নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: 20/02/2021
ফেব্রুয়ারি ভাষার মাস। ’৫২-এর ২১ ফেব্রুয়ারি মায়ের ভাষায় কথা বলার জন্য জীবন দিয়েছিলেন সালাম, রফিক, জব্বার। আমাদের মুখের ভাষা রক্ত দিয়ে কেনা। তাই এ দেশের মানুষ কথা বলে প্রাণভরে। চায়ের স্টলে, অফিসে, বাজারে, ট্রেনে, বাসে, লঞ্চে। এ দেশের মানুষের অনেক বিরল গুণের একটি- অনর্গল কথা বলা। শুধু কথা বলার জন্যই আমরা অপরিচিত মানুষের সঙ্গে সখ্য গড়ি। বেশি কথা বলার জন্য কোনো পরিমাপক থাকলে বাঙালি জাতি যে প্রথম হতো এ নিয়ে আমার কোনো সংশয় নেই। মানুষ যখন তার কথা বলার নিয়ন্ত্রিত মাত্রা হারায় তখন আমরা তাকে বাচাল বলি। সাধারণ মানুষের বাচাল হওয়া আর গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বাচাল হওয়ার মধ্যে ব্যাপক ফারাক। গুরুত্বপূর্ণ বলতে আমরা বুঝি পাবলিক ফিগার, যেমন জনপ্রতিনিধি, সেলিব্রেটি বা সমাজে গণমান্য ব্যক্তিবর্গ। বাংলাদেশে এখন বিশিষ্টজনদের মধ্যে বাচাল রোগ ব্যাপকভাবে সংক্রমিত হচ্ছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন ‘বাক্যদূষণ’ প্রায় মহামারীর পর্যায়ে পৌঁছেছে। মনোবিজ্ঞান বলে, বাচালতা মানসিক ব্যাধি। দুই কারণে এ ব্যাধিতে কেউ আক্রান্ত হতে পারেন। প্রথমত আনন্দের আতিশয্যে। এত আনন্দিত যে তার মানসিক অবস্থা ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। তিনি ঝরনাধারার মতো কথা বলতে থাকেন।
দ্বিতীয়ত হতাশা এবং দুঃখ থেকে। প্রচন্ড হতাশা থেকেও মানুষ বাচাল হতে পারেন। এটা বন্যার মতো। ভিতরের সবকিছু শব্দস্রোতে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। যে কারণেই হোক বাংলাদেশে রাজনৈতিক বিশিষ্টজনের মধ্যে বাচাল হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। তারা কথা বলছেন লাগামহীন, দায়িত্বহীন। তাদের কথায় সমাজ, রাষ্ট্রে কী পাশর্^প্রতিক্রিয়া হচ্ছে তা চিন্তা করছেন না। আওয়ামী লীগের কথাই যদি ধরি আগে আওয়ামী লীগে কথা বলতেন বড় নেতারা, জাতীয় নেতারা। তাদের বক্তব্য গণমাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ স্থান পেত। ছোট নেতা, তৃণমূলের নেতারা তাদের কথা থেকে শিখতেন, নির্দেশনা পেতেন। সে অনুযায়ী তারা স্থানীয় পর্যায়ে বক্তব্য দিতেন। এখন দিন বদলে গেছে। দলে জাতীয়ভাবে পরিচিত, গুরুত্বপূর্ণ নেতারা মৌনব্রত পালন করছেন। এ সুযোগে কথার মাঠ দখল করে নিয়েছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতারা। তৃণমূলের নেতারাও ভারি চালাক। তারা বুঝে গেছেন তাদের গুরুগম্ভীর কথার কোনো বাজার নেই। এ জন্য তারা এমন সব কথাবার্তা নির্বাচন করলেন যেগুলো মানুষ খাবে। ফরিদপুর থেকে নোয়াখালী। ফেনী থেকে ঠাকুরগাঁও। সর্বত্র এখন আওয়ামী লীগের পাতিনেতাদের কথার ফুলঝুরি। গণমাধ্যমও তাদের কৌতুকময়, বিতর্কিত বক্তব্যগুলো ফলাও করে প্রকাশ করছে। আধা, সিকি নেতারা মনে করলেন এই তো সুযোগ। এভাবে শব্দবোমা ফাটিয়ে তো রাতারাতি বিখ্যাত হওয়া যায়। নেতা হতে আগে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হতো, বইপত্র পড়তে হতো, জনগণের সামনে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হতো। কিন্তু এখন বিখ্যাত হওয়ার সহজ তরিকা আবিষ্কৃত হয়েছে। কিছু বিতর্কিত উল্টাপাল্টা কথা বললেই হলো। ব্যস। ঢাকার অদূরে এক জেলার এক তরুণ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেন। এরপর তিনি গত সাত বছর বিরামহীনভাবে আওয়ামী লীগের এক সিনিয়র নেতাকে গালমন্দ করলেন। এসব কথাবার্তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেল। ‘বিদ্রোহী’ হয়েও তিনি শাস্তি পাননি। সিনিয়র নেতাকে যা খুশি তাই বলে বরং পুরস্কৃত হলেন। এ চর্চা লুফে নিলেন নোয়াখালীর এক স্থানীয় নেতা। স্থানীয় নির্বাচন সামনে রেখে তিনি ‘ফরিদপুর কৌশল’ চালু করলেন। তার এ কৌশল কাজে দিল। অনাদরে, অবহেলায়, আলোচনার বাইরে থাকা এই নেতার ছবি এবং কথা গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার শুরু হলো। তার নির্বাচনী প্রচারণা টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার হতে লাগল। সারা জীবনের রাজনীতি যে পরিচিতি দিতে পারেনি, কিছু লাগামহীন কথাবার্তা তাকে সেই পরিচিতি এনে দিল। তাই আনন্দে আত্মহারা হয়ে তিনি বাচাল হয়ে গেলেন। ‘আমারও পরানও যাহা চায়’ বলে তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে যা খুশি বলা শুরু করলেন। নোয়াখালী থেকে লক্ষ্মীপুরের দূরত্ব বেশি নয়। নোয়াখালীতে যদি শুধু বেফাঁস কথা বলে একজন জাতীয় রাজনীতিতে আলোচিত হতে পারেন, তাহলে লক্ষ্মীপুরের নেতা পিছিয়ে পড়বেন কেন! লক্ষ্মীপুরের এক জেলা নেতা ইভিএম-তত্ত্ব আবিষ্কার করলেন।
নির্বাচনী জনসভায় তিনি বললেন, ‘ইভিএম এমন এক মেশিন যেখানে নৌকার বাইরে ভোট দিলেই ধরি ফালা যায়।’ আর যায় কই, তার বক্তব্য গণমাধ্যমে এলো। রথী-মহারথীরা টকশোয় তাকে কচলালেন। কথা যেন এক আশ্চর্য আলাদিনের চেরাগ। সারা জীবন যা পাননি তাই পেয়ে গেলেন। ফরিদপুর, নোয়াখালীর শিক্ষা যেন সারা দেশে আওয়ামী লীগের তৃণমূলে উদ্দীপনা ছড়িয়ে দিল। যে যেমন ইচ্ছা বক্তব্য দেওয়া শুরু করলেন। এতক্ষণ বিষয়টি ছিল পুরুষতান্ত্রিক। রাজশাহী, বগুড়া, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তৃণমূল থেকে যে বিস্ফোরক মন্তব্যগুলো আসছিল তা সবই ছিল পুরুষদের। কিন্তু যে দেশের প্রধানমন্ত্রী নারী, স্পিকার নারী, বিরোধীদলীয় নেতা নারী সে দেশে বাচাল শুধু পুরুষ হবে তা কী করে হয়? তাই দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিলেন মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী। তিনি ঠাকুরগাঁওয়ে এক নির্বাচনী সভায় বললেন, ‘নৌকা ছাড়া যারা অন্য কোথাও ভোট দিতে চান তারা এলাকা ছেড়ে চলে যান।’ পত্রিকার পাতায় তার এ মন্তব্য পড়ে আমার ১৯৯৪ সালে প্রথম ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনী প্রচারণার কথা মনে পড়ল। ওই নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন মির্জা আব্বাস। নির্বাচনী এক জনসভায় মির্জা আব্বাস ঘোষণা করলেন, ‘ভোটের পর হানিফকে (আওয়ামী লীগ প্রার্থী) ঘাড় ধাক্কা দিয়ে ঢাকা শহর থেকে বের করে দেওয়া হবে।’ মোহাম্মদ হানিফের সমাপনী নির্বাচনী জনসভা ছিল মানিক মিয়া এভিনিউতে। সেখানে তিনি এক আবেগমথিত ভাষণে ঢাকাবাসীর কাছে এর বিচার চাইলেন। ওই নির্বাচনের ফলাফল কী হয়েছিল তা সবাই জানে। সেটা ছিল ১৯৯৪, এখন ২০২১। ২৭ বছরে আমাদের অনেক কিছুই বদলে গেছে, চেতনাও ভোঁতা হয়ে গেছে। মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রীর বক্তব্যে আমরা কিছুটা কাতুকুতু পেলাম মাত্র। এভাবেই কেন্দ্রীয় নেতা, জাতীয় নেতাদের হটিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এলেন তৃণমূল নেতারা। প্রতিদিন পত্রিকার পাতায় দেখি দেশের কোথাও না কোথাও তৃণমূলের কোনো নেতা শব্দবোমা ফাটিয়েছেন। আওয়ামী লীগে এখন ‘আমরা সবাই রাজা’ গোছের একটি ব্যবস্থা চলছে। তৃণমূলের এ বিপুল উত্থান মন্ত্রীদের কিছুটা তো উত্তেজিত করবেই। এমনিতেই তাদের কাজকর্ম সব আমলারা খেয়ে ফেলেছেন। এর মধ্যে তাদের টুকটাক ফিতা কাটা অনুষ্ঠানের খবরগুলো তৃণমূলের বাক্যবাণে পত্রিকার পাতা থেকে ছিটকে পড়ছে। কাজেই তারাও বাচাল হলেন। মনে রাখতে হবে, শুধু বাচাল হলেই হবে না। কথাবার্তা হতে হবে উত্তেজক, বিতর্কিত। ব্যস, শুরু হলো মন্ত্রীদের কথার মেলা। কেউ আলজাজিরার বিরুদ্ধে মামলার ঘোষণা দিলেন। কেউ জিয়া গবেষক হয়ে উঠলেন। আবার কোনো মন্ত্রী তার সাফল্যের স্বীকৃতি কেউ দিচ্ছে না বলে প্রতিদিন কান্নাকাটি শুরু করলেন। এসব দেখে তো বিরোধী দলের নেতারা চুপচাপ বসে থাকতে পারেন না।
হাঁচি, সর্দি, কান্না, হাসি ইত্যাদি দ্রুত সংক্রমিত হয়। বেসামাল, অসংলগ্ন কথাবার্তাও সম্ভবত সংক্রামক। এক নেতা ২০০ আসনে জয়ের ঘোষণা দিলেন (নির্বাচন কবে?) আরেক নেতা, অফিসকক্ষ থেকে বেরিয়ে রাজপথে প্রলাপ বকতে বকতে অজ্ঞান হয়ে গেলেন। কথাদূষণে চলছে এখন এক ভয়ংকর পরিস্থিতি। এগুলো মানুষ খাচ্ছেও বেশ। অনিশ্চয়তা, দ্রব্যমূল্যে নাভিশ্বাস ওঠা মানুষের এখন প্রধান বিনোদনে পরিণত হয়েছে, বাচাল মানুষের কথাবার্তা। দ্রুতই তারা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। কিন্তু কথা হলো, একটি রাজনৈতিক দল চলে তার গঠনতন্ত্র অনুযায়ী। বাচাল রোগে আক্রান্তের বেশির ভাগই আওয়ামী লীগের। আওয়ামী লীগের যারা কথাবার্তা বলে এখন আলোচনায়, তাদের বেশির ভাগ কথাবার্তাই গঠনতন্ত্রবিরোধী। যেমন আওয়ামী লীগ বলে, ইভিএমে ভোট কারচুপি এবং জালভোটের কোনো সুযোগ নেই। আর বাচাল আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘ইভিএমে অন্য মার্কায় ভোট দিলে ধরি ফালা যায়’। আওয়ামী লীগ আনুষ্ঠানিকভাবে বলে, ‘আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব’। আর আওয়ামী নেত্রী নৌকায় ভোট না দিলে এলাকা ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। এ রকম উদাহরণ দিলে সে তালিকা অনেক দীর্ঘ হবে। তাই সে তালিকায় আর গেলাম না। এখন যারা দলের নীতি, আদর্শ এবং অবস্থানের বাইরে গিয়ে এসব অসংলগ্ন কথাবার্তা বলছেন তাদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ কি কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে? না। যেমন আওয়ামী লীগ বারবার ঘোষণা দিয়েও দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি। এ প্রসঙ্গে একটি কথা বলে নেওয়া ভালো। এখন সারা দেশে পৌরসভা নির্বাচন হচ্ছে। এখন পর্যন্ত চার ধাপে নির্বাচন হয়েছে। এ নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে না কারচুপিপূর্ণ, সে আলাদা বিতর্ক। কিন্তু এ নির্বাচনগুলোয় আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগ লড়াই ছিল জমজমাট। আওয়ামী লীগ নির্বাচনে একচেটিয়া বিজয়ী হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে আছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা। অনেক ব্যবধানে বিএনপির অবস্থান তৃতীয়। খেলাধুলায় অনেক সময় একই দল থেকে দুটো দল করা হয়। যেমন একসময় বলা হতো ব্রাজিল ফুটবলে অবলীলায় দুটি জাতীয় দল গড়া যায়। অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটে এখন তো প্রায় দুটো দল। সে রকম আওয়ামী লীগ থেকেও অবলীলায় এখন দুটি আওয়ামী লীগ করা যায়।
আমার এ ধারণা আরও প্রবল হলো আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রীর একটি বক্তব্য থেকে। জাতীয় সংসদে এক অনুষ্ঠানে তিনি শক্তিশালী বিরোধী দলের ওপর গুরুত্ব দিলেন। গণতন্ত্রের জন্য কার্যকর বিরোধী দলের প্রয়োজনীয়তার কথাও ওই অনুষ্ঠানে উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যের পর চারদিকে ফিরে তাকালাম। সত্যিই তো। সর্বত্রই তো আওয়ামী লীগের জয়জয়কার, শুধু বিরোধী দল ছাড়া। প্রশাসনে আওয়ামী লীগ, পুলিশে আওয়ামী লীগ, সুশীলসমাজে আওয়ামী লীগ, শিক্ষকতায় আওয়ামী লীগ, গণমাধ্যমে আওয়ামী লীগ। সর্বত্র টইটুম্বর আওয়ামী লীগ। যেন বর্ষায় ঝিলে কিলবিল করা মাছ। এর মধ্যে বিরোধী দল পুষ্টিহীনতায় ভোগা কঙ্কালসার প্রাণ। তাই আওয়ামী লীগকেই দায়িত্ব নিতে হবে একটি শক্তিশালী বিরোধী দল গঠনে। তবে খেলার মতো আরেকটা আওয়ামী লীগ করে তো তাকে আর বিরোধী দলে বসানো যায় না। এক নামে একটি রাজনৈতিক দল থাকতে পারে। তার একটি প্রতীক থাকবে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নামে তাই আরেকটি রাজনৈতিক দল থাকতে পারে না। তা ছাড়া আওয়ামী লীগের প্রতীক ‘নৌকা’। এ প্রতীক তো দুটি দলকে একসঙ্গে দেওয়া যায় না। তাই আমার বিনীত প্রস্তাব, আওয়ামী লীগে থেকে যারা আবোল-তাবোল বকছেন, তাদের দিয়ে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করা যেতে পারে। যেহেতু বাচাল হওয়ার কারণেই তারা আলোচিত তাই এ দলের নাম রাখা যেতে পারে ‘বাচাল লীগ’। আওয়ামী লীগ চাইলেই এ দল গঠনে সব ধরনের কারিগরি সহায়তা দিতে পারে। যেমন সারা দেশে আওয়ামী লীগের পরিচয় দিয়ে যেসব ব্যক্তি বেফাঁস কথা বলে আলোচিত তাদের একটি তালিকা তৈরি করবে। এ তালিকাভুক্ত সবাইকে ‘বাচাল লীগে’ আত্তীকরণ করা হবে। শুধু প্রান্তিক পর্যায়ে নয়, হঠাৎ হওয়া কয়েকজন মন্ত্রীকে এ দলের নেতৃত্বে জায়গা দেওয়া যেতে পারে। আমলাদের মধ্যে, অনেকের বাচাল রোগের উপসর্গ ধরা পড়েছে। এরা কেউ কথায় কথায় রাজনৈতিক নেতাদের মতো বক্তৃতা দেন। নানা বাস্তবতায় অবসরের পর এরা আওয়ামী লীগে যোগ দিতে পারেন না, কিংবা আওয়ামী লীগে জায়গা পান না। এদের জন্য ‘বাচাল লীগ’ হতে পারে চমৎকার ব্যবস্থা।
আমাদের সুশীলসমাজের কেউ কেউ নিজের মানসম্মান-বিবেক সবকিছু বিসর্জন দিয়ে অন্ধ আনুগত্য দেখাতে চান না। এদের জন্য বাচাল লীগ খুবই ভালো প্ল্যাটফরম হতে পারে। স্থানীয় নির্বাচনে যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে জিতেছেন তাদের অবলীলায় বাচাল লীগে স্থানান্তর করা যেতে পারে। ঠিক যেভাবে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের খবর প্রতিদিনই গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। দুষ্ট লোকেরা বলে, প্রায় প্রতিটি জেলায় নাকি এখন দুটো আওয়ামী লীগ। কাজেই একটি অংশকে অবলীলায় বাচাল লীগে নেওয়া যেতে পারে। নির্বাচনের মনোনয়ন দিতেও প্রস্তাবিত বাচাল লীগের তেমন কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কারণ যে কোনো নির্বাচন এলেই দেখা যায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীর ছড়াছড়ি। মনোনয়নপত্র কেনার হিড়িক। কাজেই যারা প্রার্থী হতে না পেরে এখন বিদ্রোহী প্রার্থী হচ্ছেন, তারা অবলীলায় বাচাল লীগের টিকিট পেতে পারেন। এভাবে দেশে একটি শক্তিশালী বিরোধী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে বাচাল লীগ। কেউ প্রশ্ন করতেই পারেন, বাচাল লীগের প্রতীক কী হবে? বাচাল লীগের প্রতীক হিসেবে মাইক্রোফোন অথবা ‘গলা’ যে কোনো একটি বেছে নেওয়া যেতে পারে। বাচাল লীগের প্রধান কর্মসূচি হলো ‘কথা বলা’। বাচাল লীগের নেতা-কর্মীরা অবিরত কথা বলবেন। সব বিষয়ে কথা বলবেন। মনে যা চায় তা-ই বলবেন। ‘কথাই শক্তি, কথাই বল’ এটাই হবে বাচাল লীগের স্রোগান।
তবে এত চমৎকার পরিকল্পনায় সমস্যা একটাই। রক্তে কেনা আমাদের মুখের ভাষা। এ ভাষা বাচালদের কণ্ঠে গিয়ে যেভাবে অপমানিত হচ্ছে, তাতে একদিন না আবার ২১ ফেব্রুয়ারির মতো মানুষ রাজপথে নামে। এবার ভাষার অধিকার রক্ষার জন্য নয়, ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য। কারণ অনেক দামে কেনা আমাদের মাতৃভাষা কিছু বাচালের জন্য মানুষের বিরক্তির কারণ হবে, তা তো হতে পারে না।
লেখক: নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত। (বাংলাদেশ প্রতিদিনের সৌজন্যে)
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭