুর উদ্যোগে অপরাজেয় বাংলার কাজ শুরু হয়। ১৯৭৯ সালের ১৬ই ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের সামনে এর উদ্বোধন করা হয় । এটি নির্মাণ করেন মুক্তিযোদ্ধা ও ভাস্কর সৈয়দ আব্দুল্লাহ খালিদ।
অপরাজেয় বাংলায় তিনজন মুক্তিযোদ্ধাকে চিত্রায়িত করা হয়েছে। তিনটি মূর্তির সর্বডানে প্রত্যয়ী এক যোদ্ধা নারীর মূর্তি। এর পাশে কাঁধে রাইফেল, ডান হাতে দৃঢ় প্রত্যয়ে রাইফেলের বেল্ট ধরা এক যুবক যোদ্ধা। সর্বস্তরের মানুষের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণের প্রতীকী চিহ্নই তুলে ধরা হয়েছে এই ভাস্কর্যের মাধ্যমে।
৬ ফুট বেদির ওপর নির্মিত এর উচ্চতা ১২ ফুট, প্রস্থ ৮ ফুট ও ব্যাস ৬ ফুট। এটিই সম্ভবত বাংলাদেশের সবচেয়ে পরিচিত ভাস্কর্য।
সংশপ্তক
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের সামনে মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য সংশপ্তক অবস্থিত। ১৯৯০ সালের ২৬ মার্চ এটি নির্মিত হয়। ভাস্কর হামিদুজ্জামান খান। জাবির তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক কাজী সালেহ আহম্মেদ ভাস্কর্যটির উদ্বোধন করেন।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য সংশপ্তক ভাস্কর্যটি নির্মিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের গৌরবজ্জল ইতিহাস, ঐতিহ্য ও চেতনা এতে দৃশ্যমান হয়। যুদ্ধে নিশ্চিত পরাজয় জেনেও লড়ে যান যে অকুতোভয় বীর সেই সংশপ্তক। সেই চেতনা নিয়েই এ ভাস্কর্যটির মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে যুদ্ধে শত্রুর আঘাতে এক হাত, এক পা হারিয়েও রাইফেল হাতে লড়ে যাচ্ছেন দেশমাতৃকার বীর সন্তান।
মূল ভূমি থেকে সংশপ্তকের উচ্চতা ১৫ ফুট। মূল ভাস্কর্যটি ব্রোঞ্জ ধাতুতে তৈরি। এছাড়া এটি নির্মাণে লাল সিরামিক ইট ব্যবহার করা হয়েছে। ক্যাম্পাসের আড্ডার কেন্দ্রস্থল হিসেবে শিক্ষার্থীদের কাছে `সংশপ্তক` চত্বর অত্যন্ত জনপ্রিয়।
সাবাশ বাংলাদেশ
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত ও অন্যতম বৃহৎ ভাস্কর্য হলো সাবাশ বাংলাদেশ। ১৯৯১ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের উদ্যোগে শিল্পী নিতুন কুন্ডু এই নির্মাণ কাজ শুরু করেন। নির্মাণ কাজ শেষ হলে এর ফলক উম্মোচন করেন শহীদ জননী জাহানারা ইমাম । স্বাধীনতার জ্বলন্ত প্রমাণকে ধরে রাখার জন্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ভাস্কর্যটি নির্মাণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের যে প্রতীকি ভাস্কর্যগুলো রয়েছে তার মধ্যে প্রকাশভঙ্গীর সরলতা, গতিময়তা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার তেজস্বী প্রকাশ এবং নন্দনতাত্বিক দিক থেকে সাবাশ বাংলাদেশ অনবদ্য। ভাস্কর্যটি দাঁড়িয়ে আছে ৪০ বর্গফুট জায়গা নিয়ে, যেখানে রয়েছে দু`জন বীর মুক্তিযোদ্ধার প্রতিকৃতি। একজন রাইফেল উঁচু করে দাঁড়িয়ে অন্যজন রাইফেল হাতে দৌড়ের ভঙ্গিতে রয়েছে। আধুনিক সভ্যতার শিল্পী নিতুন কুন্ডু তার মনতুলি দিয়ে এমনভাবে ভাস্কর্যটি চিত্রিত করেছেন দেখলে মনে হয় যেন ১৯৭১ সালেরই অর্জিত স্বাধীনতার প্রতিচ্ছবি।
বিজয় `৭১
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনের সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে বিজয় `৭১। পরম আকাঙ্ক্ষিত বিজয়ের এ ভাস্কর্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ অজস্র মানুষের প্রেরণার উৎস। ভাস্কর্য শিল্পী শ্যামল চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে ক্যাম্পাসে নির্মিত বিজয় `৭১ ভাস্কর্যটির নির্মাণ কাজ ২০০০ সালের জুন মাসে শেষ হয়। ভাস্কর্যটি নির্মাণে ব্যয় হয় প্রায় ২৪ লাখ টাকা।
রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বিজয়কে নতুন প্রজন্মের কাছে মূর্ত করার অভিপ্রায়ে ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপন করা হয়েছে বিজয় ৭১ ভাস্কর্য। ভাস্কর্যে একজন নারী, একজন কৃষক ও একজন ছাত্র মুক্তিযোদ্ধার নজরকাড়া ভঙ্গিমা মুক্তিযুদ্ধের সেই দিনগুলোতে নিয়ে যায় দর্শনার্থীদের। ভাস্কর্যটি দেখতে প্রতিদিন অনেক মানুষ ভিড় জমায়।
বাংলা ইনসাইডার/এসএম/জেডএ
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭