ইনসাইড আর্টিকেল

আমাদের অহংকার

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 09/09/2017


Thumbnail

রাজনীতিবিদের সন্তানতো রাজনীতিবিদই হবেন- এটাই যেন উপমহাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি। বাংলাদেশের এই ধারা বহমান। বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ছেলে তো এখন বিএনপির মূল নেতা। আওয়ামী লীগের নেতাদের ক্ষেত্রেও এ প্রবণতা বহমান। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের আসনে এখন এমপি তাঁর ছেলে। প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আবদুর রাজ্জাকের ছেলেও এমপি। এরকম অনেক উদাহরণ দেওয়া যায়। ভারতে রাজীব গান্ধীর ছেলে রাহুল গান্ধীর তীব্র ইমেজ সংকট থাকার পরও তিনি কংগ্রেসের মধ্যমনি। সব রাজনীতিবিদই ভবিষ্যত উত্তরাধিকারী হিসেবে তাঁর সন্তানকেই দেখেন। সন্তানও পিতা বা মায়ের ছায়ায় বড় হতে চান। রাজনীতির বাইরে গিয়ে আলো ছড়ানো রাজনীতিবিদদের সন্তানদের জন্য এক বিরল ব্যাপার। এই বিরল এবং ঈর্ষা জাগানো কৃতিত্বের অধিকারী সায়মা ওয়াজেদ। মায়ের কর্মগণ্ডির বাইরে গিয়ে, নিজস্ব পেশাগত দক্ষতায় তিনি আজ বিশ্বে এক আলোকিত মানুষ। সায়মা ওয়াজেদ পুতুল শেখ হাসিনার কন্যা। এই পরিচয়টুকু ছাড়া সবটুকু অর্জন তাঁর নিজের। তিনি পড়াশুনা করেছেন মনোবিজ্ঞান নিয়ে। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার ব্যারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক নিয়ে গবেষণা করেছেন অটিজমের ওপর। অটিজম ইস্যুতে আজ বিশ্বে তিনি অন্যতম আলোচিত এক নাম। ২০১৭ জুলাই মাসের তিনি অটিজম বিষয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার শুভেচ্ছা দূত মনোনীত হন। এর আগে এপ্রিলে তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কতৃক ‘চ্যাম্পিয়ন ফর অটিজম’ ঘোষিত হন। সায়মা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অটিজম বিষয়ে বিশেষজ্ঞ কমিটির অন্যতম সদস্য। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে অটিজম সমস্যা মোকাবেলায় বাঙালি মেয়ে সায়মা এখন আলোক বর্তিকা। দেশে দেশে নীরবতা ভাঙার গান গেয়ে অটিস্টিকদের মূল স্রোতে আনার যোদ্ধা তিনি। এই যুদ্ধের যুক্তিটা খুব পরিষ্কার এবং স্পষ্ট। সায়মা মনে করেন, ‘অটিস্টিকদের বাইরে রেখে কোনো জাতিই কাঙ্ক্ষিত উন্নতি করতে পারে না। বরং তাদের মূল স্রোতে আনাই হলো উন্নয়নের পূর্ব শর্ত।‘

‘অটিজম’ ইস্যুতে সায়মা বিশ্ব নাগরিক, বিশ্ব স্বপ্নদ্রষ্টা। কিন্তু আমরা সায়মাকে দেখি নারী জাগরণের এক মহামূল্যবান দৃষ্টান্ত হিসেবে। চার সন্তানের জননী তিনি। সংসার করেই যদি তিনি ‘ভালো গৃহিনী’ হতেন। কেউ আফসোস করতেন না। কিস্তু সায়মা প্রমাণ করেছেন , ক্যারিয়ারের সঙ্গে সংসার, সন্তান লালন সাংঘর্ষিক নয়। হাজারো কর্মজীবি নারীর জন্য তিনি প্রেরণার উৎস। আরেক দিকে সায়মা অনুকরণীয়। মানুষের কল্যাণের জন্য রাজনীতি অবশ্যই এক ‘অতি প্রয়োজনীয় ‘ উপাদান। কিন্তু রাজনীতির বাহিরেও অনেক কাজ আছে যেগুলো করে মানুষের কল্যাণ করা যায়। সমাজকে স্পন্দিত করা যায়। অটিজম এমন একটি বিষয়। যেটি বাংলাদেশের মত মতো একটা উন্নয়নকামী রাষ্ট্রে তো বটেই, উন্নত রাষ্ট্রেও অনুচ্চারিত, অনুল্লেখ একটি বিষয়। এনিয়ে কথাও কম হতো। অথচ এই প্রতিবন্ধকতা একটি জাতির উন্নয়নে বড় বাধা হয়েছিল। এ নিয়ে সায়মা কথা বলতে শুরু করলেন। নীরবতা ভাঙ্গলেন। মানুষকে জাগালেন। এক নীরব বিপ্লবের নেতা তিনি। সারাবিশ্বে সায়মা আজ অটিজমের কন্ঠস্বর।

সায়মাকে অনন্যতা দিতে হবে আরও একটি কারণে, স্বামীর ঘর আর বাবার ঘর, দুখানেই রাজনীতিময়। এর স্রোতে মিশে না গিয়ে নিজের স্বাতন্ত্রে উদ্ভাসিত হওয়া এক কষ্টকর অধ্যাবসায়। এর মাধ্যমে সায়মা প্রমাণ করলেন- নিজের আলোয় উদ্ভাসিত হওয়া অসম্ভব নয়। সায়মা নিজ পরিচয়ে পরিচিত, নিজের দক্ষতায় আলোচিত- এটা তো সব নারী, সব মানুষের জন্যই অহংকার।

 

বাংলা ইনসাইডার/জেডএ 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭